হয়তো সামান্য ফোড়া, কিন্তু গুপ্তস্থানের জন্য দক্ষ হাতেই অপারেশন জরুরি। মহিলাদের বার্থোলিন সিস্ট নিয়ে সাবধান করলেন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পল্লব গঙ্গোপাধ্যায়। লিখছেন শ্রীজা ঘোষ
বার্থোলিন অ্যাবসেস বা বার্থোলিন গ্রন্থিতে সংক্রমণ সম্পর্কিত চিকিৎসার ব্যাপারে জানার আগে বার্থোলিন গ্ল্যান্ড কী, সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। বার্থোলিন গ্রন্থি যোনির প্রবেশদ্বারের নিচে বাঁ ও ডান দিকে অবস্থিত থাকে। এই গ্রন্থিই যোনির পিচ্ছিলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সাধারণত যৌন মিলনের সময় তরল ক্ষরণ করাই এই বার্থোলিন গ্রন্থির কাজ।
সংক্রমণের কারণ বাধা
অনেক সময় বিভিন্ন কারণে গ্রন্থির মুখটি বন্ধ হয়ে গেলে তরল ক্ষরণের প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকভাবেই বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে গ্রন্থিটি ফুলতে থাকে যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ‘বার্থোলিন সিস্ট’। এই বাধা সৃষ্টি হওয়ার ফলে গ্রন্থির জমে থাকা তরল পদার্থটি ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমিত হয়। একে বলা হয় বার্থোলিন অ্যাবসেস।
উপসর্গ
জ্বর, যোনির প্রবেশদ্বারে ব্যথা, যৌনমিলনের সময় কষ্ট, বসতে বা হাঁটাচলা করতে গেলেও নিদারুণ ব্যথা অনুভব। প্রাথমিকভাবে বুঝবেন কীভাবে? নিম্নাঙ্গের বাঁদিক বা ডানদিকে যন্ত্রণা শুরু হয় এবং ফোলা ভাব অনুভূত হয়। তবে প্রথমদিকে অবহেলা করলে যন্ত্রণা বাড়তে পারে। অনেক সময় এমনিতে ফোড়ার মতো ফেটেও যেতে পারে। তখন সাময়িকভাবে যন্ত্রণা কমে গেলেও রোগটি ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
চিকিৎসা
যে কোনও ফোড়ার ভিতর থেকে পুঁজ বের করে দেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ইনসিশন অ্যান্ড ড্রেনেজ’। বার্থোলিন অ্যাবসেসের ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ‘মারসুপিয়ালাইজেশন’ (marsupialigation) যা কিনা ইনসিশন অ্যান্ড ড্রেনেজের এক বিশেষ পদ্ধতি। এর কারণ যে জায়গায় এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা খুবই স্পর্শকাতর। তাই সাধারণ ভাবে কাটাছেঁড়া করে পুঁজ বের না করে ‘মারসুপিয়ালাইজেশন’ পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যোনিপথের ভিতর দিয়ে হয় অস্ত্রোপচার। সুস্থ হয়ে উঠতে রোগীর সময় লাগে এক সপ্তাহ। তবে অনেক সময়ই ‘মারসুপিয়ালাইজেশনে’ -র পর রোগটি ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। তাই চিকিৎসার পর হাইজিন বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। নিয়ম করে জায়গাটিকে গরম জলে পরিষ্কার রাখার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণত কম বয়সি মহিলাদেরই চিকিৎসা করা হয়। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে গ্রন্থিটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে যদি অস্ত্রোপচার এড়াতে চান তাহলে প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে এই রোগ বাড়তে পারে না। এর পাশাপাশি আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা উচিত।
কোন বয়স?
সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর থেকে রোগটি শুরু হয়। তবে প্রধানত মহিলারা যে বয়স থেকে যৌন মিলনে লিপ্ত হন, সেই বয়স থেকেই এই রোগের সম্ভাবনা থাকে। কারণ বার্থোলিন গ্রন্থির সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় ওই সময় থেকেই।
ক্যানসারের সম্ভাবনা
বার্থোলিন গ্ল্যান্ডে ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক সময়ই থাকে। ভিতরে যদি কোনও ‘গ্রোথ’ থেকে থাকে তা হলে তার উপসর্গগুলি বার্থোলিন অ্যাবসেসের সঙ্গে মিলে যায়। সেক্ষেত্রেও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গ্রন্থি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.