বিজ্ঞাপন দেখে দোকানে গিয়েই যেকোন ক্রিমটা কিনে ফেলার অভ্যেস! তাহলে এখনই সেই অভ্যেস পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। কারণ এসব ওষুধে মিশ্রিত স্টেরয়েড ত্বকের কালচে ছোপ, একজিমা, ব্রণর সমস্যায় আরও ক্ষতি করে৷ এবিষয়ে সতর্ক করছেন কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের স্কিন স্পেশালিস্ট ডা. রথীন্দ্রনাথ দত্ত৷ মুখোমুখি সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন নিজের স্বচক্ষে দেখা তিনটি ঘটনার কথাও।
ঘটনা এক: এই গরমে সারা মুখ ঢেকে এক ভদ্রমহিলাকে চেম্বারে ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হলাম৷ মুখের ঢাকা সরিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে যখন গলা আর হাতের ভাঁজ দেখালেন চমকে গেলাম৷ একজিমায় ভরে গিয়েছে৷ জিজ্ঞাসা করে জানলাম, প্রায় বছরখানেক ধরে ত্বকের এই সমস্যায় ভুগছেন৷ প্রথমে নিজেরাই দোকান থেকে ওষুধ কিনে ব্যবহার করেছিলেন৷ প্রথমে ভালই কাজ হচ্ছিল৷ কিছুদিন পর রোগটা আবার ফিরে আসে৷ তারপর স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে আমার কাছে আসেন৷
ঘটনা দুই: টিনএজার মেয়েটার মুখ ব্রণয় ভরা৷ কয়েকটা তো ফোঁড়ার মতো বড় আর পুঁজে ভরা৷ এই অবস্থা হল কীভাবে জানতে চাওয়ায় ওর মা বললেন, অল্পসল্প ব্রণ ছিল, নানা অ্যান্টিবায়োটিক লোশন, ব্রণনাশক কসমেটিক্স লাগিয়ে আর নখ দিয়ে খুঁটে ব্যাপারটা বেড়ে গিয়েছে৷
ঘটনা তিন: বয়স ২৬৷ ছেলেটার মাথা থেকে কপাল পর্যন্ত শুকনো ফাটা ফাটা চামড়া৷ খুসকির মতো সাদা খোসায় ভরে আছে মাথা ও কপাল৷ দেখেই বুঝলাম ক্রনিক সোরিয়াসিস, দীর্ঘদিনের সমস্যা৷ এতদিন কি চিকিৎসা হয়নি! কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ ছেলেটি জানাল যে সে নিয়মিত খুসকিনাশক ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করে৷ এমনকী আয়ুর্বেদিক ওষুধও খায়৷ তাও সারছে না৷
উপরোক্ত এই তিনটি ঘটনা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ আসলে ত্বক বা স্কিনের সমস্যা হলে অনেকেই প্রথমদিকে নিজে দোকান থেকে ওষুধ কিনে ব্যবহার করেন৷ বিভিন্ন মলম, লোশন ওষুধ এমনকী স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহার করতেও দ্বিধা করেন না৷ তার উপর হাতুড়ে আর নকল ডাক্তারদের ম্যাল প্র্যাকটিস তো আছেই৷ সত্যি কথা বলতে কী, স্কিনের সমস্যা যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণহানিকর নয়, তাই এই সমস্যা নিয়ে সেলফ মেডিকেশন আর কোয়াক ডাক্তারদের রমরমা বেশ জাঁকিয়ে চলে৷ তবে এখন মানুষের সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ট্রেন্ড কিছুটা হলেও কমেছে৷
ত্বক হল আমাদের শরীরের সব থেকে বড় অঙ্গ৷ বাইরের ঝড়ঝাপটা থেকে প্রাথমিকভাবে শরীরকে রক্ষা করে৷ তাই দুনিয়া যখন হাতের মুঠোয়, তখন অহেতুক ভুল ধারণা পুষে রেখে সমস্যা বাড়ানোর কোনও যুক্তিই নেই৷
একজিমা ফেলে রাখবেন না: ত্বকের এই অসুখটি নিয়ে অনেকের মনেই নানা ভুল ধারণা আছে৷ সাধারণত গলা, কনুই, হাতের ভাঁজ, হাঁটুর খাঁজ বা পায়ের পাতায় কিছু অংশে লাল হয়ে ফুলে ওঠে ও ভয়ানক চুলকায়৷ সঠিক চিকিৎসা না করালে ত্বক পুরু ও খসখসে হয়ে যায়৷ আর রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তো থাকে৷ রোগ ধরা পড়লেও অনেকে সারাতে চান না৷ কেন না একজিমা সারলে নাকি হাঁপানি হয়৷ বলাই বাহুল্য এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা৷ তবে ত্বকের এই ক্রনিক অসুখের চিকিৎসা কিছুটা সময়সাপেক্ষ৷ আরও একটা কথা জেনে রাখুন একজিমা আদৌ ছোঁয়াচে নয়৷ তাই রোগকে দূরে রাখুন, রোগীকে নয়৷
ব্রণর বিড়ম্বনা থেকে বাঁচুন: বয়ঃসন্ধিতে সূত্রপাত হলেও ব্রণ মাঝবয়সেও ভোগাতে পারে৷ টিনএজার ছেলেমেয়েরা ব্রণর সমস্যা নিয়ে ভয়ানক বিব্রত হয়ে পড়ে৷ এমনকী ব্রণর কারণে অনেকে ডিপ্রেশনেও ভোগে৷ অথচ শুরুতে এটা ওটা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চললে সমস্যায় পড়তে হয় না৷ কিন্তু যাদের বেশি ব্রণ হয়, তাদের অবশ্যই ডাক্তার দেখানো দরকার৷ নানা ধরনের ব্রণ হতে পারে৷ আবার যেসব মেয়ে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের শিকার তাদেরও ব্রণ নিয়ে ভুগতে হয়৷ এক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি৷
খুসকিকে আটকাবেন কীভাবে: একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মাথায় গড়ে লাখ দেড়েক চুল থাকে৷ কারও কিছু বেশি, কারও কম৷ যাদের মাথাজোড়া টাক তাদের কথা আলাদা৷ চুলের আয়ু গড়ে আটবছর৷ তাই আট বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত কিছু চুল ঝরতেই থাকে৷ এটা স্বাভাবিক৷ আর একই সঙ্গে নতুন চুল গজাতে থাকে৷ চুল ঝরার একটা বড় কারণ খুসকি৷ বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই সামান্য চিকিৎসাতেই খুসকি সেরে যায়৷ কিন্তু ভুলভাল শ্যাম্পু আর লোশন সমস্যা জটিল করে তুলতে পারে৷ অনেক সময় মাথার ত্বকে সোরিয়াসিস নামক ক্রনিক অসুখেও খুসকির মতো উপসর্গ দেখা দেয়৷ নির্দিষ্ট কারণ জেনে সঠিক চিকিৎসা করিয়ে নেওয়াই ভাল৷ ত্বক ও চুল ভাল রাখতে মন ভাল রাখা দরকার৷ আর প্রয়োজন সঠিক ডায়েট৷ ত্বকের যত্ন নিন, আর ভাল থাকুন৷
যোগাযোগ: ৯৪৩৩০০৬২২৫
আরও জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.