সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: রাজ্যজুড়ে তাপমাত্রার পারদ নামছে। চারিদিকে উৎসবের আমেজ। এমন মরশুমে কি কাজে মন বসে? প্রিয়জন-পরিজন-বন্ধুদের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েতে ইচ্ছে হয় দূরে বহুদূরে। কিন্তু ছুটি কই! তাই শীতের রোদ গায়ে মেখে চড়ুইভাতিই ভরসা। চড়ুইভাতির পরিকল্পনা করলেই প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় আসে সেটা হল, কোথায় যাব?
চড়ুইভাতির জন্য শান্ত পরিবেশ পছন্দ করেন না এমন মানুষ মেলা ভার। আর সবুজ ঘেরা সেই পিকনিক স্পটের গা ঘেঁষে যদি নদী বয়ে যায়, তাহলে তো কথাই নেই। ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা সময় চুরি করে ঘুরে আসাই যায় কলকাতার একেবারে কাছে ডায়মন্ডহারবার। যেখানে একদিকে রয়েছে ঐতিহাসিক পুরনো কেল্লার মাঠ। আর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হুগলি নদী। সেখানেই ছোট্ট একটা দুপুরে চড়ুইভাতির মেজাজে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো। পর্যটক টানতেই পুরসভার উদ্যোগে নতুন করে সেজে উঠেছে পুরনো কেল্লার পিকনিক গ্রাউন্ড।
ঐতিহাসিক শহর এই ডায়মন্ডহারবার। একসময়ে ছিল বনজঙ্গলে ঘেরা।এখানেই ঘাঁটি গেড়েছিল পর্তুগিজ জলদস্যুর দল। নদীপথে বাণিজ্য করতে যাওয়া সওদাগরদের কাছে লুঠতরাজ চালানোই ছিল তাদের কাজ। পরবর্তীকালে ওই এলাকা নজরে পড়ে ব্রিটিশদের। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদর দফতর কলকাতাকে বহিঃশত্রুর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্রিটিশ শাসকরাই ডায়মন্ডহারবারে গড়ে তুলেছিল এক কেল্লা। যেখান থেকে নজরদারি চলত প্রতিনিয়ত। সেই কেল্লার ধ্বংসাবশেষ কিছু রয়ে গেলেও বেশিরভাগ অংশই এখন নদীগর্ভে বিলীন। সেই কেল্লার মাঠকেই ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে ডায়মন্ডহারবার পুরসভা। নানা আঙ্গিকে সেজে উঠছে পুরনো কেল্লার মাঠ। ইতিমধ্যেই খরচ হয়েছে প্রায় এগারো লক্ষ টাকা।
পিকনিক গ্রাউন্ডের দায়িত্বে থাকা ডায়মন্ডহারবার পুরসভার বাস্তুকার সুব্রত মল্লিক জানিয়েছেন, পর্যটক টানতে পিকনিক গ্রাউন্ড সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। রয়েছে বাংলো। বাংলোয় তিনটি ঘর। ভিতরে ১৫০-২০০ জনের বসে খাওয়ার জায়গা, অ্যাটাচড বাথরুম। তিনহাজার টাকা ভাড়ায় সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাটানো যাবে বাংলোয়। রাত্রিবাসের কোনও সুযোগ নেই। বাংলোর পিছনেই রয়েছে পাঁচিল ঘেরা হাজার বর্গফুটের দু’টি ভিআইপি তাঁবু। ভাড়া দু’হাজার টাকা। এছাড়াও সাধারণের জন্য রয়েছে মোট দশটি তাঁবু। কুড়ি ফুট বাই কুড়ি ফুটের প্রতি তাঁবুর ভাড়া একহাজার টাকা। যাঁরা কোনও তাঁবু ভাড়া নেবেন না, তাঁরা ফাঁকা মাঠে বসেই মাততে পারেন পিকনিকে। সব মিলিয়ে একসঙ্গে হাজার পাঁচেক মানুষ কেল্লার মাঠে বসে পিকনিক করতে পারবেন। পর্যটকদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পানীয় জল ও শৌচাগারের সুব্যবস্থা। তাঁবুতে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থাও রয়েছে। মাঠ জুড়ে রাখা হয়েছে রংবেরঙের ছাতা এবং মাঙ্কি ডাস্টবিন। রয়েছে দোলনা, স্লিপারও।
মহকুমা শাসক তথা পুরসভার প্রশাসক সুকান্ত সাহা জানান, শীতের মরশুমে কলকাতা ও শহরতলির মানুষ যাতে একঘেয়েমি কাটাতে পরিবার পরিজনের সঙ্গে কিছুটা সময় আনন্দে ও স্ফূর্তিতে কাটাতে পারেন তার জন্য কলকাতার খুব কাছেই এই আয়োজন। পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুরোনো কেল্লার পিকনিক গ্রাউন্ডে কড়া পুলিশি নজরদারিও চালানো হচ্ছে। পরবর্তীকালে ওই এলাকাকে আরও নতুন সাজে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.