রাজবাড়ির অন্দরমহল থেকে মোগলাই খানা৷ গ্রামের মাটি লেপা বাড়ির রান্নাঘর থেকে ঝাঁ-চকচকে পাঁচতারা হোটেলের সুস্বাদু খাবার৷ দেশ-বিদেশের খাবার তৈরির নানা উপকরণ৷ নতুন নতুন রান্নার রসায়ন, সঙ্গে পাতে পড়ার আগে সেসব রান্নার চমকপ্রদ গল্প৷ শান্তা চক্রবর্তী
হেকিম হুমান আজ ভোর ভোর উঠে আস্তাবলে গিয়ে দেখলেন ছ’শো ঘোড়ার মালিশ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ ১৫৯৯ সালের এপ্রিল মাস৷ ভোরের ফিনফিনে বাতাসে লাহোর একেবারে তরতাজা৷
ইসলামিক সনের দ্বিতীয় মাসে আজ আখেরি চাহারি সুম্বার অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর তিনটে নাগাদ৷ খবর পেয়েছেন মির বকাউল একশো জন লোক নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের রান্নাবান্না শুরু করে দিয়েছেন৷
হেকিম হুমান সম্রাট আকবরের খাদ্যমন্ত্রী৷ বাদশার দরবারে তাঁর বিশেষ ক্ষমতা আছে৷ সম্রাট তাঁকে পছন্দও করেন খুব৷ কিন্তু হেকিম সাহেবের চিন্তা অন্য৷ আখেরি চাহারি সুম্বার অনুষ্ঠানে যে ভয়ানক ঘটনাটি ঘটবে তার আগাম আভাস এনেছেন তাঁর খোজারা৷
আফিম সেবনের ফলে সম্রাট ইদানীং মাংস একেবারেই পছন্দ করেন না৷ খিচড়া আর মাছের নানা পদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্রাটের জন্য তৈরি থাকে৷ থাকে নানারকম মিষ্টিও৷ সম্রাট যোধাবাইয়ের জন্মাষ্টমীর খিচুড়ির পরম ভক্ত হয়ে উঠেছেন৷ এবারের অনুষ্ঠানে সম্রাট কিন্তু মোতি পোলাওয়ের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন৷ তার বড় ছেলে বাবা সেলিমের বিশেষ প্রিয় পদ এটা৷ অনুষ্ঠান যখন শুরু হল মির বকাউল একশো পদ তৈরি করে টেবিল সাজিয়ে ফেলেছেন৷ দূরে দাঁড়িয়ে আছে বাদশার প্রিয় ঘোড়া আর হাতি৷
অনুষ্ঠানের শুরুতে সোনার থালার ওপর সরষের তেল ঢেলে আকবরি মোহর ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ সম্রাট ও তাঁর সন্তানরা এই থালা তার প্রিয় নারীর দিকে এগিয়ে দেন৷ সম্রাট এবার এই অনুষ্ঠান শুরুর সম্মান দিয়েছেন তাঁর তিরিশ বছরের বড় ছেলে সেলিম ওরফে জাহাঙ্গিরকে৷ এই একটি অনুষ্ঠান, যেখানে সম্রাটের বেগম এবং রক্ষিতারা একই টেবিলে বসেন৷
বাবা সেলিম তাঁর থালাটি এগিয়ে দিলেন সম্রাটের প্রিয়তম রক্ষিতা আনারকলির দিকে৷ সমস্ত অনুষ্ঠান একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল৷ সবাই বুঝলেন গুজব সত্যি৷ সম্রাটের প্রিয় রক্ষিতা আনারকলির দিকে হাত বাড়িয়েছেন সেলিম৷ সম্রাট নিজেকে সংযত করে তাঁর থালায় তুলে দিলেন মোতি পোলাও৷ মোতি পোলাও নিয়ে এমন নানা কাহিনি কথিত আছে৷ একটি আমি তুলে ধরলাম, সঙ্গে অবশ্যই দিলাম তার পাকপ্রণালী৷
লাগবে
বাসমতী চাল ৩০০ গ্রাম (একঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে পরে জল ঝরিয়ে শুকনো করে রাখতে হবে), পাঁঠার মাংসের কিমা ৫০০ গ্রাম, খোয়াক্ষীর ২ চামচ, ছানা ২ চামচ, বাদশাহি মশলা ২ চামচ (দারচিনি, লবঙ্গ, ছোট এলাচ, বড় এলাচ, জায়ফল, জয়িত্রি, শাহ্ জিরে ১ চামচ ঘিয়ে ভেজে বেটে নেওয়া), নুন-চিনি আন্দাজমতো, ঘি ১ কাপ, গোলাপজল ১ চামচ, কেওড়ার জল ১ চামচ, মিঠা আতর ২ ফোঁটা, জাফরান ১/২ চামচ, দু’চামচ দুধে মেশানো৷ আদা-রসুন-পেঁয়াজ বাটা ১ চামচ. গরম মশলা গুঁড়ো ১ চামচ৷
এবার
পাঁঠার মাংসের কিমা, আদা-রসুন বাটা, আন্দাজমতো দিয়ে ঘিয়ে রান্না করে নিন৷ কিমাটাকে পুরো শুকিয়ে ফেলুন৷ কিমার সঙ্গে সামান্য লঙ্কা গুঁড়ো, বাদশাহি মশলা আর গরম মশলা গুঁড়ো মেখে নিন৷ অন্য বাটিতে ক্ষীর-ছানা আন্দাজমতো, নুন-চিনি, ১ ফোঁটা মিঠা আতর, গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে মেখে নিন৷ এবার কিমার বল করে ক্ষীর-ছানার কোটিং দিন৷ এই মাংসের পুরভরা ক্ষীর-ছানার বলগুলোকে ঘিয়ে হালকা হাতে ভেজে নিন৷ কড়াইতে ঘি দিয়ে বাসমতী চালটা ঢেলে দিন৷ চাল ভাজা ভাজা হলে দ্বিগুণের একটু কম ফুটন্ত গরম জল দিন৷ আন্দাজমতো নুন-চিনি দিন৷ এবার দিন বাদশাহি মশলা আর গরম মশলা গুঁড়ো৷ দমে সেদ্ধ হবে নব্বই ভাগ৷ ঢাকনা খুলে জাফরান, সুগন্ধী জল, বাকি বাদশাহি মশলাটুক মিশিয়ে দিন৷ ঢাকনা খুলে ক্ষীর-ছানার বলগুলো মিশিয়ে দিন৷ ঢাকনা বন্ধ করে দমে রাখুন৷ অনেকে বলের ওপর তবকও লাগান৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.