Advertisement
Advertisement
Memories of Durga Puja

সেই পুজোয় নেই ঝাঁ চকচকে রেস্টুরেন্ট, নিরামিষাশী ঠাকুমাই সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা

পুজোর রান্নায় ঠাকুমার নিজের হাতে বানানো গাওয়া ঘি।

Memories of Durga Puja festival by Riya Bhattacharya
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:September 24, 2024 8:39 pm
  • Updated:September 24, 2024 8:39 pm

রিয়া ভট্টাচার্য: ছোটবেলার পুজো মানে ভোরের শিশিরভেজা ঘাসে ভরে থাকা মাঠ, বাতাসের তালে তালে মাথা দোলানো কাশফুল, আর দূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের শব্দ। নীলচে আকাশের খামের ভেতর সাদা মেঘের কাগজে লেখা একটুকরো আনন্দ ও মনকেমনের স্মৃতি। পুজো মানে মধ্যবিত্ত বাড়ির হেঁশেল থেকে ভেসে আসা রান্নার গন্ধও। বসার ঘরে আড্ডারত আত্মীয়দের উল্লাস, ছোট্ট আমির ছিটের কাপড় দিয়ে বানানো জামা পরে বেণী দুলিয়ে ছুটে বেড়ানো লাল মাটির পথে। পূজামণ্ডপের মাইক থেকে ভেসে আসা পুরোহিত মশাইয়ের মন্ত্রোচ্চারণ, আমার বিশুদ্ধ নিরামিষাশী ঠাকুমার হাতে তৈরি অতুলনীয় সব খাদ্যসম্ভার, স্মৃতির পর্দায় পুজো এলেই ভেসে ওঠে বারবার।

আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা মফস্বলে। এখানে তখন ঝাঁ চকচকে রেস্টুরেন্ট তেমন খুঁজে পাওয়া যেত না। একশো ওয়াটের বাল্বের আলোয় রান্নাঘরটাকে কেমন হলুদ মনে হত। সেই আলোতে রান্না করতেন আমার ঠাকুমা। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সেজে উঠতো নানা মনোলোভা পদ। ভোরবেলা আগমনীর সুরে চোখ খুলেই শুনতে পেতাম হেঁশেলে টুংটাং শব্দ। আকাশে আলো তখন ফুটতে শুরু করেছে, গোলাকার সূর্যকে মনে হচ্ছে ডিমের কুসুম। উঠোনের শিউলিতলা সাদা হয়ে গিয়েছে ফুলে। সেই ফুল কুড়াতাম আমি আর দিদি, পুজোমণ্ডপে নিয়ে যেতে হবে তো!

Advertisement

একটু পরেই পূজামণ্ডপ থেকে ভেসে আসতো ডাক, পুজো শুরু হবে। তাড়াহুড়ো করে স্নান সেরে মণ্ডপে ছুটতাম দুই বোন, দুজনেরই পরনে এক রঙের জামা। এদিকে হেঁশেলে বড়ো কড়াইতে ফুটতে থাকা ছোলার ডালে যুক্ত হতো ভাজা নারকেল কুচি। বড়ো কাঠের পিঁড়ি পেতে লুচি বেলতেন পিসিমণি। একসঙ্গে বসে খেতে খেতে আলোচনা হতো নানা কথা। খাদ্যরসিক ঠাকুরদার গর্বিত ভালোবাসা ভরা চোখ মাঝেমাঝে খুঁজে নিত তাঁর পুরাতন সহধর্মিণীকে, পাকা চুলের রাশির মাঝে লাল সুড়কি ঢালা পথের মতো যাঁর সীমান্তে জ্বলজ্বল করত সিঁদুর। ঠাকুমার নাম ছিলো গৌরী, নামের মতোই উজ্জ্বল ছিল তাঁর মন্দ্র উপস্থিতি। জলখাবার শেষে আবার শুরু হতো দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি। ওপরের তাক থেকে নেমে আসত ঠাকুমার নিজের হাতে বানানো গাওয়া ঘি, কাঁচের বয়ামে যা রাখা থাকতো যত্নে। রান্না হতো পোলাও, বাসমতী নয়, আতপচালে, কখনও বা খিচুড়ি। দুই স্নেহময়ী হাতের ছোঁয়ায় সেজে উঠত থালা। মাটিতে আসন পেতে বসে তৃপ্তি করে খাওয়া হত সেই সুখাদ্য।

বিকেলে মণ্ডপের বাইরে ঘুগনিওয়ালার কাছে ঘুগনি কিনে খেতাম তিন ভাই বোনে। প্রতি প্লেট ঘুগনির দাম ছিল মাত্র দুই টাকা। কোনও কোনওদিন খাওয়া হতো ফুচকা অথবা চুরমুর। একটা আইসক্রিম কিনে কতবার ভাগ করে খেয়েছি তিনজনে। তখন পকেটমানির প্রচলন ছিল না৷ পুজোর সময় পিসিমণি দিতেন কুড়ি টাকা আর ঠাকুরদা দিতেন আরও কুড়ি । চল্লিশ টাকা পকেটে নিয়ে নিজেদের অনেক বড়োলোক মনে করতাম আমরা তিনজন। হিসেব করে খরচ করতে হত, যাতে দশমীর আগে টাকা না ফুরিয়ে যায়!

সেইসব দিন আর নেই, শুধু ঝাঁ চকচকে শহরের আনাচেকানাচে ধুলোর মতো জমে আছে নস্টালজিয়া, মনের বোবা খামে।।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement