সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সকাল থেকেই প্যান্ডেল হপিং শুরু করেছেন। পরিশ্রান্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। ভিড় ট্রেন-মেট্রোয় বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না। অগত্যা অ্যাপ ক্যাব বুক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেটাও করতে পারছেন না। আপনাকে ব্লক দেখাচ্ছে। কোনও মতে গুগলে সেই অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর খুঁজে ফোন করে জানতে পারলেন, কোনও সময় আপনি ক্যাব বুক করে বাতিল করেছেন। বাতিল করার জন্য নির্দিষ্ট টাকা জমা দিলেই ফের চালু হবে অ্যাপ। এগজিকিউটিভের কথা মতো সেই টাকা দেওয়ার পরই দেখা গেল, আপনার অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা কয়েক মিনিটের মধ্যে গায়েব! অবাক হলেও ঠিক এই ভাবেই শেষ কয়েকদিনে অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়েছে কলকাতা এবং শহরতলির বহু মানুষের টাকা। একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে।
এভাবে ভুয়ো অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে প্রায় ২০ হাজার টাকা খুইয়েছেন কেস্টপুরের এক বাসিন্দা। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমি বাড়ি থেকে নিউটাউনে ছেলের স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাব ক্যাব বুক করি। নামার সময় দেখি, বুক করার সময় আমাকে যে ভাড়া জানানো হয়েছিল, তার থেকে ১১৪টাকা বেশি দেখাচ্ছে ভাড়া। আমি অভিযোগ দায়ের করার জন্য গুগল থেকে নম্বর জোগাড় করে ক্যাব সংস্থার নামে দেওয়া কাস্টমার কেয়ারে ফোন করি।” অভিযোগ, কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ তাঁকে নিশ্চিত করেন যে বাড়তি টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ফেরত যাবে। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ওই এগজিগিউটিভের নির্দেশ মতো ওই মহিলা একটি অ্যাপ ডাউনলো়ড করেন এবং এইপিআই-তে ডেবিট কার্ডের তথ্য দেন। এর পরই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই বিধাননগর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
একই অবস্থা নিউটাউনের এক বাসিন্দার। তিনি খুইয়েছেন লক্ষাধিক টাকা। তিনিও বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘অসুস্থ বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করার চেষ্টা করি। কিন্তু বুক করতে গিয়ে ব্লক দেখায়। এরপরই গুগল সার্চ করে সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর জোগাড় করে সেখানে ফোন করি। ফোন করতে কাস্টমার কেয়ার এগজিগিউটিভ বলেন আগে আমি বুকিং বাতিল করেছিলাম। তার জন্য আমাকে ৫ টাকা দিতে হবে। এরপর নির্দেশ মতো ‘অ্যানি ডেস্ক’ নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করি। নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্টার করে একটি এইপিআই (ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস) আইডিতে নিজের ডেবিট কার্ড নথিভুক্ত করি। কার্ড নম্বর এবং সিভিভি নম্বরও দিই। দু’মিনিটের মধ্যে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যায় টাকা।”
একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন বেনিয়াপুকুরের এক ব্যবসায়ী। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে এ রকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি।” শুধু অ্যাপ ক্যাবের নম্বর নয়, গুগল সার্চে অন্যান্য সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর পেয়ে, ফোন করে, একই রকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করা হয়েছিল, সেগুলো আদৌ ওই সংস্থার নম্বর নয়। ওগুলো সবই ভুয়ো কাস্টমার কেয়ারের ফোন নম্বর। প্রতারকদের নম্বর।” পুলিশের অনুমান, এই নয়া প্রতারণার পিছনে রয়েছে কোনও সংগঠিত চক্র। তবে এই প্রতারণার পিছনে কারা, সেই সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.