সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছোট্ট হোক বা অনেকটা- ঘুম ব্যাপারটাকে তাচ্ছিল্য করলেই মুশকিল!
অনিদ্রার রোগীরা হাড়ে হাড়ে স্বীকার করে নেবেন বক্তব্যটা। কিন্তু, আমরা সে কথা বলছি না।
জানেন কি, আপনি যখন ঘুমোন, তখন আপনার সঙ্গে কী কী হয়?
একজন মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকেন, তখন তাঁর শরীরে নানা রাসায়নিক এবং হরমোনাল ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে চলে। এই সময়ে আমাদের শরীর এমন এক অবস্থার মধ্যে দিয়েও যায় যাকে বলা হয় ব়্যাপিড আই মুভমেন্ট। মানে, ঘন ঘন চোখের পাতা বন্ধ অবস্থাতেই কাঁপতে থাকা! এই অবস্থাটা পুরোপুরি ঘুম নয়, বরং অনেকটাই জেগে থাকার কাছাকাছি। এছাড়াও শ্বাসপ্রশ্বাস, রক্তচাপ সংক্রান্ত আরও অনেক শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে চলে ঘুমের গভীরে।
ঠিক কী কী, জেনে নেওয়া যাক এক এক করে!
• স্লিপ প্যারালিসিস: বাংলা করলে দাঁড়ায় ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত! তা বলে ধরে নেবেন না, আপনি যখন ঘুমোচ্ছেন, তখন আপনার শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাহলে ব্যাপারটা কী? এই সময়ে শরীর থাকে ব়্যাপিড আই মুভমেন্টের মধ্যে এবং পেশিগুলি শক্ত হয়ে যায়। রোজ যদি এরকম হতে থাকে, তাহলে কিন্তু চিন্তার কারণ রয়েছে। কেন না, ঘুম অনিয়মিত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নারকোলেপসি নামের এক ধরনের স্নায়ুর অসুখের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এরকম হতে থাকলে একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত।
• বডি টেম্পারেচার: আমরা যখন ঘুমোই, তখন আমাদের শরীরের উষ্ণতাও পরিবর্তিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, সঙ্গে রক্তচাপ, নিশ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক হার এবং হৃৎস্পন্দনও অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
• হাইপনিক জার্ক: আপনার কি মনে হয়, ঘুমের মধ্যে আপনি অনেকটা উঁচু থেকে পড়ে যাচ্ছেন? এই ঘটনাটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় হাইপনিক জার্ক। অনিয়মিত ঘুম থেকে এরকম সমস্যা হয়। এরকম হলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তার সঙ্গেই বেড়ে যায় হৃৎস্পন্দন এবং নিশ্বাস-প্রশ্বাসের হার।
• এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম: অনেকে ঘুমের মধ্যে ভয় পান! কথাটা শুনে কিন্তু মজা পাওয়ার কিছু নেই। যখন এরকম হয়, তখন মানুষ ঘুমের মধ্যেই নানা কল্পিত শব্দ শুনতে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পান ঝলসে ওঠা আলো। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে হাজির হয় প্রচণ্ড মাথাব্যথা।
• গ্রোথ হরমোনের জন্ম: যে সব হরমোন শরীরের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোকে বলা হয় গ্রোথ হরমোন। এগুলো ঘুমের মধ্যেই নিসৃত হয়। ওই জন্যই আচমকা একদিন ঘুম থেকে উঠে মনে হয়, একটু লম্বা হয়ে গিয়েছি! এছাড়া এই হরমোন রক্তে শর্করার পরিমাণে ভারসাম্য বজায় রাখে।
• স্লিপ ওয়াকিং: অনেকেই আছেন, যাঁরা ঘুমের মধ্যে হাঁটাচলা করেন। শুধু হাঁটাহাঁটিই নয়, বাসন মাজা বা কিছু পরিষ্কার করার মতো কাজও করে থাকেন। এই উপসর্গ বাচ্চাদের মধ্যে যেমন দেখা যায়, তেমনই দেখা যায় বড়দের মধ্যেও। এ সব ক্ষেত্রে বড়রা সাধারণত অ্যালজাইমার্স, স্কিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক ব্যাধির শিকার হন।
• মানসিক প্রতিক্রিয়া: ব়্যাপিড আই মুভমেন্টে যে শুধু খারাপটাই হয়, এমন কিন্তু নয়। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, এই অবস্থায় মস্তিষ্কের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। মানুষ সৃষ্টিশীল কাজে প্রেরণা পায়।
• ঘুমের মধ্যে কথা বলা: অনেকেই ঘুমের মধ্যে কথা বললেও ব্যাপারটাকে হালকা করে দেখা উচিত নয়। সাধারণত অনিয়মিত ঘুম, অতিরিক্ত পরিশ্রম বা মানসিক অবসাদ থেকে মানুষ ঘুমের মধ্যে কথা বলে।
• স্লিপ অ্যাপনিয়া: যখন ঘুমের মধ্যে নিশ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেই অবস্থাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় স্লিপ অ্যাপনিয়া। ঘুমের মধ্যে শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে এই উপসর্গ দেখা দেয়।
• নাইট টেরর: ঘুমের মধ্যে ভয় পাওয়ার আরও এক রকমফের হল এই নাইট টেরর। এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোমে যেমন শব্দ শুনে ভয় তৈরি হয়, তেমনই এক্ষেত্রে ভয় আসে কোনও কল্পিত কিছু দেখে! সেটা দুঃস্বপ্ন হতে পারে, হতে পারে কল্পনা! এক্ষেত্রে সাধারণত খুব জোরে মানুষ চেঁচিয়ে ওঠে, ঘুম থেকে ভয়ে উঠে বসে, সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.