ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রেমদিবসে পুংকেশরের রেণুর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলছে প্রেম। আর প্রেম যখন, পরিণতিতে তা চুমুর দিকে গড়াবেই। কিন্তু এই চুমুর গবেষণালব্ধ ফল নিয়েই নতুন করে ভ্যালেন্টাইনস ডে তোলপাড় নেটদুনিয়ায়।
প্রতিবারের মতোই এবারও প্রশ্ন উঠেছে, ভালবাসা, চুমু এসবের জন্য কি একটি বিশেষ দিন লাগবেই? নতুন প্রজন্মের কি এতই দুরবস্থা? আগের প্রজন্মেও তো ভালবাসা ছিল। তাদের প্রেম ছিল। প্রেমে আবেগ ছিল। কিন্তু তাকে প্রকাশ্যে আনার কোনও দরকার তো পড়ত না। এতটা একরোখা ছিল না আগের প্রজন্ম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ভালবাসা আঁকড়েই বড় হয়েছে। বুড়ো হয়েছে। তাতে কি আদরে, চুমুতে কোথাও খামতি ছিল? হাজার কবিতার সবই কি বেকার? সেসব শুনে প্রবল বিরোধিতায় নামবে নতুন প্রজন্ম। বলবে কোনও সংস্কারে তারা ভালবাসাকে আবদ্ধ রাখতে চায় না। যেখানে কার্পণ্য নেই, লুকোচুরির ভয় নেই, সেখানে ভালবাসা দরকারে প্রকাশ্যে দেখাবে। শালীনতা নিয়ে যদিও সকলেরই ভিন্ন মত রয়েছে। নেটিজেনদের বক্তব্য, তারা ভালবাসায় যেহেতু ভীত নয়, তাই চুমুও তারা যেদিন ইচ্ছে খাবে। দরকারে ভালবেসে একটি দিন সেলিব্রেটও করবে। আর সেখানে চুমু থাকবেই। এই প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে চুমুর উপকারিতা আর অপকারিতা নিয়ে নানা গবেষণার কথা।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে সম্মান জানিয়ে এই প্রেমদিবসের আগের সাতদিনও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। রোজ ডে, প্রপোজ ডে, চকোলেট ডে, টেডি ডে, প্রমিস ডে, হাগ ডে, কিস ডে- শেষে ভ্যালেন্টাইনস ডে। আর শেষ দিনে প্রেমও হয় গভীরতম। সেখানে চুমুর উপস্থিতি অতি-আবশ্যক। চুমুর গুণ যেমন আলোচনার ও আগ্রহের বিশেষ বস্তু, কিন্তু তার অপকারিতাও যুগলকে দুশ্চিন্তায় ফেলার জন্য যথেষ্ট। মাংসাশী বা নিরামিষাশী প্রত্যেকের মুখেই লালার বিশেষ কার্যকারিতা থাকে। খাবার চিবোনো ও পাচনের প্রধান উপকরণ এই লালা। চুমু খেলে লালা এক মুখ থেকে আরেক মুখে লাগবেই।
গবেষণা বলছে, ভালবাসা ছাড়াও অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া এক মুখ থেকে আরেক মুখে আদানপ্রদান হয়। জানা যাচ্ছে, ১০ সেকেন্ডের গভীর চুমুতে ৮ কোটি ব্যাক্টেরিয়া একজনের লালার সঙ্গে অন্যের মুখে প্রবেশ করে। যারা যত বেশি চুমু খাচ্ছেন, তাঁদের মুখ তত বেশি ব্যাক্টেরিয়ায় ভরে যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডের একটি সংস্থা একবার এই গবেষণা চালায়। প্রতি যুগল কতবার চুমু খান ও কত ঘনঘন চুমু খান, তার উপর একটি ফর্ম পূরণ করে এই পরীক্ষা হয়। জানতে চাওয়া হয় যুগলের আচরণও। তারপর বিশেষ একধরনের ব্যাক্টেরিয়া ভরতি প্রোবায়োটিক পানীয় (ক্ষতিকর নয়) খেতে দেওয়া হয়েছিল। পরস্পরকে চুমু খাওয়ার পর দেখা যায়, যাঁরা ওই পানীয় খাননি, তাঁদের মুখেও ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে।
তবে আশঙ্কার মেঘ অন্যত্র। জানা যাচ্ছে, চুমুর আচমকা আঘাত সহ্য করতে না পারলে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। যার ধাক্কা পৌঁছতে পারে হৃদয়েও। সেক্ষেত্রে হৃদয়ের আদানপ্রদান করতে গিয়ে যুগলে আক্রান্ত হতে পারে হৃদরোগেও। চুমু যেহেতু পুরোপুরি হরমোন নির্ভর, সেই কারণেই অনিয়ন্ত্রিত হার মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি ডেকে আনতে পারে হৃদয়ের। তবে প্রেমদিবসে আশঙ্কার মেঘ নয়, চুমুর উপকারিতা নিয়েই ভাবতে চায় যুগলে। চুমু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। নিয়মিত ও সুস্থ চুমুতে হৃৎপিণ্ডের ব্যায়াম হয়। মেজাজ ফুরফুরে থাকে। যুগলের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া স্বাভাবিক থাকে। তাহলে? যব পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.