Advertisement
Advertisement

Breaking News

কণ্ঠস্বর

কণ্ঠস্বর হারিয়েছেন? দ্রুত তা ফিরে পেতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি

উঁচু স্বরে কথা বলা বা গান গাওয়ার সময়ে গলার খেয়াল রাখতে হবে।

If you lose your voice,then abide by these treatment and get it back soon
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 25, 2019 9:12 pm
  • Updated:August 26, 2019 2:26 pm  

ইচ্ছা সত্ত্বেও কথা যদি বলতে না পারেন! গলা ভেঙে কণ্ঠ যদি হয়ে যায় শব্দহীন! গভীর সংকট। একটানা কথা বলতে বলতে নির্বাক হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে আকছার। কীভাবে ফিরে পাবেন হারানো স্বর? জানাচ্ছেন এসএসকেএম হাসপাতালের বিশিষ্ট ইএনটি সার্জন ডা. অরুণাভ সেনগুপ্ত ডা. অঙ্কিত চৌধুরি। শুনলেন পৌষালী দে কুণ্ডু।

[ আরও পড়ুন: রঙিন আলোতেই সারবে শরীরের নানা রোগ, বিরল পন্থার খোঁজ দিলেন বিশেষজ্ঞ]

ঝা…লমুড়ি, মুস…ম্বি – ট্রেনে ফেরিওয়ালার চিৎকার। পুজোর বাজারে ক্রেতা ধরতে হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, হাওড়া মার্কেটের ফুটপাথে দোকানিদের হাঁকাহাঁকি। দস্যি ছাত্রদের মন বসাতে ক্লাসরুমে ঢুকেই গলা চড়িয়ে পড়ানো কিংবা সাতসকালে উঠে গলা সাধা থেকে স্টেজে পারফরম্যান্স করা সংগীত শিল্পী। কণ্ঠস্বরই এঁদের কাজের মূল অস্ত্র। কেউ এক টানা কথা বলেন, কাউকে চিৎকার করে পেট চালাতে হয়, কারও পেশা গান গাওয়া। শিক্ষক, হকার, সংগীত শিল্পী, রেডিও জকি, সাংবাদিক – যাঁদের নাগাড়ে কথা বলতে হয়, তাঁদের গলাই বেশি খারাপ হয়।

Advertisement

ভোকাল নোডিউল
উচ্চস্বরে বেশি কথা বললে ভোকাল কর্ড অর্থাৎ স্বরনালিকে বেশি কাজ করতে হয়। তাতে স্বরনালির মাঝখানে জল জমে ফুলে ভোকাল নোডিউল হয়। এতে দু’টো ভোকাল কর্ডই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষক, গায়ক—গায়িকা, হকার, বাস কন্ডাক্টরদের সবচেয়ে বেশি এই সমস্যা হয়।

লক্ষণ: গলার স্বর বসে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া, ফ্যাসফেসে আওয়াজ হওয়া।
চিকিৎসা: এফওএল টেস্ট করে দ্রুত শনাক্ত করে প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে স্টেরয়েড জাতীয় কিছু ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ওষুধে না কমলে মাইক্রোল্যারিংজিয়াল সার্জারি করতে হয়। লেজার রে দিয়েও এই অপারেশন করা যায়। আবার এমনি পদ্ধতিতেও করা যায়। তাছাড়া নিচু স্বরে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিছুদিন খুব কম কথা বলতে বলা হয়। যাঁরা উচ্চকণ্ঠে গান তাঁদের গাওয়ার স্টাইল পরিবর্তন করে লো পিচে গাইতে বলা হয়।

voice song

পলিপ
জোরে কথা বলা স্বভাব, এক টানা বেশি চিৎকার-চেঁচামেচি করলে, ঘনঘন কাশি হলে ভোকাল কর্ডে পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই সমস্যায় একটি ভোকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ভোকাল কর্ডের একটি অংশে জল জমে টিসু্য ফুলে যায়। এটা কিন্তু টিউমার নয়।
চিকিৎসা: একদম প্রথমে ধরা পড়লে ওষুধে কাজ দেয়। তা না হলে শুধুমাত্র ওষুধ খুব একটা ভাল কাজ না-ও দিতে পারে। এক্ষেত্রে লেজার বা সাধারণ পদ্ধতিতে মাইক্রোল্যারিংজিয়াল সার্জারি করে পলিপ সরাতে হয়। তারপর ওষুধ ও ভয়েস মডিউলেট করতে বলা হয়। সেক্ষেত্রে নোডিউলের ট্রিটমেন্টের মতোই কম কথা, আস্তে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়। চিকিৎসার একদম প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত স্পিচ থেরাপি করে যেতে হবে। তবেই আগের মতো কণ্ঠস্বর ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে।

ভোকাল প্যারালাইসিস
এর প্রধান কারণ ভোকাল কর্ড, ফুসফুস, থাইরয়েড, খাদ্যনালিতে ক্যানসার। এছাড়া কিছু অজানা কারণে হয়, কিছু ক্ষেত্রে গলা, বুক, হার্ট, খাদ্যনালিতে কোনও অপারেশনের সময় ভোকাল কর্ডের নার্ভে লেগে গেলেও প্যারালাইসিস হতে পারে। কথা বলার নার্ভগুলি ফুসফুস থেকে উঠে গলায় পৌঁছয়। ফুসফুসে ক্যানসার হলে তাই সহজেই ভোকাল কর্ডে ছড়িয়ে যায়। এতে ভোকাল কর্ডের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্যারালাইসিস হয়ে যায়। বাঁদিকের ভোকাল কর্ডে প্যারালাইসিস সবচেয়ে বেশি হয়।এছাড়া শিশুদের খুব ঠান্ডা লাগার পর, কনজিনেটাল ডিফরমিটি থাকলে স্বরনালিতে প্যারালাইসিস হতে পারে।
লক্ষণ: কথা বলার সময় শব্দ বের হয় না। শুধু শ্বাসের আওয়াজ হতে থাকে।
চিকিৎসা: প্রথম ছ’মাস ওষুধ ও গলার ব্যায়াম করতে দেওয়া হয়। এতে স্বর ফিরে এলে ভাল। তা না হলে সার্জারি করতে হয়। টাইপ ওয়ান থাইরোপ্লাস্টি, ফ্যাট ইঞ্জেকশনের মতো সার্জারি করে যে ভোকাল কর্ডটি বাইরের দিকে চলে যায় তাকে মাঝখানে এনে স্থির করে দেওয়া হয়। এতে আবার আগের মতো কথা বলা যায়।

voice-3

ক্যানসারে কণ্ঠস্বর ফিরে পেতে
একটানা কথা বলতে বলতে গলার আওয়াজ বসে যাওয়ার পিছনে ক্যানসারও অন্যতম কারণ। স্টেজ ওয়ানে ক্যানসার থাকলে লেজার রে দিয়ে ক্যানসার কোষ সরিয়ে ফেলা যায়। তারপর চলে ভয়েস থেরাপি। কেমোথেরাপি চললেও স্বর পুরো চলে যায় না।
কিন্তু অ্যাডভান্সড স্টেজে সাধারণত পুরো স্বরযন্ত্র কেটে দেওয়ায় কণ্ঠস্বর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে রোগীকে বিশেষ উপায়ে কথা বলানো শেখানো হয়। যেমন, রোগীকে প্রথমে হাওয়া গিলে নিতে বলা হয়। তারপর ওই হাওয়া তিনি মুখ দিয়ে বের করে কথা বলার চেষ্টা করবেন। এছাড়া এখন ইলেক্ট্রোল্যারিংস যন্ত্র পাওয়া যায়। এই যন্ত্র গলার নির্দিষ্ট অংশে লাগাতে হয়। সেখানে যে কম্পন হয় তা যন্ত্রটি কথায় রূপান্তর করে বলে। এতে রোগীর কথা রোবটের মতো শুনতে লাগে। দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
স্বরযন্ত্র পুরো বাদ দেওয়া হলে সার্জারির সময় শ্বাসনালি ও খাদ্যনালির মাঝে প্রোভক্স নামে একটি যন্ত্র লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাতে রোগী ফের কথা বলতে পারে। অপারেশনের পরও অনেকের কেমো বা রেডিয়োথেরাপির দরকার হয়। তখন তাদের এই থেরাপিগুলি সম্পূর্ণ হওয়ার পর প্রোভক্স লাগিয়ে দেওয়া হয়।

[ আরও পড়ুন: বিজ্ঞানের নবজাগরণ, এবার মানুষের শরীরে বসবে শূকরের হৃদযন্ত্র]

ভয়েস থেরাপি
ওষুধ, সার্জারি ও ভয়েস থেরাপি তিনটেই স্বরযন্ত্রের চিকিৎসার সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গলার আওয়াজের যে কোনও সমস্যার ট্রিটমেন্টের শুরু থেকেই ইএনটি চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন স্পিচ থেরাপিস্টকে দেখাতে হবে। সাধারণত স্পিচ থেরাপিস্টরা প্রথমেই রোগীকে ইংরেজি বর্ণমালার মধে্য ভাওয়েলগুলি (এ, ই,আই, ও, ইউ) বিশেষ কায়দায় বলতে শেখায়। ধরা যাক, ‘এ’ উচ্চারণটি এক নিশ্বাসে এক টানা বলা প্র‌্যাকটিস করতে হয়। এভাবেই ইংরেজি ও বাংলা ভাষার বর্ণগুলি বলার অভ্যাস করতে হয়। দেখানো হয়, কোন শব্দ উচ্চারণে কখন শ্বাস নিতে হবে, কখন শ্বাস ছাড়তে হবে ইত্যাদি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement