শীতকালীন রোগের প্রতিকার ভিটামিন সি আর ডি। কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এরা? কোন খাবারেই বা পাওয়া যায় এদের? বিস্তারিত আলোচনা করলেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির গোড়া পর্যন্ত নাক কখনও সরু পাহাড়ি ঝরনা তো কখনও সর্দিতে জমজমাট। শ্বাস নিতে গিয়ে একদম হাঁসফাঁস দশা। শীতের প্রায় সঙ্গী হয়েই আসে সর্দি-জ্বর-কাশি-হাঁচি। বাড়তি ঝামেলা ত্বক শুষ্ক হয়ে ফুটিফাটা। বন্ধ দরজা-জানলা, সোয়েটার-জ্যাকেটের বর্ম ভেদ করে কখন যে টুক করে ঠান্ডা লেগে যায়, ঠাওরাতে পারা যায় না। ভুগতে হয় এইট টু এইট্টিকে। কখনও আবার সাদামাঠা সর্দি-কাশি জাঁকিয়ে বসে ব্রঙ্কাইটিসের ভয়াল রূপ নেয়। তাই উত্তুরে হাওয়ার কামড় উপেক্ষা করে সুস্থ থাকার নানা ফন্দিফিকির জেনে রাখা জরুরি আগেভাগেই। শীতকালীন ফ্লু, ফুসফুস সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সবচেয়ে জরুরি। সর্দি-জ্বর এড়ানোর এটাই মোক্ষম উপায়। স্বাভাবিকভাবেই এবার প্রশ্ন ওঠে কীভাবে রোগকে আটকাবে শরীর?
আসলে শীতের প্রকৃতিতেই লুকিয়ে রয়েছে অসুখ প্রতিরোধের অস্ত্র। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ভিটামিন সি সবচেয়ে জলদি শরীরকে মজবুত করে। আর অদ্ভুতভাবে এই সময় বাজারের ডালি ভরা থাকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, শাকসবজিতে।
[ সংক্রমণ থেকে সচেতন থাকুন হবু মায়েরা, নাহলে প্রভাব পড়তে পারে শিশুর উপরও ]
সি ফ্যাক্টর
ভিটামিন সি-তে থাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষত, ইনফেকশন সারিয়ে তোলে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। সাধারণত শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ঠান্ডা লেগে ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ভিটামিন সি শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে। স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ভিটামিন সি অথবা অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মাত্রা কমতে থাকে। মানুষের শরীরে ত্বক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় কোলাজেন প্রোটিন। এটি ত্বক ছাড়াও কার্টিলেজ, লিগামেন্ট রক্তবাহ গঠন করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি-তে প্রচুর কোলাজেন থাকে। দাঁত ও হাড় মজবুত রাখতেও সাহায্য করে এই ভিটামিন। শীতে কুঞ্চিত ত্বককে মসৃণ করতেও সি-এর জুড়ি মেলা ভার। এটি স্কিনের শুষ্কতা কমায়।
কোথায় পাবেন: ব্রকোলি, আঙুর, কিউই, কমলালেবু, আলু, স্ট্রবেরি, টম্যাটো, পেঁপে, আনারস, সবুজ ও লাল ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, বিন্স ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
[ বয়সকালে মাছ-মাংস ছাড়ুন, ডায়েটে রাখুন নিরামিষ আহার ]
জরুরি ভিটামিন ডি’ও
এটি ভিটামিন হলেও হরমোনের মতো কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরে ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসের জোগান দিয়ে হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। যখন শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা যায়, তখন হাড় থেকে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস বেরিয়ে যায়। ফলে দেখা যায় হাড় ক্রমশই নরম হতে থাকছে। যা থেকে হয় অস্টিওপোরোসিস। ভিটামিন ডি-এর অভাব মেটাতে খান ডিম, মাছ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার।
ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে ভাল উত্স রোদ। তবে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বিশেষ করে মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর ক্যালশিয়াম বা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। বয়স্করা যাঁরা পর্যাপ্ত সূর্যের কিরণ পান না, তাঁদের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দরকার৷ তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো খান। শীতের মিঠে নরম রোদে আধ ঘণ্টা একটু হাঁটু সেক দিয়ে নিলে ভিটামিন ডি ভালই প্রবেশ করে। তাই এই সময় চেষ্টা করুন ক্রিমের মতোই একটু রোদও মেখে নিতে। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি সাপ্লিপেন্ট নেওয়াও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। শীতের মরশুমে কতটা সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে, তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খেতে হবে।
কোথায় পাবেন: দুধ, দই, ডিম, ডিমের কুসুম, মাশরুম, ফ্যাটি ফিশ (স্যালমন, টুনা, ম্যাকারেল, সার্ডিন), সয়া, আমন্ড, কোকোনাট মিল্ক, চিজ, কমালালেবুর জুস, কড লিভার অয়েল, ওটমিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.