বাথরুমে যেতে আতঙ্ক, স্কুলে সারাক্ষণ অস্বস্তি। অসহ্য পেট ব্যথা হলে তবেই কেন গ্রাহ্য করেন বাবা-মা? কচিদের কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট কমানোর উপায় বললেন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের ডিরেক্টর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ। শুনলেন সোমা মজুমদার।
বাচ্চার যে শুধুমাত্র অনিয়মিত মলত্যাগ না করলেই কোষ্ঠকাঠিন্য হবে তা নয়। বরং অনেক বাচ্চা রোজই মলত্যাগ করছে অথচ তা স্বাভাবিক নয়, প্রকৃতপক্ষে একেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। তাই অনেক অভিভাবকই সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ বুঝতে দেরি করে ফেলেন। আবার কেউ কেউ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ছোট বয়স থেকে বাচ্চাকে ওষুধ খাওয়াতে চান না। কিন্তু তাতে শিশুর কষ্ট বাড়তেই থাকে। তাই আপনার সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা নজরে এলেই দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কোন বয়স থেকে
সাধারণত দেড়-দু বছরের মধ্যে শিশুরা স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তখন থেকেই শুরু হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা এই সমস্যায় বেশি ভোগে। তবে সময়মতো চিকিৎসা না করলে দশ বছর পর্যন্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা চলতে থাকে। বাচ্চারা মাতৃদুগ্ধ খাওয়া যখন থেকে কমিয়ে দেয়, তখনই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে বেশি দেখা যায়। অনেক বাচ্চা মাতৃদুগ্ধ পানের সময়ও নিয়মিত মলত্যাগ করে না, কিন্তু তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয় না। কারণ সেই সময় বাচ্চা নিয়মিত মলত্যাগ না করলেও যখনই মলত্যাগ করে তা স্বাভাবিকই হয়। আর ডাক্তারি পরিভাষায় কোষ্ঠকাঠিন্য হল শক্ত মল নির্গত হওয়া, কতদিন বাদে বাদে শিশু মলত্যাগ করছে তা নয়। অর্থাৎ যদি কেউ রোজই দু-তিনবার মলত্যাগ করে কিন্তু তা স্বাভাবিকের থেকে শক্ত হয় তাহলে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের আওতায় ফেলা হয়।
[ স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল ধরে রাখতে চান? প্রতিদিনের ডায়েটে থাকুক এগুলি ]
রিস্ক ফ্যাক্টর
প্রাথমিক পর্যায়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা শুরু না করলে শিশুদের এই সমস্যা ধীরে ধীরে জটিল হতে থাকে। মল শক্ত হয়ে মলদ্বারে ব্যাথা অনুভূত হয়। শিশুদের দীর্ঘদিন ধরে মল শক্ত হতে হতে মলদ্বার চিরে রক্ত বের হতেও দেখা যায়। এমনকী মল নির্গত হওয়া বন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। শিশুদের খিদে চলে যায়, পেট মাঝে মাঝেই ব্যাথা করে, পেট শক্ত হয়ে ফুলে যায়, সবসময় অস্বস্তি বোধ হয়।
কেন হয়
আগে ৩০ শতাংশ বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেখা যেত। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বাচ্চাদের রিফাইন্ড ফুড বা পরিশোধিত খাবার বেশি খাওয়ানোর জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়েই চলেছে। ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার ও জল কম খেলে কিংবা প্যাকেটের দুধ বেশি খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এছাড়াও কোনও কারণে একবার কোষ্ঠকাঠিন্যে মল ত্যাগ করতে কষ্ট হলে বাচ্চারা অনেক সময় পরে মল ত্যাগের বেগ এলে মলদ্বারে যন্ত্রণা হওয়ার ভয়ে চেপে দেয়। আর তারা যত মল নির্গত হওয়া চাপতে থাকে ততই কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, বাচ্চাদের যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা কম থাকে এবং পেটের পেশীর জোর কম থাকে বলে কোষ্ঠকাঠিন্যে শিশুদের অনেক বেশি কষ্ট হয়।
চিকিৎসা
বাবা-মায়েদের টিপস
১. বাচ্চাদের বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার অর্থাৎ শাক-সবজি বেশি খাওয়ান। সবজির মধ্যে ঢেঁড়শ, যে কোনও শাক, ডাঁটা, গাজর, পটল, বেগুন, শিম, কুমড়ো, লাউ ইত্যাদি অবশ্যই খাওয়ান। ফলের মধ্যে বেল, পেয়ারা, কালো জাম, কলা, অল্প পরিমাণে পাকা আম, খাওয়াতে পারেন। মটর, মুগ ও ছোলার ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। শিশু একই সবজি রোজ রোজ খেতে না চাইলে পুষ্টির মান বজায় রেখে ভিন্ন স্বাদের রান্না করে খাওয়ান। যদি বাচ্চা একেবারে খেতে না চায় তাহলে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি ঘড়ি ধরে বার বার জল খাওয়াতে হবে। বেশি জল খেতে না চাইলে শরবত, ফ্রেশ ফলের রস কিংবা সবজির স্যুপ করে খাওয়ান। তবে ফলের রসের চেয়ে গোটা খাওয়াই বেশি উপকারি। বাজার চলতি হেলথ ড্রিঙ্ক যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। একইসঙ্গে বাচ্চাকে দুধ কম খাওয়ান।
২. সন্তানের যাতে রোজ মলত্যাগ করার অভ্যাস তৈরি হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চাকে বুঝিয়ে প্রাথমিক অবস্থাতেই গুরুত্ব দিয়ে সতর্ক হতে হবে। আজকাল বাচ্চারা অল্প বয়সেই প্লে স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে যদি সকালে স্কুলে যাওয়ার তাড়ায় বাচ্চার অভ্যাস তৈরি না হয়, তাহলে স্কুল থেকে ফিরে অর্থাৎ বিকেলেই অভ্যাস তৈরি করুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.