রক্ত পড়লে টনক নড়ে৷ একটু অনিয়ম হলেই ভোগান্তি৷ বেগ এলেই দুর্ভোগ৷ মুখ বুজে এই কষ্টকে মেনে নেয় অনেকেই৷ অজান্তেই রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করে৷ ওষুধে মোকাবিলা না হলে নিশ্চিন্তে সার্জারি করিয়ে নিন৷ ভরসা দিচ্ছেন প্রোব ডায়াগনস্টিকের বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ সরকার৷ লিখছেন মৌশাখী বোস
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পাচ্ছেন? মলদ্বারে ফোলা ভাব? নিয়মিত রক্ত পড়ে? উপসর্গগুলি অর্শের৷ প্রাথমিক চিকিৎসার পরও না কমলে বিপদ৷ অস্বস্তি থেকে বাঁচতে সার্জারি করিয়ে নেওয়া ভাল৷
মলদ্বারের অ্যানাল ক্যানেলের ভিতরে অথবা বাইরে অর্শ হয়৷ যার দরুন রোগীর মলদ্বার থেকে একেবারে টাটকা রক্ত বেরোয়৷ রক্ত পড়ার সময় সাধারণত ব্যথা হয় না৷
কখন হয় :
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, দীর্ঘ সময় মল চেপে রাখার অভ্যাস, কম জল পান, সবুজ শাকসবজি কম খাওয়া, রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ফাস্ট ফুডে আসক্তি, ফাইবারযুক্ত খাবার না খাওয়া, ক্রনিক ডায়েরিয়া, ওবেসিটি, প্রেগন্যান্সি ও পায়ুসঙ্গম করলে অর্শ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে৷
উপসর্গ:
ইণ্টারনাল অর্শ – এটি সাধারণত রেকটামের ভিতরের দিকে হয়ে থাকে৷ যা বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়৷ সাধারণত মলত্যাগের সময় রোগী অস্বস্তিবোধ করেন এবং মলদ্বার থেকে রক্ত পড়ে৷
এক্সটারনাল অর্শ – মলদ্বারের চারপাশে যে চামড়া থাকে তার নিচে হয়৷ বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায়৷ এক্ষেত্রে রোগীর মলদ্বার চুলকায় এবং রক্ত পড়ে৷
থ্রম্বোসড অর্শ – এক্ষেত্রে মলদ্বারের চারপাশে শক্ত লাম্প দেখা যায় এবং মলত্যাগের সময় জমাট রক্ত বের হয়৷ অসহ্য যন্ত্রণা হয়৷
রোগ চিনতে:
ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশন – চিকিৎসক গ্লাভস পরে পায়ুদ্বারে আঙুল ঢুকিয়ে বুঝে নেন কোনও গ্রোথ আছে কি না৷ যদি কোনও অস্বাভাবিক স্ফীতি চোখে পড়ে তাহলে পরবর্তী পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়৷
কোলোনোস্কোপি – অর্শ কি না তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক কোলোনোস্কোপি করতে বলেন৷
অপারেশন:
চিকিৎসক অসুখের প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন৷ এতে যদি ভাল ফল না হয় এবং অর্শ ক্রমশ বাড়তে থাকে তখন সার্জারির প্রয়োজন পড়ে৷ কেমিক্যাল কর্টারি কিংবা থার্মো-কর্টারি করে পাইলস অপসারণ করা হয়৷ এই সার্জারিতে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না৷ কেবল রোগাক্রান্ত স্থানটিকে অবশ করে দেওয়া হয়৷ ফলে রোগী সার্জারির পরের দিনই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এবং দৈনন্দিন কাজে যোগ দিতে পারেন৷
Haemorrhoidectomy – এক্ষেত্রে জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া করে রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয়৷ তারপর পায়ুদ্বার ওপেন করে পাইলসটি নির্গত করা হয়৷ এই সার্জারির পর অসুখ ফিরে আসার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ থাকে৷
Haemorrhoidal amtery ligation– এই পদ্ধতিটিও মূলত জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া করে করা হয়৷ এক্ষেত্রে হাইফ্রিকোয়েন্সি আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে পাইলস সংলগ্ন ব্লাড ভেসেলের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ যার দরুন পাইলসটি রক্তের অভাবে নিজে থেকে শুকিয়ে যায়৷
stapling – এটি মূলত Haemorrhoidectomy-র বিকল্প হিসাবে করা হয়৷ এক্ষেত্রে বৃহদান্ত্রের একদম শেষ ভাগটি স্ট্যাপেল করা হয় যার ফলে পাইলসের বৃদ্ধির প্রতিরোধ ঘটে৷ তবে এটি খুব কম ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়৷
কষ্ট কমাতে:
সতর্কতা:
এটি অন্যান্য সব রোগের মতো সাধারণ একটি অসুখ তাই অযথা লজ্জিত না হয়ে চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া উচিত৷
মিথ ব্রেক:
অর্শ সার্জারি না কি সহজে সফল হয় না?
এই নিয়ে মানুষের মনে নানা দ্বন্দ্ব থাকলেও অভিজ্ঞ সার্জনের কাছে চিকিৎসা করালে অপারেশন সম্পূর্ণ সফল হয়৷
যোগাযোগ ৯৮৩১৭৬২৪৭০
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.