পৌষালী দে কুণ্ডু: ভারী চেহারা, চলতে ফিরতে হাঁসফাঁস৷ সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা স্লিপ অ্যাপনিয়া৷ একটা সার্জারি করলেই অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে৷ শরীর ছেড়ে পালাবে হাই সুগার৷ সত্যি এমন সম্ভব? প্রশ্ন করবেন না৷ রেজাল্ট রইল চোখের সামনে৷
বেরিয়াট্রিক সার্জারি করে যে শুধু ওজন কমানো যায় এমন নয়৷ আনুষঙ্গিক অসুখও নিমেষে সেরে যায়৷ বিশেষ করে ওবেসিটির কারণে যাঁরা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁরা বেরিয়াট্রিকের সঙ্গে আইলিয়্যাল ইন্টারপজিশন করিয়ে নিলে ইনসুলিন, ওষুধের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন৷ কারণ, অপারেশনের পরেই ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ কমে যায় উচ্চ-রক্তচাপও৷
বেরিয়াট্রিক সার্জারি কী?
ওবেসিটি আক্রান্ত রোগী, যাঁরা ডায়েট, এক্সারসাইজ করেও ওজন কমাতে পারছেন না তাঁদের বেরিয়াট্রিক সার্জারি করে ফ্যাট কমানো হয়৷ ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতিতে প্রথমে পাকস্থলীর কিছু অংশ কেটে তার খাদ্য ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে ক্ষুধা হরমোন বের করে দেওয়া হয়৷ একে স্লিভ গ্যাসট্রেকটমি বলে৷ এই অপারেশনের পর অনিয়মিত জীবনযাপন করলে ফের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়৷ গ্যাসট্রিক বাইপাস করেও বেরিয়াট্রিক সার্জারি করা যায়৷ এতে চটজলদি ওজন কমলেও এবং ভবিষ্যতে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও খাবার হজমে অসুবিধা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা হতে পারে৷ তাই স্লিভ গ্যাসট্রেকটমি করিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা ও একটু ডায়েট মেনে চললে পুরো ফিট থাকা যায়৷ অপারেশনের পর শরীরের বাকি ফ্যাট আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়৷ কাটিং ও স্ট্রেপলিং পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয়৷ তাই সেলাইয়ের দাগ থাকে না৷ তবে ওজন কমার পর চামড়া ঝুলে গেলে কসমেটিক সার্জারি করে ত্বক আগের মতো টানটান করা যায়৷
গ্যাসট্রিক বেলুন:
বেরিয়াট্রিক সার্জারির একটি অংশ৷ খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমানোর প্রয়োজন থাকলে গ্যাসট্রিক ব্যান্ডিং বা বেলুনিং পদ্ধতিতে সার্জারি করা যায়৷ এ ক্ষেত্রে পাকস্থলীতে বেলুন ঢুকিয়ে পাকস্থলী ছোট করে দেওয়া হয়৷ এর ফলে রোগী খাবার কম খেতে পারেন৷ তিন মাসের মধ্যে প্রায় ২০ কেজি ওজন কমানো যায়৷ চাকরি বা বিয়ের জন্য দ্রুত রোগা হতে চাইলে এভাবে টেম্পোরারি ওয়েট লস করা যায়৷ তবে এক বছরের মধ্যে পাকস্থলী থেকে বেলুন করে নেওয়া উচিত৷ তাই খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ বা ব্যায়াম না করলে ফের মোটা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়৷
বেরিয়াট্রিকের পর লাইফস্টাইল:
• সার্জারির পর তিন-চারদিনের মধ্যে রোগী পায়ে হেঁটে বাড়ি যান৷ রোগীকে প্রথম এক মাস তরল খাবার দেওয়া হয়৷ তারপর তিন মাস গলা ভাতের মতো অর্ধতরল খাবার খেতে হয়৷ দিনে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা অন্তর খেতে হবে৷ প্রতিবার ১০০-১৫০ সি.সির বেশি খাওয়া চলবে না৷ এরপর ধীরে ধীরে নর্মাল খাবার অল্প পরিমাণে খেতে শুরু করা যায়৷
• খাবার ইচ্ছা ও ক্ষমতা আগের চেয়ে কমে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় রোগী বেশি খেতে পারেন না৷ এমনি কোনও খাবারে বারণ নেই৷ তবে অতিরিক্ত খাওয়া চলবে না৷ তাহলে গ্যাসট্রিক, বদহজমের সমস্যা হতে পারে৷ ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল, মশলার খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল৷ সাঁতার, হাঁটা বা অল্প এক্সারসাইজ করতে হবে৷
• ছ’মাস পর্যন্ত মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন বি ৩ সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়৷
• সার্জারির পর প্রথম মাসে ছয়-সাত কেজি ওজন কমবে৷ এর পরের ছ’মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে চার-পাঁচ কেজি করে ওজন কমে৷ অর্থাৎ সাত মাসের মধ্যে রোগীর প্রায় ৪০ কেজি ওজন কমে যায়৷
• সার্জারির পর ১৫ দিন বাড়িতে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে৷ তারপর কাজে যোগ দেওয়া যায়৷
মেডিক্লেম:
এতদিন বেরিয়াট্রিক সার্জারিকে কসমেটিক সার্জারির অংশ হিসাবে ধরা হত৷ তাই মেডিক্লেম সংস্থাগুলি রোগীদের অপারেশন সংক্রান্ত খরচ দিত না৷ কিন্তু যদি রোগী নিজের অসুখের জন্য এই অপারেশন অত্যন্ত জরুরি বলে কোম্পানিগুলির কাছে প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে মেডিক্লেমের মারফত সার্জারির খরচ পাওয়া যায়৷ এই সার্জারি না করালে ডায়াবেটিস, প্রেশার বা হার্টের অসুখের মতো জটিল অসুখে আক্রান্ত হয়ে রোগীর প্রাণে বাঁচা সংশয় হয়ে যাবে বলে জানাতে হবে সংস্থাকে৷ বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারও বেরিয়াট্রিক সার্জারিকে মেডিক্লেমের আওতায় আনার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছে৷
আরও জানতে ফোন করুন ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ডা. সুরেন্দ্র উগালে ও অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট ডা. তাপস চক্রবর্তীকে। ডা. সুরেন্দ্র উগালেকে যোগাযোগ করতে হবে 9830042025 নম্বরে। আর ডা. তাপস চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলতে হলে ডায়াল করুন 9831001311। এছাড়া ক্লিক করে দেখে নিন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.