জিনিয়া সরকার: উচিত নয়, মন জানে৷ তবু টেনে নিয়ে যায় শরীরকে৷ অথবা শরীর চাইছে, কিন্তু মনের সায় নেই৷ প্রাপ্তবয়স্কের সমস্যা৷ এসবের পিছনে কি কলকাঠি নাড়ছে হরমোন?
হরমোনের সমস্যায় কী কর্তব্য:
• শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোন এনার্জি ঠিক রাখতে সাহায্য করে৷ থাইরয়েড হরমোনের অভাব হলে সেক্সুয়াল ডিসফাংশন দেখা যায়৷
• ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ থাকলে হরমোনের সমস্যা হতে পারে৷ যার প্রভাব পড়ে শারীরিক চাহিদার উপর৷ বিভিন্ন ওষুধের সাইড এফেক্ট থেকে এই সমস্যা হয়৷
• পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা হলে হরমোন ঠিকঠাক নিঃসৃত হয় না৷ কম মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ মহিলাদের যৌনজীবনে সমস্যা ডেকে আনে৷
• বিভিন্ন হরমোনের অসামঞ্জস্য অতিরিক্ত হয়ে গেলে ওষুধ দিয়ে তা ঠিক করা হয়৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের আগে পর্যন্ত এই ওষুধ দেওয়া হয়৷ পুরুষদের স্পার্ম তৈরি ও যৌনজীবন ঠিক রাখতে এই ডোজ দেওয়া হয়৷
মনের প্রভাব হরমোনের উপর:
• অতিরিক্ত ডিপ্রেশন, মানসিক চাপ থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই কমবয়সি মহিলাদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়৷ পরীক্ষার চাপ, দুশ্চিন্তা থাকলে তার প্রভাব পড়ে পিটুইটারি গ্রন্থিতে৷ এই পিটুইটারি গ্রন্থি গর্ভাশয়কে পরিচালনা করে৷ মনের প্রভাব পড়লে এই গ্রন্থি বিভিন্ন হরমোনের মাত্রাকে দমিয়ে রাখে যা থেকে হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়৷
• মনের উপর শারীরিক মিলনের ইচ্ছা অনেকাংশেই নির্ভরশীল৷ মানসিক চাপ বা হঠাৎ কোনও ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব মনের উপর পড়ে৷ তখন হরমোনের পরিবর্তন ঘটে৷ মেয়েদের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে কর্টিজল হরমোন নিঃসৃত হয়, এর মাত্রাও বেড়ে যায়৷ অ্যাড্রিনাল হরমোনের মাত্রাও বেড়ে যায়৷ তাছাড়া পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে অন্যান্য হরমোনও বেশি নিঃসৃত হয়৷ এর প্রভাব পড়ে শরীরে৷ কিছু হরমোনের মাত্রা কমেও যায়৷ যেমন, থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন৷
হরমোনের প্রভাব মনের উপর:
ছেলে-মেয়েদের বয়ঃসন্ধিক্ষণে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে৷ এর ফলে মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন হয়৷ এক্ষেত্রে হরমোনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব মনের উপর পড়ে৷ মহিলাদের মেনোপজ হলে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে৷ ওভারির কার্যক্ষমতা কমে যায়, তার প্রভাব পড়ে মনের উপর৷ তবে মেনোপজের জন্য মনের সমস্যায় ভোগেন ২০-২৫ শতাংশ মহিলা৷ ইস্ট্রোজেনের অভাবের জন্য ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (এফএসএইচ), লিউটেনাইজিং হরমোনের (এলএইচ) মাত্রা বেড়ে যায় বলে মানসিক চাপ, অবসাদ, অতিরিক্ত রাগ হয়৷
কী করবেন:
স্ত্রী, সন্তানের ইতিবাচক দিকগুলিকে বেশি গুরুত্ব দিন৷ মাঝে মধ্যে স্ত্রীর জন্য ছোট উপহার নিয়ে আসুন৷ চেষ্টা করুন সারপ্রাইজ দিতে৷ ছুটির দিনে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চেষ্টা করুন৷ ঘুরতে যান৷ ব্যস্ততার মধ্যেও সপ্তাহে নিজের জন্য সময় বার করুন৷ টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য রুটিন তৈরি করুন৷ নিজের জীবনের নীতি-দর্শন বজায় রেখে চলার চেষ্টা করুন৷ কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই শর্টটার্ম, মিডটার্ম, লংটার্ম অবস্থা অনুযায়ী ভাবুন৷ স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া জরুরি৷ নিয়মিত এক্সারসাইজ দরকার৷ প্রয়োজনে ধ্যান করুন৷
কখন ঝুঁকি:
টিন-এজারদের ক্ষেত্রে হঠাৎ পড়াশোনায় অবনতি, উদ্ধত হাবভাব, মিথ্যে কথা বলা, টাকার চাহিদা, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ঘুমানো, খারাপ কথার ব্যবহার, ড্রাগের প্রতি আসক্তি, একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত (শারীরিক, মানসিক) হওয়া, পর্নোগ্রাফি, টিভি দেখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, অবসাদে ভোগা- এ সবই ঝুঁকির লক্ষণ!
আরও জানতে এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. শুভঙ্কর চৌধুরিকে ফোন করুন এই নম্বরে- 033 2440 4260। ক্লিক করে দেখে নিন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.