অন্দরের সাজ, আলোর ব্যবহার, ঘরদোরের নকশা-কারুকাজের যাবতীয় নিয়ে গৃহসজ্জার এই কলাম। এবার স্নানঘরের ভোলবদল নিয়ে আলোচনা করলেন ইন্টিরিয়র ডিজাইনার সুদীপ ভট্টাচার্য।
- দিনশেষে এই গরমে বাড়ি ফিরে একটা আরামের স্নানের ঠিকানা স্নানঘর। কিংবা বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দারুণ একটা ঠান্ডা ঠান্ডা স্নান।
- যেখানেই যাই না কেন, আমরা, সেটা বেড়াতে কিংবা কারও বাড়িতে, আমাদের মনের মধ্যে একটা খোঁজ সবসময়ই চলতে থাকে স্নানঘর কেমন তা নিয়ে? বাথরুমের অবস্থা নিয়ে আপস করতে কিন্তু কম মানুষই চান। অনেক বাড়ি রয়েছে, যা খুবই সাধারণ কিন্তু বাথরুমের সজ্জায় প্রশংসার দাবি রাখে।
- বাথরুমের দুটো চরিত্র আছে। দুটো জোন আছে বলা যেতে পারে। সেটা হল, ওয়েট জোন এবং ড্রাই জোন। আর সত্যি কথা বলতে কী, আমরা ঠিকমতো এই দুটো জোনের পার্থক্য বুঝি না। তাই ভিজে, স্যাঁতসেঁতে বাথরুম ব্যবহার করে চলি দিনের পর দিন।
- বাথরুমে ওয়েট জোন বা ভিজে অংশটার জন্য দায়ী জলের ব্যবহার। কখনও কাপড় কাচা, কখনও স্নান- এ সবের সময় প্রায় পুরো বাথরুমটাই ভিজে যায়। তাই যদি স্নানের জায়গাটা দেওয়ালের একেবারে শেষের দিকে হয়, তা হলে চেষ্টা করবেন ভারী প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে শাওয়ারের জায়গাটাকে আলাদা ভাবে ঘিরে দিতে। যাতে স্নানের সময় জল বাইরে আসতে না পারে।
- শাওয়ার কিউবিক্ল, কিংবা বাথটব অথবা জাকুজি- এদিক থেকে সেরা বিকল্প। ইচ্ছে করলে এবং বাথরুম যদি বেশ বড় হয়, তবেই বাথরুমে একটা শাওয়ার কিউবিক্ল লাগিয়ে নিতে পারেন এই সময়। খরচ খানিক বেশি। মন ভাল করা স্নানের জায়গা পাবেন।
- শাওয়ার কিউবিক্ল লাগাতে খুব বেশি জায়গা লাগে, এমনটা নয়। মোটামুটি পনেরো-ষোলো স্কোয়্যার ফুট পেলেই হয়। তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু পুরো বাথরুমের মাপটা অন্তত ষাট থেকে সত্তর স্কোয়্যার ফুটের মতো হওয়া চাই। এছাড়াও শাওয়ার প্যানেলের অনেক বিকল্প রয়েছে। আলাদা করে শাওয়ার প্যানেল লাগিয়ে নিতে পারেন দেওয়ালে।
- টপ শাওয়ার ব্যবহার করতে পারেন। এতে শাওয়ার স্পিড কন্ট্রোল করা যায়। ওয়ালের শাওয়ারের থেকে টপ শাওয়ারের স্নান আরামদায়ক।
- বাথরুমে চেষ্টা করবেন সিলিং ফ্যান কিংবা ওয়াল ফ্যান লাগাতে। ওয়াল ফ্যান লাগালে উচ্চতাটা একটু দেখে নেবেন, যাতে কোনও ভাবেই জল না লাগতে পারে।
[ আরও পড়ুন: ভাঙা সিংক মেরামতিতে নুডলসই যথেষ্ট, কীভাবে জানেন? ]
- পাখা লাগালে খুব গরমে যেমন নিজেদেরও আরাম লাগবে, তেমনভাবেই ভিজে বাথরুমের মেঝেও শুকিয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।
- সামান্য বড় মাপের বাথরুম হলে এবং শাওয়ারের জায়গাটা পর্দা দিয়ে আটকানো থাকলে, ছোট্ট একটা ক্যাবিনেট বানিয়ে নিতে পারেন। ক্যাবিনেটের ওপরে বেসিন টপ রাখতে পারেন কিংবা আলাদা করে দেওয়ালেও সেট করে নেওয়া যেতে পারে।
- ক্যাবিনেটে যেন কোনওভাবেই জল না লাগে এবং যাতায়াতের পথে বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
- ক্যাবিনেটে জল লাগার কোনও সম্ভাবনা থাকলে ট্রান্সপারেন্ট অ্যাক্রিলিক শিট লাগিয়ে নিতে পারেন।
- বাথরুমের আসল সমস্যাটা হচ্ছে ড্রাই আর ওয়েট জোন আলাদা না হওয়া। শাওয়ার এলাকাটা শেষ প্রান্তে হলে সুবিধা। এমনি ফ্লোরের থেকে সামান্য নিচু হলে জল বাকি মেঝেতে ছড়িয়ে যাবে না। এক্ষেত্রে অ্যাক্রিলিক কার্টেন ব্যবহার করবেন।
- ডব্লু-সি বা কমোড পছন্দ অনুযায়ী লাগান। ওয়াল মাউন্টেড কমোড নানান ডিজাইনের পাওয়া যায়। ডাইরেক্ট জলের লাইন থেকে ফ্ল্যাশ হয়।
- যদি জলে বেশি পরিমাণে আয়রনের সমস্যা থাকে, তাহলে আয়রন ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন সাপ্লাই লাইনে।
- ফ্ল্যাট হলে আলাদা আয়রন ফিল্টার লাগিয়ে নিতে পারেন। কিংবা নিজের জলের সাপ্লাই লাইনের বাইরেও আলাদা করে আয়রন ফিল্টার লাগিয়ে নেওয়া যায়।
- রঙের ক্ষেত্রে অফ হোয়াইট, কিংবা অ্যাপেল হোয়াইটটাই স্নানঘরের জন্য সেরা। কারণ বাথরুমে ডোর হাইট পর্যন্ত কিংবা সিলিং ছোট হলে পুরো সিলিং পর্যন্তই টাইল্স দিয়ে দেওয়া ভাল।
- বাথরুমের ফ্লোরিং মার্বেলের করাই সবচাইতে ভাল। তবে চেষ্টা করবেন যাতে মার্বেলের সাইজ ছোট না হয়। যত বড় স্ল্যাব হবে, তত ভাল। ছোট স্ল্যাব হলে জয়েন্ট কম হয়। আর বাথরুমের ক্ষেত্রে যত মার্বেল জয়েন্ট কম হবে, তত ভাল। কারণ পরবর্তী সময়ে হলেও মার্বেল জয়েন্ট থেকে জল লিক করার একটা চান্স থেকে যায়।
- বাথরুমে লাগানোর জন্য এখন বেশ ভাল কোয়ালিটির ফ্লোর টাইল্স পাওয়া যায়। রাফ ফিনিস। দেখতেও বেশ চমৎকার। তবে ড্রাই বাথরুম হলেই টাইল্স ব্যবহার করা ভাল।
- বাথরুমের বেসিন কাউন্টার গ্র্যানাইট, কিংবা কাচ বা মার্বেলের হতে পারে। আজকাল ছোট ছোট ফাইবার বডির ক্যাবিনেট পাওয়া যায়, সেটাও ব্যবহার করা যেতে পারে। কাউন্টারের ওপরে সেরামিক কিংবা গ্লাসের বেসিন বেশ মানানসই। বেসিনের ওপরে আয়না লাগানো থাকবে। সরাসরি আয়না দেওয়ালে না লাগিয়ে একটা প্লাইয়ের ওপরে মিরর সেট করে সেটা দেওয়ালে লাগালে ভাল। আয়নার চারপাশটায় ফ্রেমিং করে দিতে পারেন। দেখতে বেশ ভালই লাগবে।
- প্লাস্টিক বা অ্যাক্রিলিক শিটের তৈরি অনেক মিরর ক্যাবিনেট পাওয়া যায়। বিভিন্ন দামের, নানান কোয়ালিটির। বাথরুমের সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলিয়ে এ ধরনের ক্যাবিনেট ব্যবহার করতে পারেন।
- স্নানঘরে লাইটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করুন। ওয়ার্ম লাইটস ব্যবহার করলে একটা আলাদা ব্রাইটনেস আসবে।
- আয়না যেন বড় মাপের হয়, সেদিকে নজর দিন। আয়না ওয়ালে ফিট করার সময় উচ্চতার অনুপাত মাথায় রাখুন।
- ডিফিউজার বা রিড ডিফিউজার ব্যবহার করতে পারেন। এতে স্নানঘরে ছড়িয়ে পড়বে সুগন্ধ। পরিবর্তে এয়ার ফ্রেশনারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- শেল্ফে বা ক্যাবিনেটের পাশে জায়গা থাকলে একটি ছোট গাছ যেমন ধরুন সাকিউলেন্ট রাখুন।
- ওয়াল মাউন্টেড শেল্ফের পাশাপাশি দেওয়াল ফুটো না করে সুদৃশ্য বাথরুম ক্যাডি লাগানো যেতে পারে, তাতেও স্টোরেজ সমস্যা মিটে যাবে।
[ আরও পড়ুন: অতিথিদের চমকে দিতে চান? এভাবেই সাজিয়ে ফেলুন বাড়ির সদর দরজা ]