বাড়ি বানালে বা ফ্ল্যাট কিনলেই হল না। মানতে হবে কিছু শাস্ত্র। লিখেছেন রিংকি দাস ভট্টাচার্য।
শাস্ত্র কি কিছু কম পড়িয়াছে?
– বোধহয় না। এখন বাস্তুতে শান্তি বিরাজমান রাখতে গেলেও শাস্ত্রের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বইকি। তাই বাস্তুশাস্ত্রের এত রমরমা। তা নিয়ে এত মাতামাতি। বাজার সবসময় ক্রেতার মন জুগিয়ে চলে। তাই বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থাও এখন বিজ্ঞাপনে ফলাও করে লিখছেন, ‘বাস্তু কমপ্লায়েন্ট’ বা ‘বাস্তুশাস্ত্র মেনে তৈরি।’ কিন্তু সেটা কী জিনিস? কোথায় পাবো তারে? তাছাড়া বড় ঘর কেনার ক্ষমতা থাকলে তো চাপ নেই। কিন্তু ছোট ঘরকে বড় দেখাব কী করে? কেমনে তারে সাজাব যতনে?
‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়’। গানের কথার মতো আজকাল ছোট হয়ে যাচ্ছে আমাদের বসতবাড়ির সংজ্ঞা। অর্থাৎ ছোট ছোট পরিবারের জন্য তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট ফ্ল্যাট। অল্প জায়গা, তাতে কী! সুন্দর পরিকল্পনা আর রুচিশীল মননের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার ছোট ফ্ল্যাটটি। ইনটেরিয়র ডিজাইন বা বড় বাজেট নয়, প্রয়োজন শুধু সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং বাস্তু মেনে সাজানো।
বাস্তুবিদ্যা হল এমন একটি বিষয়, যার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে বানানো বা সাজানো যে কোনও বাড়িতে আনা যেতে পারে সুস্বাস্থ্য ও শুভফল। বাস্তুশাস্ত্র হলো এক সুপ্রাচীন স্থাপত্য বিষয়ক ফলিত ও কারিগরি বিদ্যা। এর ভিত্তি ছিল সুপ্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভৌগোলিক অবস্থা ও জলবায়ুতে। সনাতন ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদের অংশবিশেষ হল এই বাস্তুশাস্ত্র, যা ৪,৫ হাজার বছরের প্রাচীন। অথর্ব বেদের একটি অংশ হল ‘স্থাপত্য বেদ’। এই স্থাপত্য বেদ থেকেই বাস্তুবিদ্যা বা স্থাপত্য বিজ্ঞানের অবতারণা। মূলত হিন্দু মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপত্যগুলো এই রীতিতে নির্মিত হলেও বিশাল প্রেক্ষাপটে তা গৃহনির্মাণেও ব্যবহৃত হত।
‘বাস্তু’ শব্দটি এসেছে ‘বস্তু’ থেকে। বস্তু মানে যে কোনও বস্তু। মূলত বাস্তু বলতে সব কিছুকেই বোঝায়। তা একটি স্থান হতে পারে কিংবা একটা বাড়িও হতে পারে। বাস্তুশাস্ত্রের নিয়মগুলো পড়লেই বোঝা যাবে, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে আমরা যদি আমাদের বাসস্থান বা কর্মস্থলের নকশা তৈরি করি, তা হলে সেখানকার বাসিন্দা বা কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং জীবন কাটবে সুখে, শান্তিতে।
[ বাড়ির সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে অবসর সময়ে ফলের বাগান, রইল কয়েকটা টিপস ]
প্রাচীন এই বাস্তুশাস্ত্রে ষোলোটি কক্ষ ও মাঝখানে উঠোনযুক্ত বাড়িকে উত্তম মনে করা হয়েছে। পূর্বদিকে স্নানাগার ও জলাধার হবে। অগ্নিকোণে রান্নাঘর, বৈদ্যুতিক সাজসরঞ্জাম রাখার ঘর করতে হবে। উত্তরে দামি বা বহুমূল্য জিনিসপত্র রাখার ভাণ্ডার ও ধনসম্পদ রাখা যেতে পারে। অগ্নিকোণে (দক্ষিণ-পূর্ব) ও পূর্বদিকের মাঝখানে ঘি, তেল, দধিমন্থনে ঘর হওয়া উচিত। এই ধরনের বাড়িকে উত্তম বলা হয়েছে। পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর হবে। পশ্চিম ও নৈর্ঋত (দক্ষিণ-পশ্চিম) দিকের মাঝখানে পড়ার ঘর অথবা অতিথি কক্ষ করা উচিত। নৈর্ঋত দিকে জুতো রাখতে হবে। নৈর্ঋত ও পশ্চিম দিকের মাঝখানে শৌচাগার নির্মাণ করা যেতে পারে। পশ্চিম দিকে ছোট ছেলেমেয়েদের থাকার ঘর করা উচিত। কিন্তু আধুনিক যুগে টাকা এবং সময়ের কথা ভেবে বসতবাড়ির জন্য বেশিরভাগ মানুষই প্রোমোটারের উপর নির্ভরশীল। সেক্ষত্রে স্থান-দিক-কাল না মিললেও বাস্তু মেনে বাড়ি সাজিয়েও আপনি সমান লাভবান হতে পারেন। যেমন…
বারান্দা
উত্তর ও পূর্ব দিকে করতে হবে বারান্দা। বারান্দার ছাদের স্তর বাড়ির ছাদের স্তরের এক সমান যেন না হয়। বারান্দার উত্তর-পশ্চিম দিকে জুতো রাখার জায়গা করা যেতে পারে।
খাওয়ার ঘর
খাওয়ার ঘরের অবস্থান নির্ভর করছে রান্নাঘরের অবস্থানের উপর। আদর্শ রান্নাঘর হিসাবে যদি দক্ষিণ-পূর্বে রান্নাঘরের অবস্থান হয়, তবে পূর্বদিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত। এবং যদি উত্তর-পশ্চিমে রান্নাঘর হয় তবে পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত। খাওয়ার টেবিল অবশ্যই আয়তাকার হওয়া উচিত। গোল বা ছয় কোণযুক্ত টেবিল না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। খাওয়ার ঘরের দক্ষিণ-পূর্বে বা উত্তর-পশ্চিমে রেফ্রিজারেটর রাখা উচিত এবং উত্তর-পূর্বে খাওয়ার জল, জলের ফিল্টার ও বেসিন রাখতে হবে।
বসার ঘর
বাড়ির এবং অতিথিদের বসার ঘর হবে পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিকে। বাড়ির কর্তা পূর্ব বা উত্তর দিকে চেয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করবেন। বসার জায়গাগুলো এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে অতিথি পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে কথা বলেন এবং বাড়ির কর্তা পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে থাকবেন। এতে বাড়ির কর্তা এবং অতিথি, উভয়ের পক্ষে শুভ।
পড়ার ঘর
উত্তর বা পশ্চিম দিকের ঘরে পড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু পড়ার সময় অবশ্যই পূর্ব বা উত্তর দিকে তাকিয়ে পড়াশোনা করা উচিত। পড়ার টেবিলের ঢাকা বা টেবিল ক্লথ যদি হালকা সবুজ রঙের হয় তবে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। মনোবিজ্ঞানীদের তথ্য থেকেও এটা প্রমাণিত। পড়ার ঘরের দরজা উত্তর-পূর্ব দিকে হলে ভাল হয়।
[ অন্তর্বাস পরিষ্কার করবেন কীভাবে? ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.