‘সে যে চমকে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায়, যায় না তারে বাঁধা’! তবুও সোনার হরিণ তো সকলেরই চাই, তাই না? এই ভূ-ভারতে কনক-কাঞ্চনের ‘কদরদান’ কে নয়, বলতে পারেন? তবে জানেন কি, সোনায় আপনি নানা, আধুনিক পদ্ধতিতে লগ্নি করতেও পারেন! তা-ও আবার, নির্ঝঞ্ঝাটে এবং নিশ্চিন্তে। এদের অন্যতম হল ‘সভারিন গোল্ড বন্ড’। তবে হ্যাঁ। এই ‘সোনা’ কিন্তু সেই ‘সোনা’ নয়! মানে ‘গোল্ড বন্ড’য়ে সোনার কোনও বস্তুনিষ্ঠ অস্তিত্ব নেই। তাই লকারের সুরক্ষিত ডেরায়, অতি সন্তর্পণে রেখে দেওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। তথ্য দিলেন নীলাঞ্জন দে।
সোনা নিয়ে তো আমরা সকলেই কমবেশি উৎসাহী! তাই না? তার উপর আবার দেশজোড়া চাহিদার ভিত্তিতে সোনার দামের (Gold Price) সাম্প্রতিক উত্থানও সকলকে ভাবতে বাধ্য করেছে। এই খবরে বহু বিনিয়োগকারী উল্লসিত হয়েছেন। কারণ বিক্রির সুযোগ মিলেছে। তবে অনেকেই আবার নতুন উদ্যোগে, নতুন উদ্যমে সোনা কিনতে তৎপর হয়েছেন। অবশ্য এসব ভারতীয়দের কাছে নতুন কিছু নয় – সেই আদিকাল থেকে আমরা সোনা (Gold) কিনছি, গয়না গড়াচ্ছি, ব্যাংকের ভল্টে গচ্ছিত রাখছি, ভালবাসার মানুষকে বিশেষত, পরের প্রজন্মকে উপহার হিসাবে দিচ্ছি।
এ তো গেল সাবেকি সোনা কেনা-বেচা এবং জমা রাখার ইতিবৃত্ত। আধুনিক, নব্য যুগের যুবক-যুবতীরা কিন্তু সোনায় লগ্নি করতে চান অনেক স্বচ্ছভাবে, সহজ পথে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য, ‘সভারিন গোল্ড বন্ড’ (Sovereign Gold Bond)। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এখানে সোনার কোনও ‘ফিজিক্যাল’ তথা বস্তুনিষ্ঠ উপস্থিতি নেই। অর্থাৎ একতাল সোনা কেনার প্রশ্নই ওঠে না। তাই, অতি সাবধানে লকারে রেখে দেওয়ার ঝামেলাও নেই। আরও অন্যান্য ধরনের সমস্ত বন্ডের মতো, একেও স্টক এক্সচেঞ্জে ‘ট্রেড’ করা যায়। আবার এটি হস্তান্তরযোগ্যও (ট্রান্সফারেবল) বটে। তবে তাছাড়াও এর বহুবিধ সুবিধা আছে। সে সবই তুলে ধরছি এই বিশ্লেষণে। গোল্ড বন্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখুন, পরবর্তীতে সুবিধা হবে।
যে তথ্য না জানলেই নয় –
১. বিনিয়োগকারী শেষবারের সুদটি পাবেন ম্যাচিউরিটি ভ্যালুর সঙ্গে, যা সরাসরি তাঁর ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট করা হবে।
২. সোনার মান নিয়ে দ্বিমতের কোনও অবকাশ নেই। তাই এই সভারিন গোল্ড বন্ড কেনার পদ্ধতি অনেক অংশেই স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য।
৩. রিডেম্পশন ভ্যালু সোনার দামের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সঙ্গতিপূর্ণ।
৪. ক্যাপিটাল গেন্সের উপর কোন ট্যাক্স নেই। (যদি আপনি ম্যাচিউরিটি পর্যন্ত ধরে রাখেন)।
৫. অনলাইনে কেনার সুবিধা রয়েছে। পরের ইস্যুর জন্য ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করাই শ্রেয়।
মনে করুন, শুধুমাত্র গোল্ড বন্ড কিনেই আপনি সন্তুষ্ট হলেন না, খালি ভাবছেন আরও কী করে সোনায় বিনিয়োগ করতে পারবেন? এক্ষেত্রে আপনি ‘গোল্ড ফান্ডে’ লগ্নির কথা ভাবুন। এখানে নিয়ম-কানুনগুলি অন্যান্য আরও পাঁচটা মিউচুয়াল ফান্ডের মতোই। উল্লেখ্য, আমি কিন্তু গোল্ড ইটিএফের কথা বলছি না।
তবে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন-
১. এখানেও কোনও ‘ফিজিক্যাল’ গোল্ড নেই। সাধারণ ফান্ডের মতোই কিনতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক থেকে টাকা ডেবিট হয়ে ইউনিট কেনা হবে।
২. সোনার দামের সঙ্গে যুক্ত। রিডেম্পশানের সময় যদি সোনার দর বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আপনার লগ্নি সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে যাবে।
৩. যদি আপনার হোল্ডিং পিরিয়ড তিন বছরের নিচে হয়, তাহলে লাভ শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস হিসাবে গণ্য
করা হবে।
(লেখক লগ্নি-বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.