বর্ণিনী মৈত্র চক্রবর্তী: প্রবল জল সংকট। সমীক্ষা বলছে, ২০৩০-এর মধ্যে ভারতে প্রায় একুশটি শহরে জল থাকবে না। জলস্পর্শ না করে তো আর দিন চলবে না, কিন্তু একটু সাবধানে চললে সাশ্রয় সম্ভব। রইল তারই কিছু উপায়।
একটি ছেলে খুব করে সাবান মেখে চলেছে। তার মা তাকে বাইরে থেকে বলেই যাচ্ছে জল চলে যাবে। কিন্তু সে কর্ণপাত না করে র্যাপ মিউজিকের সঙ্গে নেচেই চলেছে। হঠাৎ জল শেষ… সে মাকে ডাকে। মা বাইরে থেকে বলছেন, ‘রাহুল ম্যায়নে কাহা থা না পানি চলা জায়েগা!’ একটি সাবানের বিজ্ঞাপন ছিল এটি। গত কয়েকদিনে যেভাবে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে, তথাকথিত হাইটেক শহরে জলের হাহাকার, তাতে মনে হচ্ছে বার বার সতর্কীকরণ সত্ত্বেও মানুষের জল ব্যবহারে যথেচ্ছাচারে এবার জল বন্ধ ডেকেছে। এক বালতি জলের জন্য মানুষ যেভাবে হাহাকার করছে তা কিন্তু বেশ চিন্তার। যেভাবে বিভিন্নভাবে জল অপচয় করা হয়, তাতে এ ছিল অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু হাল ছাড়লে চলবে কেন? এখনও সময় আছে, চলুন নিজেদের পালটাই।
[আরও পড়ুন: অন্দরসজ্জায় পর্দা আনতে পারে চমক, ভেবেচিন্তে বেছে নিন]
ঘরদোর
রোজ রোজ ঘর না মুছে ভ্যাকিউম করে নিন। এতেও ঘর পরিষ্কার হয় ভাল। গাড়ি ধোয়ার সময় পাইপ ব্যবহার না করে বালতি করে জল নিন। বাগানের ক্ষেত্রেও এক। পাইপ ব্যবহার না করে জলের ঝাঁজরি ব্যবহার করুন। একগাদা জলের বোতল ভরে রাখবেন না। ব্যবহার তো হয়ই না, পরের দিন সমস্ত জল ফেলে দিতে হয়। টয়েলেটের ফ্লাশে ব্যবহৃত টিস্যু বা স্যানিট্যারি ন্যাপকিন ফেলবেন না। এগুলো ডিসপোজ করতে প্রচুর জল লাগে। তরকারি বা চাল ধোয়ার জল গাছে দিতে পারেন। এসি থেকে যে জল বেরোয়, তা ঘর মোছা বা গাড়ি ধোয়ার মতো কাজে ব্যবহার করতে পারেন। বাড়ির সিঁড়ি-উঠোন বালতির পর বালতি জলে না ধুয়ে, ঝাঁটা দিয়ে ঘষে নিন। সবশেষে জল ব্যবহার করুন।
রান্নাঘর
তরকারি কেটে ডাস্টবিনে না ফেলে জমিয়ে রাখুন। গাছের গোড়ায় দিন। ভাল সার হবে। ডাস্টবিন রোজ না ধুলেও চলবে। প্রচুর জল লাগে ডাস্টবিন ধুতে। অন্যথা প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে রাখুন ডাস্টবিনে। রোজ রোজ ধুতে হবে না। বাসন পরিষ্কার করার সময় জল খুলে রাখবেন না। রানিং ওয়াটারে বাসন না ধুয়ে, ধরা জলে ধুয়ে নিন। এতে প্রচুর জল সাশ্রয় হবে। তরিতরকারি, ফলমূল রানিং ওয়াটারে না ধুয়ে পাত্রে জল নিয়ে তাতে ধুয়ে নিন। একটু ভিজিয়ে ধুলে পরিষ্কারও হবে, আবার জলও সাশ্রয় করা যাবে। অযথা বাসন ব্যবহার করবেন না। যত বাসন বেরোবে, তত ধুতে হবে। মাঝে মাঝে ডিসপোজেবল প্লেট ব্যবহার করুন। মাছ বা মাংস রানিং ওয়াটারে না ধুয়ে, পাত্রে জল ঢেলে ধুয়ে নিন। প্রচুর জল বাঁচবে। অকারণে কল খুলে হাত ধোবেন না। ওয়াটার ফিল্টার করার সময় যে জল বেরিয়ে যায়, সেটা জমিয়ে রাখুন। ওই জল দিয়ে ঘর মোছা, বাসন মাজার কাজ সারতে পারবেন।বাসন ধোয়ার সময় স্পঞ্জ ব্যবহার করুন। কম জল লাগবে। বারেবারে বাসন না ধুয়ে একবারে একটা গামলায় সমস্ত বাসন নিয়ে মাজুন। কোনও একটা ডিজইনফেকট্যান্ট সলিউশন দিয়ে রান্নাঘর মুছতে পারেন। এতে পোকামাকড়ও কমবে, আবার জলও লাগবে না বেশি। তরকারি কাটার সময় একটা প্লাস্টিক বা কাগজ নীচে রেখে কাটুন। একবারে সব ফেলতে পারবেন। ধুতে হবে না।
[আরও পড়ুন: পরিবারে সুখ ও সমৃদ্ধি চান? ঘর রাঙিয়ে ফেলুন বাস্তু মতে]
শৌচালয়
সকালবেলায় উঠে ব্রাশ করতে করতে অযথা জলের ট্যাপটি খুলে রাখবেন না। প্রতি মিনিটে প্রায় ছয় লিটার জল সঞ্চয় করতে পারবেন। শেভিং করার সময়ও এটি প্রযোজ্য। সবসময় ফুল ফ্লাশ করবেন না। অথবা একটি সিস্টার্ন ডিসপ্লেসমেন্ট ডিভাইস লাগান, যাতে প্রতি ফ্লাশে ব্যবহৃত জল কমাতে পারবেন। না পেলে প্লাস্টিকের একটা বোতলে জল ভরে সিস্টানের্র মধ্যে ফেলে দিন। জল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্নানের জল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন। স্নান করতে প্রচুর জল খরচ করি আমরা। কল খুলে বালতির পর বালতি ব্যবহার করা বন্ধ করুন। শাওয়ার ব্যবহার করলে রেগুলেটর লাগান, এতে জল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ওয়াশিং মেশিন ফুল লোড করে চালান। প্রয়োজনে একদিন বাদে একদিন কাচাকুচি করুন। ওয়াশিং মেশিনের জল ফেলে না দিয়ে বালতি ভরে রাখুন। বাথরুমে এই জল ব্যবহার করতে পারেন। বাড়ির সমস্ত কল চেক করে নিন। কলের ছিদ্র দিয়ে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.