পৌষালী দে কুণ্ডু: আজকাল প্রায় প্রতি পরিবারেই কেউ না কেউ ভোগেন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যে শুধু বয়স্ক মানুষেরই হয়, তা কিন্তু নয়। অপেক্ষাকৃত কমবয়সিরাও ভুগতে পারেন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়। প্রতিকারের উপায় তাহলে কী?
কখন ঝুঁকি:
কম বয়সিদের রক্তচাপ ১২০/৮০ হলে ঝুঁকি বেশি৷ এতে ভবিষ্যতে রক্তচাপ বাড়ার প্রবণতা বেশি থাকে৷ তবে ৬০-এর কম বছর বয়সিদের রক্তচাপ ১৪০/৯০-এর নিচে রাখতে হবে৷ ১৪০/৯০-এর বেশি হয়ে গেলেই ওষুধ খেতে হয়৷
ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের প্রেশার ১৫০/৯০-এর নিচে রাখতে হবে৷ এর বেশি হলে ওষুধ খেতে হবে৷ রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে ডাক্তার দেখান৷ প্রয়োজনে ইসিজি করান৷
বয়স ৪০ হলেই ছ’মাস বা এক বছর অন্তর ব্লাড প্রেশার চেক করা অত্যন্ত জরুরি৷ মাথা ধরা, মাথা যন্ত্রণা, মাথা ঘোরা ব্লাড প্রেসার বাড়ার লক্ষণ৷ রক্তচাপ দু’ভাবে রেকর্ড করা হয়৷ সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক৷ হার্ট যখন পাম্প করে তখন সেটা সিস্টোল, যখন পাম্প ছাড়ে তখন তাকে বলে ডায়াস্টোল৷
নুন থেকে দূরে:
হাই প্রেশারের রোগীর সারা দিনে মাত্র ২ গ্রাম নুন খাওয়া উচিত৷ সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম পর্যন্ত খেতে পারেন৷ ধমনীর ভিতরে নুন জমে ধমনী মোটা হয়ে বুজে যায়৷ এই কারণেই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নুন খাওয়ার উপরে নজর রাখতে বলা হয়৷ তবে সবসময় তো এতটা কঠোরভাবে নুনের পরিমাণ মেপে রান্না করা যায় না৷ তাই রোগীর রান্নায় স্বাভাবিক মাত্রায় নুন ব্যবহার করা যেতেই পারে৷ কিন্তু পরে খাবারে আলাদা করে নুন দেওয়া চলবে না৷ খাবারে নুন কম লাগলেও কাঁচা নুন ব্যবহার করা যাবে না৷ কাঁচা নুন খাওয়া এড়াতে ডাইনিং টেবিল বা খাবার জায়গা থেকে নুনের কৌটো দূরে রাখুন৷
প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে:
১) নুন কম খান৷ কাঁচা নুন খাবেন না৷
২) প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে৷ নিয়মিত শরীরচর্চা করুন৷ সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন সকালে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন অথবা রোজ অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটুন৷ বডি মাস ইনডেক্স ২৫-এর কম রাখতে হবে৷
৩) মানসিক চাপ এড়াতে মন ভাল থাকে এমন কাজ করুন৷ ব্যস্ত শিডিউল থেকে সময় বের করে অন্তত ১৫ মিনিট ধ্যান করুন৷
৪) ডায়েটে রাখুন উদ্ভিজ্জ ফ্যাট, অলিভ অয়েল, ওমেগা অয়েল (ফিশ অয়েল), ভেজিটেবিল অয়েল৷ হাই ফ্যাট ডায়েট, প্রাণীজ ফ্যাট, তেলজাতীয় খাবার ও কার্বোহাইড্রেট বাদ দিন৷ কিডনির সমস্যা না থাকলে পটাশিয়ামযুক্ত ফল ও খাবার খান৷ অতিরিক্ত ভাজাভুজি ও জাঙ্ক ফুড খাবেন না৷
৫) মদ-পান, ধূমপান করবেন না৷
৬) বাবা-মায়ের হাই ব্লাড প্রেশার থাকলে ৩০ বছরের পর থেকেই বছরে একবার ব্লাড টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত৷
৭) কিডনি, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য সমস্যা থাকলে নিয়মিত হেল্থ চেকআপ জরুরি৷ প্রেশার হঠাৎ হাই হয়ে গেলে ক্ষতি মারাত্মক৷
৮) অতিরিক্ত লো প্রেশারের রোগী হলে বেশি করে জল খান৷
হার্ট অ্যাটাক থেকে সাবধান:
উপরের রক্তচাপ ২০০-এর বেশি ও নিচের রক্তচাপ ১৩০-১৪০ হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ বুকে চাপ, অতিরিক্ত ঘাম, বুকের মাঝে ব্যথা, অস্বস্তি, বুকে পাথর চাপার মতো অবস্থা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ৷ রোগী যত বেশি দিন ধরে হাই প্রেশারের সমস্যায় ভুগবেন, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি হয়৷
প্রেশারে ওষুধ:
রক্তচাপ বাড়লে তা নিয়ন্ত্রণ করার প্রথম উপায় জীবনযাপন ঠিক করা৷ খাওয়াদাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ, উদ্বেগ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ তবে ডাক্তার যদি ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন, তাহলে তা খেয়ে যেতে হবে৷ হঠাৎ ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আবার কিছুদিন বাদে খেতে শুরু করার অভ্যাস খুব খারাপ৷ লাইফস্টাইল ঠিক করে যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে তার চেয়ে ভাল আর কিছু হয় না৷ ডাক্তারের পরামর্শমতো হাই প্রেশারের ওষুধ খেতে হলে দেখে নেবেন ওষুধে যেন ডাইইউরেটিক উপাদান না থাকে৷ এটি শরীর থেকে জল বেশি করে বের করে দেওয়ায় সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায়৷
আরও জানতে আইএলএস হসপিটালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. পঙ্কজ সরকার ও মার্সি হসপিটালের জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এস এন বর্মনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আইএলএস হসপিটালের ফোন নম্বর- 033 4031 5000। মার্সি হসপিটালে ফোন করুন এই নম্বরে- 9163310022। এছাড়া ক্লিক করে দেখে নিন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.