বাড়িতে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা এটা-সেটা। DIY-এর কারিকুরি এবং তা থেকেই হরেক হস্তশিল্প। লেটেস্ট এই ট্রেন্ড নিয়ে বললেন রিংকা চক্রবর্তী।
‘DIY’, অর্থাৎ ডু ইট ইওরসেল্ফ। ওই যে বলে না, সেল্ফ হেল্প ইজ দ্য বেস্ট হেল্প! DIY-ও তাই। নিজে নিজে করো। কোনও পেশাদারি সাহায্য ছাড়াই যখন কোনও জিনিস আপনি বাড়িতে বানিয়ে ফেলছেন, সেটাকে DIY বলে। আর আপনি যদি হন সৃজনশীল মানুষ, তাহলে তো মিটেই গেল। ছোট ছোট জিনিস, অব্যবহার্য, যা পড়েছিল এতদিন ঘরের এককোণে, তা দিয়েই বানিয়ে ফেলুন আপনার ঘরের ক্রিয়েটিভ কর্নার! DIY মূলত একটা কনসেপ্ট। আপনার সৃজনশীলতা, কারিগরি দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তা থাকলে, ছোট ছোট কৌশল প্রয়োগ করে আপনিই পারবেন যে কোনও গেরস্থালির সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে। ইউটিউবে DIY সার্চ দিলে, ভরে যাবে একটার পর একটা ভিডিওতে। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন! আসলে এখন DIY নিয়ে এত মাতামাতি হলেও এই বিষয়টা কিন্তু আমাদের সনাতন।
মনে করে দেখুন, বাড়িতে ছোটখাট ইলেকট্রিকাল সমস্যা হলে বাড়ির বড়রা নিজেরাই নেমে পড়তেন মাঠে। কিংবা ধরুন তত্ত্ব সাজানো। এটা DIY ছাড়া আর কী! গামছা বা বেনারসি শাড়ি দিয়ে প্রজাপতি, নৌকা, ময়ূর। জাপানি হাতপাখার সঙ্গে কনের মাথার চেলি পেঁচিয়ে কোনও কাল্পনিক নকশা, মাছকে বা পুতুলকে শাড়ি পরিয়ে কনের রূপ দেওয়া, পালকি, ক্ষীরের প্রজাপতি – এগুলো সবই তো DIY। সরস্বতী পুজোয় কাগজ কেটে কেটে চেন বা ফুল বানানো হত ডেকরেশনের জন্য, মনে আছে? সেটাও DIY। দেখতে গেলে আমাদের রোজকার জীবনে এমন অনেক কিছুই রয়েছে, যেগুলোর আলাদা কোনও নাম বা কদর কোনওটাই ছিল না, ইন্টারনেটের দৌলতে সেগুলো এখন হট কেক।
১. অব্যবহার্য শাড়ি, ওড়না বা বেডশিট টেব্ল ম্যাট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে টেবলের মাপে সুন্দর করে কেটে নিন। একরঙা কিছু হলে তাতে অ্যাক্রিলিক কালার দিয়ে এঁকে নিন ফুল বা যে কোনও নকশা। আঁকা যদি আপনার বাঁয়ে হাত কা খেল না হয়, কুছ পরোয়া নেহি। ট্রেসিং পেপার দিয়ে নকশা কপি করে ছাপ ফেলে দিন কাপড়ে, ব্যস কেল্লা ফতে! সেই নকশার ওপর দিয়ে রং বুলিয়ে নিন। মুড়ে নিন কাপড়ের ধারগুলো। তৈরি টেব্ল ম্যাট।
২. আমাদের শিশুবেলার স্কুলের দিনগুলো মনে পড়ে? স্লেট,পেনসিলে কেমন ফটাফট লিখতাম আর মুছতাম! সেই স্লেটকেই এবার কাজে লাগান। স্লেটের ধারগুলো অ্যাক্রিলিক কালার (সাদা হলে ভাল লাগবে) দিয়ে রং করে নিন। এবার কোনও টেবিলের ওপর বা জুতসই কোনও জায়গায় রেখে দিন, যেখান থেকে ভালমতো দেখা যাবে। দিনের শুরুতে চক দিয়ে লিখুন কোনও পজিটিভ কোট। মোছার জন্য স্পঞ্জ ব্যবহার করুন, যেমনটা ঠিক আগে করতেন!
[সুস্থ থাকতে চাইলে বাড়িতে এই জিনিসগুলি ভুলেও রাখবেন না]
৩. আমাদের সবার বাড়িতেই পুরনো জামাকাপড়ের সুটকেস, ট্রাঙ্ক, স্কুলে নিয়ে যাওয়ার টিনের সুটকেস থাকে। সেগুলোতে একটু রং করে নিন। হলুদ, সাদা, ফিরোজা বা ফুশিয়া– চমৎকার লাগবে দেখতে। টিনের সুটকেসে যদি জং ধরে যায়, স্যান্ড পেপার দিয়ে ঘষে সেই জং তুলে ফেলুন। ব্যস আর কী! বড় সুটকেস বা ট্রাঙ্ক রেখে দিন মেঝেতেই, তার ওপরে এটা-ওটা সাজিয়ে রাখুন। ছোট টিনের সুটকেসটা কনট্রাস্ট কালারের হলে ওই বড় সুটকেসটার ওপরে রাখতে পারেন অথবা কোনও শোকেস বা টেবিলের ওপরও রাখতে পারেন। একই ভাবে বাড়িতে লোহার পুরনো চেয়ার থাকলে, সেটাকেও রং করে দিন নতুন রূপ। আর একটা কাজ করুন এর সঙ্গে। রং করা চেয়ারটায় স্যান্ড পেপার দিয়ে কিছু কিছু জায়গা একটু অমসৃণ ভাবে ঘষে নিন। ভিন্টেজ লুক আসবে।
৪. পুরনো অ্যালুমিনিয়াম কেটলি আছে বাড়িতে? না থাকলে কিনতে আর কতক্ষণ! বা ধরুন গাছে জল দেওয়ার ঝারি! আকাশি কিংবা ফিরোজা রং দিয়ে রাঙিয়ে নিন। এটাকেও ঘর সাজানোর সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। একই রকম ভাবে সংগ্রহ করা পাথরের টুকরো, কাচের প্লেট, হ্যারিকেনকেও অ্যাক্রিলিক পেন্ট দিয়ে রং করে শো পিস হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
৫. কয়েকটা ধূপকাঠি নানারকম রং করে কোনও পেন স্ট্যান্ডে রেখে দিন। ওই পেন স্ট্যান্ড শুধুমাত্র সাজানোর পারপাজেই ব্যবহার করুন। অথবা ধূপদানিতে রাখুন, ধূপ-সহ ধূপদানি রেখে দিন কোনও ছোট পেতলের থালায়।
৬. ভদকা বা বিয়ারের বোতল রং করে ভেতরে ঝুলিয়ে দিন টুনি বাল্ব। কোনও কাচের জাগ বা কাচের বয়ামেও টুনি বাল্ব ভরে দিতে পারেন। আলো জ্বেলে দিন, ঘর কেমন মায়াবী মনে হবে।
৭. পেতলের পুরনো পানের ডিবে একটু পালিশ করে নিন। একটা পেতলের প্লেট বা পানের ডিবের ঢাকনাটা দিয়েই ঢেকে দিন ডিবের মুখটা। তার ওপর রেখে দিন কোনও মূর্তি, পেতলেরই। অ্যান্টিক শো পিস হিসেবে কিন্তু মন্দ নয়!
৮. রঙিন কাগজে এঁকে, রং করে বিভিন্ন শেপে কেটে ফুটো করে নিন। সেই ফুটো দিয়ে গলিয়ে দিন রঙিন সুতো বা টুনি বাল্বের তার।
[জানেন কি, রান্নাঘরের আদল দেখেই বোঝা যায় আপনার ব্যক্তিত্ব]
৯. বাড়িতে পোলারাইজ্ড ক্যামেরায় তোলা ফোটোগ্রাফ আছে? কিংবা সাধারণ ফোটোগ্রাফ– সেটা সাম্প্রতিক তোলা হতে পারে বা পুরনো সাদাকালো ছবি। আঠা দিয়ে সেঁটে দিন দেওয়ালে কিংবা একটা ওয়াল বোর্ডের ওপরও সেঁটে দিতে পারেন। ফটোগ্রাফগুলোর গা ঘেঁষে আঁকাবাঁকা নকশায় লাগিয়ে ফেলুন টুনি বাল্ব। চমৎকার লাগবে।
১০. টেপ রেকর্ডারে গান শোনার দিন এখন প্রায় আর নেই। সেরকম যদি হয় যে, পুরনো, খারাপ বা এমনিই না চালানো অবস্থায় কোনও টেপ রেকর্ডার বাড়িতে পড়ে রয়েছে, সেটাকে ফিরোজা রং করে দিন। অন্য পছন্দের রং-ও করতে পারেন। তবে উজ্জ্বল হতে হবে, আর যে জায়গায় রাখবেন, তার সঙ্গে যেন মানানসই হয়।
১১. ছোট ছোট খাঁচায় পাখি বন্দি করার দরকার কী! কাজে লাগান ঘর সাজানোয়। রং করে নিন। ভিতরে রাখুন আর্টিফিশিয়াল ফুল। কোনও দিয়াও রাখতে পারেন।
১২. একই রকম ভাবে দিন না বাড়ির পুরনো কাঠের আলমারিটা রং করে! যে দেওয়ালের দিকে রাখবেন, দেওয়ালের রঙের সঙ্গে কনট্রাস্ট হয় যেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.