শুভঙ্কর বসু: চিন এবং ইউরোপের দেশগুলি থেকে কাঁচামাল আসা বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু জরুরি ওষুধ নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে জানা গিয়েছে, দেশের ভাঁড়ারে আপাতত যে পরিমাণ স্টক রয়েছে তাতে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চালিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারপর? এর উত্তর খুঁজতে এখন দিন রাত এক করছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চের (আইপিএমআর) গবেষকরা।
করোনা ভাইরাসের দাপট ছড়িয়ে পড়তেই জরুরি ওষুধের হালহকিকত যাচাই করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে মোট এমন ৫৪টি জরুরি ওষুধ রয়েছে যেগুলি তৈরির কাঁচামাল আসে সরাসরি চিন ও অন্য দেশগুলি থেকে। এরমধ্যে রয়েছে অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ওফ্লক্সাসিন এমোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, মক্সিফ্লক্সাসিন, ডক্সিসিলিনের মত জরুরি অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন বি-১, বি-৬, ভিটামিন-ই ও স্ত্রী হরমোন প্রজেস্টেরন, অ্যাষ্ট্রোভাস্টাটিন এবং রিফামপিসিনের মত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রক ওষুধ। বিশেষজ্ঞ কমিটির তথ্য অনুযায়ী, এই ৫৪টি ওষুধের মধ্যে ৩২টি ওষুধের কোনও বিকল্প নেই। আর বাকি ২২টির বিকল্প থাকলেও এই পরিস্থিতিতে যেগুলি তৈরির কাঁচামাল মেলা দুষ্কর।
মূলত চিনের হুবেই প্রদেশ থেকে এইসব জরুরি ওষুধ তৈরির কাঁচামাল বা অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) দেশে আমদানি হত। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই সমস্ত রকম রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চিন সরকার। যা এখনও বজায় রয়েছে। আইসিএমআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ওই ৫৪টি ওষুধের মধ্যে মোট ৩৮টি ওষুধ ন্যাশনাল লিস্ট অফ এসেন্সিয়াল মেডিসিনের (এনএলইএম) সিডিউল-১ ড্রাগস হিসাবে তালিকাভুক্ত। যেগুলি ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি নির্ধারিত মূল্যে পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা। যে গুলির মধ্যে পটাসিয়াম ক্লাভুলানেট, সেফট্রিয়াক্সন সোডিয়াম স্টেরাইল, পিপেরেসিলিন টোজোবেক্টাম, মেরোপেনাম ভেনকোমাইসিন, জেন্টামাইসিন সিপ্রোফ্লক্সাসিনামগের মত নিত্যদিন ব্যবহার্য জরুরি ওষুধ রয়েছে।
চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, জরুরি ওষুধগুলির ব্যবহার একবার শুরু করলে তা বন্ধ করা যায় না। ওষুধগুলি বন্ধ হলে শরীরের উপর বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এসব জরুরি ওষুধগুলি কত পরিমান স্টক দেশে আপাতত মজুত রয়েছে সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, অর্গানাইজেশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রডিউসার অফ ইন্ডিয়া এবং বাল্ক ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংস্থা তথ্য জমা দিয়েছে কেন্দ্র সরকারকে। তবে আপাতত চিনের করোনা পরিস্থিতি একটু হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই ভারতে করোনা কিট রপ্তানির ছাড়পত্র মিলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় এসব ওষুধের কাঁচামাল রপ্তানির ব্যাপারেও সে দেশের সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এসব জরুরি ওষুধের সীমাবদ্ধ স্টক চিন্তায় ফেললেও ডায়াবেটিস কিংবা রক্তচাপ, থাইরয়েড, আর্থারাইটিসের সমস্যার মতো অতি পরিচিত রোগগুলির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনসুলিন, গ্লাইচেক, লোসার কিংবা এলট্রক্সিনের মতো ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বেঙ্গল কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শঙ্খ রায় চৌধুরি জানিয়েছেন, সাধারণ রোগের ওষুধ গুলির পর্যাপ্ত স্টক রয়েছে। এ নিয়ে এখনই আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.