সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গতকাল উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এক যুবকের। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দু’বার হাঁচি দিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরিবার জানায়, সকালে একবার বুকে ব্যথা হয়েছিল তাঁর। তার আগের দিন রাজস্থানে (Rajasthan) একটি মন্দিরে দেবতার মূর্তিতে প্রণাম করেই মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। এছাড়া গত কয়েক মাসে একধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে নাচতে নাচতে। সব মিলিয়ে আচমকা হদরোগে আক্রান্ত (Heart Attack) হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা হুড়মুড় করে বাড়ছে। বাদ যাচ্ছেন না তথাকথিত ‘স্বাস্থ্য সচেতন’রাও। রাজু শ্রীবাস্তবের (Raju Srivastava) মতো সেলিব্রেটিরা হৃদরোগে আক্রান্ত হন জিম করার সময়। পরে তাদের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ ‘মহামারী’র হয়ে উঠল কেন ‘স্ট্রোক’ তথা ‘হার্ট অ্যাটাক’। কীভাবে রক্ষা মিলবে?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অন্যতম কারণ অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যের বিষয়ে অসচেতন। তাঁরা জেনে বা না জেনে নিজের শরীরের প্রতি অবহেলা করছেন। হৃদযন্ত্রের ভালমন্দ না ভেবে বেপরয়ো অভ্যাসে মাতেন। অতিরিক্ত তেলমশলা যুক্ত খাবার খান, গভীর রাত অবধি পার্টির সঙ্গে চলে উদ্দাম নেশা। চটজলদি খাবারে ওজন বাড়ে শরীরের। কোলেস্টরলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে হৃদরোগ-সহ একাধিক অসুখের সম্ভাবনা বাড়ছে।
সাধারণ মানুষের একাংশের বক্তব্য, বাড়তে থাকা ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’-এর জন্য কোভিডের ভ্যাকসিন (Covid Vaccine) দায়ী। তাঁদের বক্তব্য, অল্প সময়ে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। এখন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছে গোটা দেশ। যদিও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোভিড দেশের অধিকাংশ মানুষকে পুরোপুরি কাবু করতে পারেনি বটে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বড় ক্ষতি করে দিয়ে গিয়েছে। বাড়তি হার্ট অ্যাটাকের জন্য কোভিডের টিকাকে নয়, বরং কোভিডকেই দায়ী করছেন অধিকাংশ চিকিৎসক।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দাবি করছেন, কোভিড যে ‘বিষ’ ঢুকিয়ে গিয়েছে শরীরে, এক বা দেড় বছর, এমনকী দু’বছর পরেও তার ফল ভুগতে হতে পারে আমাদের। কোভিডের ভ্যাকসিন কি কোনওভাবেই হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী হতে পারে না? চিকিৎসকদের বক্তব্য, এটা প্রমাণিত নয়। তবে ভ্যাককিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন যাঁরা তাঁরা কেউ একটি, কেউ দু’টি ডোজ নিয়েছেন ভ্যাকসিনের। অনেকে আবার বুস্টার ডোজও নিয়েছেন। তবে কোভিড ১৯ ভাইরাস যে বিরাট ক্ষতি করেছে আমাদের তা বলা বাহুল্য।
শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকরা একমত, অস্বাস্থ্যকর জীবনভ্যাস হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করা, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ফলে দেখা দেয় স্থূলতা। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগে থেকে বিদ্যমান কমরবিডিটি। যেমন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিপিড ব্যাঘাত। এছাড়াও থাকতে পারে হেরিডিটি। পূর্বপুুরুষরাও হৃদযন্ত্রের রোগে ভুগেছেন।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর দুনিয়া জুড়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারান হৃদ্যন্ত্রের সমস্যাতেই। ভারতে প্রতি বছর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষের কাছাকাছি। অনেক ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হলে হজমের গোলমাল ভেবে এড়িয়ে যাই। এমনটা করা যাবে না। বরং দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.