স্টাফ রিপোর্টার: এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। করোনা (Covid-19) আক্রান্ত রুগ্ন শরীরে এবার বাসা বাঁধছে এক মারণ ছত্রাক। মাত্র ১৭৮৮ কিলোমিটার দূরের গুজরাটে এমন অনেক করোনা জয়ীর খোঁজ মিলেছে। যাঁদের রোগক্লিষ্ট শরীরে পাওয়া গিয়েছে পচা সবজির ছত্রাক। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক! আবার মহারাষ্ট্রে অন্তত ২০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই কালো ছত্রাকের কারণে, এমনটাই দাবি সরকারের।
চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিডের কবলে পড়ে যাঁদের দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে, বিপদটা তাঁদের জন্যেই বেশি। এমনই এক রোগীর নাক কিছুতেই খুলছে না। শেষমেশ দেখা গেল শরীরে বাসা বেঁধেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। যে ছত্রাক পাওয়া যায় পচা সবজিতে। কীভাবে তা বাসা বাঁধল শরীরে? অ্যাপোলো হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু পাঁজার কথায়, যে সমস্ত রোগী দীর্ঘদিন আইসিইউতে থাকছেন, তাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে চলে যাচ্ছে। সেই সুযোগেই বাসা বাঁধছে এই ছত্রাক। আচমকা অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এই ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম লক্ষণ। রয়েছে প্রচণ্ড কাশি, তার সঙ্গে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, মুখ অসাড় হয়ে যাওয়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো আরও একাধিক উপসর্গ।
ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণেই সাধারণভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা কমে যায়। করোনায় তা আরও বেশি হচ্ছে। সার্স কোভ-২ ভাইরাসের আক্রমণে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়লে অনেক সময়ই স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চলে যাচ্ছে তলানিতে। এমন সময়ই সুযোগসন্ধানী জীবাণু ও ছত্রাকদের পোয়াবারো। চিকিৎসা পরিভাষায় এদের বলা হয় opportunistic pathogens। এমনই একটা প্যাথোজেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকর মাইকোসিসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার শতকরা ৫০ শতাংশ। ভাইরোলজিস্ট জানিয়েছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছাড়াও দুর্বল কোভিড রোগীদের ক্যান্ডিডা এলবিকান্স, ক্রিপ্টোকক্কাস নেওফরমান্সও আক্রমণ করতে পারে। বাঁচার উপায় একটাই। ছত্রাক সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলতেই হবে।
কীভাবে শরীরে প্রবেশ করে এই ছত্রাক? ডা. শান্তনু পাঁজার কথায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেই ছত্রাকের বীজ বাতাস থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মস্তিষ্কের মধ্যে আর ফুসফুসেই মারাত্মক প্রভাব ফেলে এই ছত্রাক। দেশের নানা অংশে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার সুবাদে এমন রোগী দেখেছেন তিনি। স্বস্তির বিষয় একটাই, মানুষ থেকে মানুষের শরীরে এই রোগ সংক্রমিত হয় না। সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে এই ছত্রাকের দেখা মিললেও পূর্ব ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণ তূলনামূলক অনেক কম বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবু অবিলম্বে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে চিকিৎসকদের। অতি সম্প্রতি মুম্বইয়ে এক কোভিড জয়ীর নাক থেকে পাওয়া গিয়েছে এই মিশকালো ছত্রাক।
এই মুহূর্তে বাংলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ১২ হাজার ৪৬১ জন। এদের মধ্যে সিংহভাগই কোমর্বিডিটির শিকার। ডা. শান্তনু পাঁজার কথায়, ডায়াবেটিস, ক্যানসার রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। করোনা আক্রান্ত হয়ে এদের অবস্থাই শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে। করোনা আক্রান্ত হলে এদের ঠাঁই হচ্ছে আইসিইউতে। মিউকোর মাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে এঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি তাই সবচেয়ে বেশি। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঠেকাতে তা এহেন রোগীদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে যথেচ্ছভাবে স্টেরয়েড না ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.