গৌতম ব্রহ্ম: ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে এই ভেষজের কার্যকারিতা ইতিমধ্যেই প্রমানিত। ১৯৭০ সালে চিন প্রথম বিশ্বের দরবারে এর জীবাণুনাশক গুণাবলী তুলে ধরে। সেই আর্টেমেশিয়া (Artemisia) গাছের নির্যাসই কোভিড–১৯ চিকিৎসায় মান্যতা পেতে চলেছে। শনিবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, এই আর্টেমেশিয়ার পাচন কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহার করে সুফল পেয়েছে বলে দাবি করেছে আফ্রিকার একাধিক দেশ। বিশেষ করে মাদাগাস্কর। দু’টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের হার্ডলস টপকে গিয়েছে এই ভেষজ। তিন নম্বর ট্রায়ালে পাশ করলেই কোভিড ওষুধ হিসাবে চূড়ান্ত অনুমোদন মিলবে। সেক্ষেত্রে আর্টেমেশিয়া পাচন হবে বিশ্বের প্রথম কোভিড নিরোধক ভেষজ ওষুধ।
আর্টমেশিয়ার প্রায় দু’শোর বেশি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে আর্টেমেশিয়া অ্যানুয়া ও আর্টেমেশিয়া আফ্রা নামের দু’টি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসাবে বহুল ব্যবহৃত। ব্যবহৃত হয় অন্যান্য ভাইরাল জ্বরেও। এই জীবাণুনাশক বৈশিষ্টকে মাথায় রেখেই কোভিড চিকিৎসায় এই ভেষজের পাচন ব্যবহার শুরু করে আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কর। রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রি নিরিনা রাজোলিনার উৎসাহে এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে যায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও। প্রথমে পাচন, তারপর ক্যাপসুল ও ইঞ্জেকশন ফরম্যাটেও শুরু হয় আর্টেমিশায়ার উৎপাদন। যদিও তার ব্যবহার মাদাগাস্করেই সীমাবদ্ধ।
হু (WHO)-এর এই ঘোষণার পরই ভারতীয় আয়ুর্বেদ মহলও উৎসাহিত। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে আয়ুশ মন্ত্রক। কারণ ভারতেও কোভিড চিকিৎসায় অশ্মগন্ধা, গুরুচি-সহ বেশ কিছু ভেষজের প্রয়োগ হয়েছে। সাফল্য মিলিছে বলেও দাবি করা হয়েছে। আয়ুর্বেদে উল্লিখিত ভেষজ ওষুধ নিয়ে শতাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ভারতে। আর্টেমিশিয়া ‘হু’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ভারতে ব্যবহৃত ভেষজের কপালেও শিঁকে ছিড়বে বলে অনুমান আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের। হু-এর আয়ুশ টেকনিক্যাল অফিসার ডা. জি গীতা কৃষ্ণণও আশাবাদী। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে জানালেন, “ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ‘হু’-এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। এদেশে কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভেষজ ওষুধ নিয়ে ‘আপডেট’ করছে। আশা করি ভারতীয় ভেষজও কোভিড চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে।”
২০১৯সালের ডিসেম্বরে ইউহান থেকে শুরু কোভিড-১৯ অতিমারি। চিনও তাদের ‘ট্রাডিশনাল মেডিসিন’ ব্যবহার করেছে গোড়া থেকেই। তাতে সাফল্য মিলেছে বলে দাবিও করেছে চিনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশ হয়েছে একাধিক গবেষণাপত্রও। কিন্তু হু যেভাবে মাদাগাস্করকে আর্টেমিশিয়ার মতো ভেষজের কার্যকারিতা প্রমানে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিল তা সতি্যই বৈপ্লবিক। খুশি দেশের ভাইরোলজিস্টরাও। অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, “বিজ্ঞানসম্মত ধারায় অর্থাৎ ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সমস্ত ধাপ অতিক্রম করে কোনও ট্রাডিশনাল মেডিসিনের (ভারতীয় ভেষজ) কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ও তার জনপ্রিয়করণ সমর্থনযোগ্য।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.