Advertisement
Advertisement
হিট স্ট্রোক

প্রবল গরমেও ঘামছেন না? আপনার জন্য অপেক্ষা করছে মারাত্মক বিপদ

কী বলছেন চিকিৎসকরা?

What to do to avoid Sunstroke. Here are doctor's tips for you
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:May 8, 2019 9:26 pm
  • Updated:May 8, 2019 9:26 pm  

বাইরে ঘুরে কাজ করলে আরও সাবধান। কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন? হিট স্ট্রোকের রেড অ্যালার্ট জানালেন বিশিষ্ট জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস। শুনলেন সোমা মজুমদার

হিট স্ট্রোক

Advertisement

দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার পর কি আপনার পায়ে ক্র‌্যাম্প ধরে? কিংবা শরীরে অত্যন্ত ক্লান্তিভাব আসে? অথবা গরমে অস্বস্তি হলেও ঘাম বেরোয় না! তাহলে সময় থাকতেই সজাগ হন। কারণ প্রাথমিকভাবে এই ধরনের লক্ষণ থেকেই আপনার হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকী দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে হিট স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আগামী দিনে গরম আরও বাড়তে চলেছে। অন্যদিকে বর্ষা আসতে এখনও অনেক দেরি। তাই কাজের তাগিদে দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকতে হলে অবশ্যই শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে সজাগ হোন।

হওয়ার আগে
কারও হঠাৎ করেই হিট স্ট্রোক হয়ে যায় না। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে হিট ক্র‌্যাম্প অর্থাৎ পেশিতে টান ধরে। গরমে ঘাম হলে শরীর থেকে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদি বেরিয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে হাত, পা ও পেটের পেশিতে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা শুরু হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং রোগীর প্রচণ্ড জলতেষ্টা পায়। এরপর আরেকটি পর্যায় হল হিট এক্সজশন। এক্ষেত্রে বমি ও প্রচন্ড ঘাম হয়, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস চলে, মাথাব্যথা,অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি হতে পারে। রোগীর এই দু’টি অবস্থাই পরবর্তীকালে হিট স্ট্রোক হওয়ার আভাস দেয়।

হিট স্ট্রোক কী?
স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমানো হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে অনেকক্ষণ থাকলে বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়। শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লক্ষণ
আমাদের শরীরের ভিতরের তাপ কখন বেরোবে তা নির্ভর করে বাতাসের আর্দ্রতার উপর। যত বেশি আর্দ্র পরিবেশ তত বেশি বাষ্পীভবনের পরিমাণ কমে যায় এবং শরীর ঠান্ডা হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে। সেক্ষেত্রে রোগীর মৃগী রোগের মতো কম্পন হয় এবং হার্ট ফেলিওর হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এছাড়াও রোগীর ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, ত্বক শুষ্ক ও লালাভ হয়ে যায়, নিশ্বাসের গতি বেড়ে যায়, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, রক্তচাপ কমে যায়, খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করে, অস্বাভাবিক ব্যবহার, অসংলগ্নতা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।

কতটা মারাত্মক
হিট স্ট্রোকের কারণে আপনার জীবনে ভয়ানক ফল হতে পারে। হিট স্ট্রোকে রোগীর হার্টের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর হার্ট ফেলিওর করে যায়। যত কম শরীরে জল যায় তত কিডনির উপর প্রভাব পড়ে। লিভারে রক্ত সঞ্চালন কম হয়। এমনকী, লিভারের কার্যকারিতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং শেষে ব্রেনের উপর প্রভাব পড়ে। শরীরে হিট স্ট্রোকের এই প্রভাবগুলি রোগীর খুব তাড়াতাড়ি অথবা ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে।

কাদের বেশি হয়?
প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতায় যে কারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত আমাদের শরীর অভ্যস্ত নয় এমন তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ থাকলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিদের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেশি থাকে। যারা তীব্র রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন বা দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকতে হয় যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, পুলিশ কিংবা যারা প্রচণ্ড তাপমাত্রায় বেকারিতে কাজ করেন তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রতিরোধ
** হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির জামা-কাপড় পরার চেষ্টা করুন।
**কাজ ছাড়া যতটা সম্ভব ঘরের ভিতর বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকতে হলে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে           সুতির কাপড় মুখে জড়িয়ে নিন।
**প্রচুর পরিমাণে জল ও অন্যান্য তরল পান করুন।
** চা ও কফি জাতীয় গরম পানীয় যথাসম্ভব কম পান করুন।

এমন হলে করণীয়
** প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগেই যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সজশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ        করা সম্ভব।
** আপনার পাশের কোনও ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হলে তাকে দ্রুত শীতল কোনও স্থানে নিয়ে যান। ফ্যান বা এসি চালিয়ে দিন।
** ভেজা কাপড়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে রোগীর কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করুন।
** যদি হিট স্ট্রোক হয়েই যায়, তাহলে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement