অভিরূপ দাস: শিশুর প্লেটে কী খাবার থাকা উচিত? তা জানেন না দেশের ৮৮ শতাংশ অভিভাবক। দেশের মাত্র ১২ শতাংশ শিশু সঠিক পুষ্টিকর খাবার পায়। এমনটাই মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। সামনেই বিশ্ব পুষ্টি দিবস! তার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা মাথায় রেখে শিশুর পুষ্টি নিয়ে সায়েন্টিফিক নোট প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস। ছয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর যৌথ আলোচনায় তৈরি হয়েছে এই বিজ্ঞানপত্র। সে ছয় চিকিৎসকের মধ্যে একজন এই বাংলার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কল্পনা দত্তর সঙ্গে এই টিমে রয়েছেন ডা. সোমশেখর আর, ডা. কে কেশাভুলু, ডা. মধু সিনহা, ডা. দীপেন্দ্র গর্গ, ডা. পরাগ গায়কোয়াড়।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রথম এক হাজার দিন শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই এক হাজার দিনের মধ্যে রয়েছে মায়ের পেটে থাকার দিনগুলিও। বিজ্ঞানপত্র তৈরির অন্যতম সদস্য ডা. কল্পনা দত্তর কথায়, ‘‘মায়ের পেটে থাকা ২৭০ দিন। তারপর পৃথিবীর আলো দেখার পর দু’বছর। এই সময়টাই আসল। এই সময় শিশু যা খায় তাতেই তৈরি হয় আগামীর ভিত্তি। শিশুর শরীরের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা তৈরি করে দেয় এই প্রথম হাজার দিন।’’
সুষম পুষ্টি রাখতে হলে কী খাবার থাকতে হবে শিশুর প্লেটে? ছ’মাস পর্যন্ত শিশু শুধু মায়ের বুকের দুধ খায়। তারপর ধীরে ধীরে শুরু হয় নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচয়। দু’বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি চলে নতুন খাবার খাওয়া। চিকিৎসকরা একে বলছেন, ‘কমপ্লিমেন্টারি ফিডিং।’ এই সময়টায় বিশেষ একটি দিকে নজর দিতে বলছেন, ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের গবেষকরা। তাঁদের কথায়, ‘ইন্ট্রোডিউস ওয়ান ফুড অ্যাট ওয়ান টাইম।’ অর্থাৎ শিশুর সামনে একসঙ্গে একাধিক নতুন খাবার আনা উচিত নয়। একটি নতুন খাবারের সঙ্গে শিশু পরিচিত হলে তারপর ফের নতুন কোনও খাবার তার সামনে আনা উচিত।
নয়া বিজ্ঞানপত্রে শিশুর প্লেটকে চার ভাগে ভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একটায় ফল, অন্যটায় মরশুমি সবজি, তিন নম্বর ভাগে প্রোটিন, চার নম্বরে রাখা হয়েছে খোসা সমেত শস্যদানা। নয়া বিজ্ঞানপত্রের কনভেনর ডা. কল্পনা দত্ত জানিয়েছেন, মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য শিশুর সঠিক পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাবার এবং ভিটামিন প্রয়োজন। তা না পেলে ভবিষ্যতে শিশুর মধ্যে অতিরিক্ত কিংবা রাগ, মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। স্কুলের পঠনপাঠনের নেপথ্যেও সঠিক পুষ্টি। খাবার থেকে শিশু সঠিক পরিমাণ এনার্জি, ভিটামিন-আয়রন না পেলে তার ছাপ পড়তে পারে স্কুলের মার্কশিটে। গবেষণাপত্র বলছে, খাবারে আয়রন যেমন প্রয়োজন, তেমন তা ধরে রাখতে প্রয়োজন ভিটামিন সি-র। লেবু-টমেটোর মতো ভিটামিন সি ভরপুর ফল আয়রন শোষণ করতে পারে।
তবে শুধু পুষ্টিগুণ নয়, শিশুকে খাওয়ানো পদ্ধতিতেও প্রচুর গলদ রয়েছে। গবেষণাপত্রে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ফোর্স ফিডিং’ বা জোর করে খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত। বন্ধ করা উচিত জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া। তার বদলে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের দিকে ঝুঁকতে বলছেন চিকিৎসকরা। বাজার থেকে প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় প্যাকেটের দিকে নজর দিতে বলছেন চিকিৎসকরা। প্যাকেটে যদি লেখা থাকে, ‘লো ক্যালোরি’ ‘নো অ্যাডেড সুগার’, নো ‘ট্রান্স ফ্যাট’ শিশুর জন্য সেই খাবার প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত অভিভাবকদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.