কথাতেই আছে মাছে ভাতে বাঙালি। ভাতের প্রতি এই অগাধ ভালবাসা কোনও বড় বিপদ ডেকে আনবে না তো? কাদের জন্য কতটা ভাত জরুরি তা বুঝিয়ে বললেন ডায়াটিশিয়ান সোমালি বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন মৌমিতা চক্রবর্তী গাঙ্গুলি।
আমরা জানি, একমুঠো ভাতের জন্য অনেককেই কত কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তাই ভাত খাবেন না তা কী করে হয়! এটা একেবারেই কুখাদ্য নয়, কিন্তু ভাত খাওয়ার পাশাপাশি আপনার সারাদিন আপনি কী কী করছেন কীভাবে অতিবাহিত হয় সেটাই বিবেচ্য বিষয়। অতীতে মানুষের কায়িক পরিশ্রম ছিল অনেক বেশি। সেই বিশাল পরিশ্রমের সঙ্গে সারাদিনে একবার ভাত খাওয়া কোনও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস মোটেই বলা যায় না। কিন্তু বর্তমানে মানুষের হাতে সময় নেই, সারাদিন ঘরে ঠায় বসে কাজ কিংবা পড়াশোনা। শারীরিক পরিশ্রমের বালাই নেই। এহেন অবস্থায় ভাত খাওয়ার অভ্যাস একাধিক অসুখের কারণ হতে পারে।
খারাপ দিক
ভাতে ডাইজেসটিভ ফাইবার নেই। ফলে তাড়াতাড়ি হজমও হয়ে যায় ও বারবার খিদে পায়। ফলস্বরূপ শরীরের ওজন বৃদ্ধি হয়। ফাইবার নেই তাই দ্রুত হজম হয়ে রক্তে সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয় l ভাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্রায় ৭০-এর বেশি। রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জাতীয় খাবার (ডাল ও শাক-সব্জি ইত্যাদি) ডায়েটে রাখা উচিত। এঁরা ভাত মেপে না খেলে সুগার বেড়ে যায়। l মোটামুটি ১৫০ গ্রাম ভাতে ২০০ ক্যালোরি থাকে। প্রয়োজনের বেশি ভাত খাওয়ায় রাশ টানতে না পারলে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা অসুখ বাসা বাঁধে। এতে উপস্থিত স্টার্চ এবং রিফাইন্ড সুগার ওবেসিটির সমস্যা ডেকে আনে।
ব্রাউন রাইসও নিরাপদ নয়
অনেকের ধারণা, ব্রাউন রাইস খেলে এই ভয় নেই, রক্তে সুগারের মাত্রাও ঠিক থাকবে। বলা বাহুল্য, এটা একটা মিথ। দু’প্রকার চালেই কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরির মাত্রা সমান। ব্রাউন রাইসে খোসা থাকায় তাতে প্রোটিন, ফাইবার ও আয়রন বেশি থাকে। খরচসাপেক্ষও বটে।
ওজন বুঝে, মেপে ভাত
প্রত্যেকটি মানুষের গঠন, আয়তন, উচ্চতা ও কী রোগ রয়েছে তার প্রকারভেদের তারতম্য অনুয়ায়ী ভাতের পরিমাণ ও খাদ্যতালিকা আলাদা হয়। ক্যালোরিভ্যালু বেশি থাকায় খুব অল্প পরিমাণে সঠিক খাবারের তালিকাতে ভাতকে রাখতে হবে। ৩০ বছরের পর থেকে মানব শরীরে বেসাল মেটাবলিক রেট (BMR) কমতে শুরু করে যা বয়স বাড়ার সঙ্গে আরও নিচে নামতে থাকে। যাদের সারাদিনে একাধিকবার ভাত খাওয়ার প্রবণতা আছে তাদের মধ্যেই ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। তাই কতটা ভাত একজনের জন্য স্বাস্থ্যকর সেটা জানা জরুরি।
প্রত্যেকের নিজের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত ভাত খেতে পারেন। রোজের ডায়েটে ছোট এক বাটি ভাত সঙ্গে এক বাটি ডাল, দুই বাটি শাক-সবজি রাখুন। যে কোনও একটি প্রোটিন রাখুন। এতে ক্যালোরি ইনটেক কম হবে আর ব্যালান্সড ডায়েট থাকবে। একটি নীরোগ, সুস্থ শরীরের জন্য ভাতকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ না দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প, পরিমিত খান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.