প্রতীকী ছবি৷
অভিরূপ দাস: সন্তানের জিনে বিটা থ্যালাসেমিয়া (Beta Thalassemia)। পনেরো দিন অন্তর অন্তর রক্ত বদলাতে হবে শরীরের। মানতে পারেন না মা-বাবা। একদিকে খরচের ধাক্কা, অন্যদিকে সারাজীবন অসুস্থ সন্তানকে বয়ে বেরানোর দুশ্চিন্তা। সবমিলিয়ে আইনি ভ্রূণ হত্যার মতো সিদ্ধান্ত বেছে নেন অনেকেই। ২০২০ সালে গুজরাতে ১৫ টি ভ্রূণ হত্যা করা হয়েছিল থ্যালাসেমিয়ার জন্যই। সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যান্ডেলের (Bandel) তন্ময় ও শিপ্রা রজক।
রজক দম্পত্তির ১০ বছরের কন্যা সন্তান বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। রক্তের এই জিনগত (Gene) রোগ মারাত্মক। বংশ পরম্পরায় তা শিশুর দেহে বাসা বাঁধে। যার ফলে কমতে থাকে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। দশ বছরের একরত্তির রক্তে লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ মারাত্মক কম। প্রতি ১৫ দিন অন্তর তাকে রক্ত বদলাতে হয়। মাস কয়েক আগে দ্বিতীয়বারের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হন শিপ্রা। আশা ছিল, এবার হয়তো জন্ম নেবে সুস্থ সন্তান। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায়, সে সন্তানের জিনেও রয়েছে বিটা থ্যালাসেমিয়া!
আবারও একটা অসুস্থ বাচ্চা। নিম্ন মধ্যবিত্ত দম্পত্তির পক্ষে খরচ বহন করা ছিল অসম্ভব। বাধ্য হয়ে আইনিভাবে গর্ভাবস্থায় সন্তানকে বিনষ্ট করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন ৯৮৩১৩৩৩১৯৬ এই নম্বর ডায়াল করলেই এড়িয়ে যাওয়া যেতো এই অনভিপ্রেত ঘটনা। ‘সেভ দ্য সিবলিং’ নামের নতুন প্রোজেক্ট পা রেখেছে কলকাতায়। সোমবার সেই প্রোজেক্ট এর ঘোষণায় উপস্থিত ছিলেন ডা. প্রশান্ত কুমার চৌধুরী, ডা. রাজীব আগরওয়াল। জন্মগত শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলেই সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, মা বাবার জিনে কোনও ত্রুটি থাকলে তা নিয়েই জন্মায় সন্তান। সেই সন্তান সুস্থ জীবন দিতে হলে দ্বিতীয় বাচ্চা নিতে হবে আইভিএফ (IVF) এর সাহায্যে। কৃত্রিম উপায়ে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা সুস্থ টেস্ট টিউব বেবি তৈরি করবেন চিকিৎসকরা।
ডা. জয়দীপ চক্রবর্তীর কথায়, যে ডিম্বাণুতে (Eggs) অসুখের চিহ্ন থাকবে সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। ফলিকিউলার স্টাডির মাধ্যমে ডিম্বাণুর প্রস্তুতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে মাকে। সেটি ডিম্বাণুর ঘর ফাটিয়ে দেয়। এরপর স্বামীর স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষাগারে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় পেট্রিডিশে সুস্থ ডিম্বাণুগুলিকে শুক্রাণুর সঙ্গে রেখে দেওয়া হয়। সেগুলি নিষিক্ত করে ভ্রূণ তৈরি করা হবে। এভাবেই ত্রুটিযুক্ত জিন (Gene) বাদ দিয়ে গর্ভে আনা হবে সুস্থ সন্তানকে। মা গর্ভবতী হলে প্লাসেন্টা (Plasenta) থেকে সুস্থ সন্তানের স্টেম সেল সংগ্রহ করা হবে। মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তা সংরক্ষণ করা হবে। পরে অসুস্থ সন্তানের শরীরে তা প্রতিস্থাপিত হবে। গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে লাগবে ২৪ মাস। এই প্রক্রিয়ায় খরচ কয়েক লক্ষ টাকা। সেই টাকাও দিতে এগিয়ে এসেছে কিছু কর্পোরেট সংস্থা। চিকিৎসকরা বলছেন আগামী দিনে আইনী ভ্রূণ হত্যা কমাবে এই ব্যবস্থা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.