হাঁটুর জয়েন্ট ফুলে থাকলে সাবধান। জল জমতে পারে। বুঝতে কী করবেন, এই জল বের করতেই বা কী করণীয়, সবিস্তার বললেন অর্থোপেডিক ডা. সুজয় কুণ্ডু। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
পেটে জল, বুকে জলের মতোই এখন হাঁটুতেও জল জমে। আর এই থেকে কম কষ্টও পেতে হয় না রোগীকে। কিন্তু বুক বা পেটে জল জমলে তা যতটা দ্রুত বোঝা যায়, হাঁটুতে জল জমলে সেটা কিন্তু সহজে ধরা পরে না। আসলে এই অসুখের প্রকাশ ধীরে হয়, তাই রোগী যখন চিকিৎসা করাতে আসেন তখন হয়তো অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। আবার অধিকাংশই মনে করেন হয়তো হাড়ের সমস্যা থেকে হাঁটুতে ব্যথা হচ্ছে।
ঠিক কী হয়?
হাঁটুতে ইন্ট্রাআর্টিক্যুলার বা সাইনোভিয়াল ফ্লুইড থাকে। হাঁটুর জয়েন্টে থাকা কার্টিলেজকে পুষ্টি জোগাতে ও সচল রাখতে এই ফ্লুইড দরকার। তবে কিছু কারণে এই ফ্লুইড বাড়তে থাকলে তখনই সমস্যা শুরু হয়। যাকে বলা হয় সাইনোভিয়াল ইফিউশন। এক্ষেত্রে হাঁটুর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে এই ফ্লুইড জমা হতে শুরু করে।
কেন হয়?
সাধারণত সাইনোভিয়াল ফ্লুইড কিছু রোগের কারণে বাড়তে পারে। তার মধ্যে রয়েছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। এই অসুখে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন তৈরি হয়। সেই কারণে হাঁটুর ফ্লুইডের বা জলের (ইনফ্লামেটরি ফ্লুইড) মাত্রা বেড়ে যায়।
এর আর একটি কারণ হল ট্রামাটিক। অর্থাৎ হঠাৎ করে কোনও কারণে হাঁটুতে আঘাত লাগলে তা থেকেও সাইনোভিয়াল ইফিউশন হয়। চোট লেগে এমন হলে তাকে রিঅ্যাকটিভ ইফিউশন বলা হয়। যেমন ধাক্কা লাগা, মোচড় খাওয়া ইত্যাদি থেকে হাঁটু ঘুরে গেলে কার্টিলেজ ও লিগামেন্টে আঘাত লাগে। তা থেকে হাঁটুতে জল জমে যায়।
অনেক সময় আবার অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিস থাকে খুব বেশি হাঁটাচলা করলে তা থেকেও হাঁটুতে জল (ইনফ্লামেটরি ফ্লুইড) জমতে পারে। এক্ষেত্রে জল হাঁটুর পিছন দিকে জমা হয়, ফুলে থাকে। একে বলা হয় মরান্ট বেকার সিস্ট।
সাধারণত হাঁটুতে ৫ এমএল ফ্লুয়িড থাকে, কিন্তু এই ফ্লুইড যখন বেড়ে ১৫০-২০০ এমএল হয়ে যায় তখনই সমস্যা শুরু হয়।
লক্ষণ?
হাঁটুতে জল জমেছে, এটার প্রাথমিক লক্ষণ হল ব্যথা, হাঁটু ফুলে থাকার লক্ষণ দেখা দেয়। হাঁটুর জয়েন্টের পেশিতে স্প্যাজম বা ফিক ব্যথা হয়। হাঁটু নাড়াতে বা হাঁটু মুড়ে বসতে খুব অসুবিধা হয়। হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হয়।
প্রাথমিক প্রতিকার
RICE থেরাপি করে প্রাথমিকভাবে হাঁটুতে জল জমার সমস্যা প্রতিকার করা সম্ভব। এটা উপযুক্ত ঘরোয়া পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় সম্ভব। একটু বুঝিয়ে বলি, R (Rest), I (Ice), C (Compress), E (Elevation) – এই চারের সহযোগে REST থেরাপি। চোটের কারণে হাঁটুতে জল জমলে সেক্ষেত্রে ১০-১৫ দিন এই চারটে জিনিস মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ বিশ্রাম নিতে হবে, বরফ সেঁক দিতে হবে আর সোজা হয়ে শুয়ে হাঁটু নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটু তুলে সোজা রাখতে হবে।
অস্টিওআর্থ্রাইটিসে জল জমলে সেক্ষেত্রে ৫-৭ দিন এই থেরাপি মেনে চলতে হবে। রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে অল্প মাত্রায় স্টেরয়েড দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।
আর যাঁদের ক্ষেত্রে ১০-১২ দিন টানা এই ভাবে থেরাপি করা সম্ভব নয়, বাইরে বেরতে হয় যাঁদের তাঁদের হাঁটুতে জল জমলে সেক্ষেত্রে হিনচ নিক্যাপ বা কবজা যুক্ত নিক্যাপ ব্যবহার করতে বলা হয়।
থেরাপিতে মুক্তি
অস্টিও আর্থ্রাইটিস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে হাঁটুতে জল জমলে প্রাথমিকভাবে REST থেরাপি করার ১০ দিন পর থেকে বিশেষ ফিজিওথেরাপি করা প্রয়োজন। আইএফটি, ইউএসটি জাতীয় ফিজিওথেরাপি করলে হাঁটুতে জল জমার সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি ১০-১৫ দিন করতে হয়। অর্থাৎ যে কোনও চোট বা সমস্যা থেকে হাঁটুতে জল জমলে সব মিলিয়ে ২-৩ সপ্তাহ বিশ্রাম প্রয়োজন।
তারপর আল্ট্রাসোনগ্রাফি করে দেখতে হয় হাঁটুর অবস্থা ঠিক রয়েছে কি না। যদি দেখা যায় তখনও হাঁটু শক্ত হয়ে ফুলে রয়েছে তাহলে তখন আসেপটিক পদ্ধতিতে ছোট অপারেশন বা অ্যাসপিরেশন করে জল বের করা হয়। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের হাঁটুতে জল জমলে তা বের করে এই পদ্ধতি এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। সংক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.