গৌতম ব্রহ্ম: ভাইরাল জ্বর, ডায়েরিয়া তো আছেই। দুশ্চিন্তার পারদ চড়িয়ে ভরা বর্ষায় ফণা তুলল ব্রঙ্কিওলাইটিসের মতো শীতকালীন রোগও! ব্রঙ্কিওলাইটিস। শ্বাসকষ্টজনিত অসুখটির বাড়বাড়ন্ত সাধারণত দেখা যায় শীতের মরশুমে, বিশেষত শিশুদের মধ্যে। সোজা কথায় শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ। জ্বরের সঙ্গে কাশি, শ্বাসকষ্ট অন্যতম উপসর্গ। কিন্তু এবার সবাইকে হতচকিত করে বর্ষাতেই ব্রঙ্কিওলাইটিসের কবলে পড়ছে বহু বাচ্চা। দু’ মাস থেকে এক বছর বয়সিরাই কাবু হচ্ছে বেশি। কারও কারও শ্বাসকষ্ট এমন পর্যায়ে যাচ্ছে যে, ভেন্টিলেশনে পর্যন্ত রাখতে হচ্ছে।
পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে গত এক মাসে এমন প্রায় ১৫টি শিশুকে ভেন্টিলেশন দিতে হয়েছে বলে জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাস প্রসূন গিরি। আট বছর যাবৎ শিশুদের ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার’ চিকিৎসায় যুক্ত প্রভাসবাবুর কথায়, “বর্ষায় শ্বাসকষ্টের এত রোগী কখনও দেখিনি। ব্যাপারটা উদ্বেগের।”
[অনলাইনে ‘লোভনীয়’ চাকরির টোপ, আধুনিক ধাঁচে প্রতারণা চক্র ফাঁস]
ঘটনা হল, ভাইরাল জ্বরের চরিত্র দিনকে দিন বদলাচ্ছে। আগে জ্বরের মেয়াদ থাকত ৩-৪ দিন। এখন ৫-৭ দিনের আগে জ্বর নামার নাম নেই। কখনও আরও বেশি। ফলে ভোগান্তিও বেশি। বিশেষ করে বাচ্চারা ভীষণ রকম কাহিল হয়ে পড়ছে। ডাক্তারবাবুরা জানাচ্ছেন, “ এবার জ্বরের দাপট চোখে পড়ার মতো। ১০৩-১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। আর রোগী যদি শিশু হয় তাহলে মুশকিল আরও বেশি। তারা এত দুর্বল হয়ে পড়ছে যে, অনেককে হাসপাতালে ভরতি করে স্যালাইন দিতে হচ্ছে।”
এবং এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দোসর হলে দুর্ভোগের একশেষ। নেবুলাইজার, অক্সিজেন। তাতেও কাজ না হলে ভেন্টিলেশন। রবিবারও ওই হাসপাতালে তিনটি শিশুকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, আগে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ‘এইচ১এন১’ ভাইরাস ছোবল মারত। ঘরে ঘরে দেখা দিত সর্দি-কাশি-জ্বর। এখন বছরভরই ইনফ্লুয়েঞ্জার রমরমা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাসের মন্তব্য, “বর্ষাকালে সাধারণত ডায়েরিয়া মাথাচাড়া দেয়। এবার তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট।”
[মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ঘরে ফিরলেন কেরলের বন্যায় আটকে পড়া ২ হাজার বঙ্গবাসী]
সুরাহা কী?
অরিন্দমবাবু বলেন, এক্ষেত্রে হাতিয়ার বলতে শুধু প্যারাসিটামল। কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক। “কিন্তু বাস্তবটা হল, সুস্থতার জন্য শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসের স্বাভাবিক মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করণীয় নেই”- আক্ষেপ অরিন্দমবাবুর। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিরোধের পথ একটাই। আইসোলেশন। মানে আক্রান্তকে অন্তত দু’-তিনদিন একেবারে আলাদা করে রাখতে হবে। যাতে তার থেকে সংক্রমণ অন্যত্র না ছড়ায়। অর্থাৎ ভাইরাল জ্বর হলে স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারি নৈব নৈব চ। ঘরে থাকতে হবে। বাস-ট্রাম বা ট্রেনে না চাপাই ভাল। আলাদা গামছা, তোয়ালে, বাসনপত্র বা বিছানা ব্যবহার করাটাই বিধেয়। শ্যামাশিসবাবুর কথায়, “বৃহত্তর স্বার্থে এটুকু সতর্কতা নেওয়াই যায়। তাতে সবারই মঙ্গল।”
এমতাবস্থায় বাচ্চাদের অত্যন্ত সাবধানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা। তাঁদের দাওয়াই, “বাড়িতে কারও জ্বর হলে বাচ্চাকে তার আশপাশে যেতে দেবেন না। আর বাচ্চার যদি জ্বরের সঙ্গে প্রবল কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয়, অবিলম্বে ডাক্তার দেখাতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভরতি করতে হবে। অনর্থক ভয় পাবেন না।” প্রভাসবাবু জানান, “সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্টের পিছনে একাধিক জীবাণুর ভূমিকা থাকে। ব্রঙ্কিওলাইটিসের কিছু রোগীর শরীরে অ্যাডিনো ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। যা কি না ডায়েরিয়ার জন্য দায়ী বলেই মনে করা হয়। পরিণামে ডায়েরিয়ার পিছু পিছু হানা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট।” বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থসারথি ভট্টাচার্যর অভিমত, “ভাইরাসের মতিগতি বোঝা দায়। অনেক ভাইরাস শরীরে ঢুকে চরিত্র পালটে ফুসফুসে হামলা চালায়। তাই ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীরও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।”
এসবের মধ্যেও কিছুটা সান্ত্বনার বার্তা অবশ্য মজুত। বর্ষার মহানগরে যা কি না অন্যতম আতঙ্ক, সেই ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া এখনও সেভাবে রক্তচক্ষু দেখায়নি। মোটামুটি হিসাব বলছে, দেড়শোজনের জ্বর হলে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার সন্ধান মিলছে বড়জোর তিন-চার জনের শরীরে। সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক উদ্যোগের যুগলবন্দিতে এই সংকটকাল ভালয় ভালয় উতরে যাবে বলে চিকিৎসকরা আশাবাদী।
[প্রতিযোগিতার মাঝেই চুরি গেল গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়ার ল্যাপটপ, তদন্তে পুলিশ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.