অভিরূপ দাস: এক ঢিলে দুই পাখি। করোনার (Corona Virus) মাস্ক। আটকে দিচ্ছে ফুসফুসের অগুনতি অসুখ। শেষ তিন মাসে শহরের পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যক্ষ্মা ও হাঁপানির রোগীর সংখ্যা শূন্য।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাস্ক পরার জন্য নাক আর মাস্কের মাঝে আটকে থাকছে আর্দ্রতা। প্রশ্বাস নেওয়ার সময় সেই আর্দ্রতাভরা হাওয়া ঢুকছে ভেতরে। ভেজা হাওয়াই খেল দেখাচ্ছে। ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডা. অলোকগোপাল ঘোষাল জানিয়েছেন, গত ন’মাসের চিত্র থেকে পরিষ্কার করোনা তো অবশ্যই, মাস্ক পরার এই অভ্যেস বজায় রাখলে ফুসফুসের অন্যান্য অসুখ থেকেও অনেক সুরক্ষিত থাকবেন মানুষ।
কীভাবে ফুসফুসের মধ্যে রক্ষাকবচ তৈরি করছে মাস্ক? করোনা (COVID-19) ঠেকাতে এই মুহূর্তে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডা. অলোকগোপাল ঘোষাল জানিয়েছেন, যাঁরা মাস্ক পরে থাকছেন তাঁদের প্রশ্বাসের বাতাসে আর্দ্রতা অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতার ফলে সবসময় ভেজা ভেজা থাকছে শ্বাসনালি। শ্বাসনালি বা রেসপিরেটরি ট্র্যাক শুকনো হলেই বিপদ। বাতাসে কিলবিল করছে ভাইরাস ব্যাকটিরিয়া। রেসপিরেটরি ট্র্যাক শুকনো হলেই ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাসের অণুগুলো দ্রুত নাসাপথের পিছন দিকে বা গলার ভিতরের দিকে মিউকাস মেমব্রেনের ভিতরে গিয়ে সেখানকার কোষে হানা দেয়। তখনই মিউকাস মেমব্রেনের কফ ঘন হয়ে যায়। কিন্তু শ্বাসনালির ‘হাইড্রেশন’ প্রক্রিয়া সেই আক্রমণকেই আটকে দিচ্ছে।
শ্বাসনালি থেকে ফুসফুসে যাওয়ার আগে ব্যাকটিরিয়াকে ধুয়ে সাফ করে দিচ্ছে আর্দ্রতাভরা বাতাস। ফুসফুসরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ফুসফুসের অসুখ ঠেকাতে শরীরের একটি নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ডিফেন্স মেকানিজম রয়েছে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘মিউকোসিলিয়ারি ক্লিয়ারেন্স।’ ক্ষতিকর ধূলিকণা, ব্যাকটিরিয়াদের মিউকাস থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে এই প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াকেই ত্বরান্বিত করছে আর্দ্রতাপূর্ণ বাতাস।
সাধারণত বাতাসে ভাসমান কণাগুলি মূলত ০.০১ মাইক্রন থেকে ১০০ মাইক্রন পর্যন্ত আকারের। ভাসমান এই উপাদানগুলির মধ্যে থাকে ডাস্ট, ফ্লাই অ্যাশ, সিমেন্ট, কয়লার কণা, এই সমস্ত ধোঁয়া ও ধুলোভরা শহর ফুসফুসে নানারকম সংক্রমণ ঘটায়। ফলে ধীরে ধীরে ফুসফুসের কোষগুলো অকেজো হতে থাকে। শেষ তিন বছরে শহরে ডিজেল ইঞ্জিনের গাড়ি বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। ডিজেল গাড়ির সঙ্গেই দূষণ বাড়াচ্ছে শহরের একের পর এক নির্মাণকাজও। এর ফলে সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ছে। শহরের বাতাস অল্প ঠান্ডা হতেই সেই সূক্ষ্ম ধূলিকণার স্তর নেমে আসে নিচে। প্রতি নিশ্বাসে তা প্রবেশ করছে ফুসফুসে। কিন্তু মাস্ক পরে থাকলে সে ফুসফুসের বিপদ অনেকটাই কমছে। ফুসফুসরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এন ৯৫ মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। সাধারণ ত্রিস্তরীয় সার্জিকাল মাস্কই ফুসফুস রক্ষার কাজ করতে সক্ষম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.