শুভঙ্কর বসু: গন্ধ ও বর্ণে কোন ফারাক নেই। পার্থক্য শুধু দামে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে মেশানো হচ্ছে বিষ! নজর এড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে বাজারে। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের বদলে সস্তার মিথাইল অ্যালকোহল দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানাচ্ছে একদল অসাধু ব্যবসায়ী। যা দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও হরিয়ানায় এমন একাধিক অসাধু চক্রের হদিশ মিলেছে। ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৪ কোটি মূল্যের বিষাক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সেগুলি বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পরই তদন্তে নেমেছেন এরাজ্যের গোয়েন্দারাও।
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার আগেও ছিল। কিন্তু কোভিড হানা দিতেই এর চাহিদা একরকম তুঙ্গে পৌঁছয়। তাকেই পাখির চোখ করে আসরে নেমে পড়ে অসাধু ব্যবসায়ীর দল। হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির মূল উপাদান সাধারণত ইথাইল ও আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল। এর সাথে মেশানো হয় অ্যালোভেরা জেল ও বিভিন্ন ধরনের অক্সিডেন্ট। যেগুলি দামি এবং ভাইরাস মারার ক্ষেত্রে কার্যকরী এবং মানুষের শরীরেও কোনো বিরূপ প্রভাব নেই। কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির ওই মূল উপাদান অর্থাৎ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বদলে ফেলে তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে সস্তার মিথাইল অ্যালকোহল। যা সাধারণত কাঠ পালিশ ও বার্নিশের কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু শরীরে এর প্রভাব মারাত্মক। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্বাসযন্ত্রে দীর্ঘদিন মিথাইল প্রবেশ করলে তা বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর দামেও আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্রতি লিটার আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল এর দাম যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। মিথাইল অ্যালকোহল সেখানে মেলে প্রতি লিটার ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আশিসরঞ্জন দাসের কথায়, “মিথাইল অ্যালকোহল মারাত্মক বিষাক্ত। কারণ এটা খুব তাড়াতাড়ি ফরমাল ডিহাইডেডে পরিণত হয়। আর ফরমাল ডিহাইড যদি দেহে লাগাতার প্রবেশ করতে থাকে তাহলে তা শরীর থেকে বেরোনোর উপায় নেই। দীর্ঘদিন জমা হয়ে তা শ্বাসযন্ত্র বিকল করে দেবে। এছাড়াও এর প্রভাবে দেহের উপকারী প্যাথোজেন গুলো নষ্ট হয়ে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলিও বিকল হতে থাকবে। যার ফলে একজন সুস্থ মানুষের মৃত্যু ঘটবে।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপিকা রিনা ঘোষের মতে,” শুধু দেহের ভিতরেই নয় দেহের বাইরেও এর প্রভাব মারাত্মক। দীর্ঘদিন চামড়ায় এটি লাগলে ডারমাটাইটিস হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।”
জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ১ লক্ষ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর একে একে বেঙ্গালুরু চেন্নাই ও হরিয়ানার ঘটনা সামনে আসার পরই সবকটি রাজ্যকে সতর্কবার্তা পাঠায় সিবিআই। সেইমতো তদন্তে নেমেছে এরাজ্যের পুলিশও। ফলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে সংশয় থাকলে সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। যা ভাইরাস দমনে অ্যালকোহল এর থেকে বেশি কার্যকরী বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.