বৃষ্টির জল আর ঘাম, মিলেমিশে ফাংগাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এই আবহাওয়ায় খুব সতর্ক থাকুন। এসএসকেএম হাসপাতালের ডার্মাটোলজিস্ট ডা. অলিম্পিয়া রুদ্র জানাচ্ছেন এর বীভৎসতা।
বর্ষাকাল মানেই বৃষ্টি। আর বৃষ্টি মানেই শরীর-মনে একটা শান্তির সুর। গরম থেকে স্বস্তি, রোদের চোখরাঙানি থেকে মুক্তি। তবে, কথায় আছে না, ভালর আড়ালে কালো। তেমনই বেশ কিছু সমস্যাও আছে বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায়। নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বিশেষত ত্বকের জন্য বর্ষা মোটেই ভরসাযোগ্য নয়। কেন বলছি? প্রতিবছর ঠিক বৃষ্টিটা শুরু হলেই ওপিডিতে ভিড়টা বাড়তে থাকে। জুলাই মাস থেকেই ফারাকটা চোখে পড়ে। আসলে এই সময় বিভিন্ন ফাংগাস ত্বকের আনাচে-কানাচে বাসা বাঁধে। কারণ ভেজা বা আধভেজা জায়গাই এদের মোক্ষম বাসস্থান। তাই এই সময়টা ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।
চিন্তার উপসর্গ
সাধারণত ত্বকে যে কোনও স্থানেই লালচে গোল গোল চাকাচাকা দাগ দেখা দেয়। এগুলো চুলকায়, হালকা চামড়া উঠতে থাকে। অনেকের চুলকাতে থাকে। শরীরে যে কোনও স্থানে এই ফাংগাস ইনফেকশন হতে পারে। বিশেষত শরীরের ভাঁজে এমন হয়। অনেকের যৌনাঙ্গে, স্তনের নিচে, পশ্চাৎ অংশে এই সমস্যা বেশি হয়। প্রথমে চুলকানি দিয়ে সমস্যা শুরু হয়। তারপর চাকাচাকা দাগ দেখা দেয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে যদি না চিকিৎসা করানো হয়।
ভুলটা হয় যেখানে
সাধারণত এই ধরনের সমস্যা অধিকাংশ রোগীই এড়িয়ে যান। আর খুব সমস্যা হলে ওষুধের দোকান থেকে ওভার দ্যা কাউন্টার ড্রাগ কিনে লাগাতে শুরু করেন। এইভাবে নিজের ডাক্তারি নিজে করতে গিয়ে এই সমস্যা আরও জটিল হয়। প্রথম চোটে এই ধরনের ওষুধে সমস্যা কমে, তারপর আবার কয়েকদিন পর শুরু হয়। কারণ, এই ধরনের ওষুধে স্টেরয়েড থাকে। এইভাবে ফেলে রাখতে রাখতে ফাংগাস ইনফেকশন আরও বেড়ে যায়।
ফাংগাল ইনফেকশন কি ছোঁয়াচে?
এই ধরনের সংক্রমণ এমন নয় যে হাত দিলেই অন্যের হয়ে যাবে। কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। বিশেষ কিছু পরিচ্ছন্নতা মানতে হবে। শরীরের যে স্থানে ঘাম বেশি জমে সেই স্থানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। নিত্য তোয়ালে, গামছা কেচে নেওয়া প্রয়োজন। এগুলো কারও সঙ্গে শেয়ার না করাই ভাল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ত্বকের
যে কোনও স্থানে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সুপরামর্শ নেওয়া। নিজে থেকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া এই অসুখে মারাত্মক। প্রয়োজনে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রত্যন্ত গ্রামে থাকলেও এইভাবে চিকিৎসা করে এই রোগ প্রতিহত করা যায়।
বারবার ঘুরে আসে
অসমাপ্ত ট্রিটমেন্ট এক্ষেত্রে দায়ী। রিক্যালসিট্রেন্ট ফাংগাল ইনফেকশন হল, যে ফাংগাল ইনফেকশন বারবার ফিরে আসে। কী হয়, রোগী কিছু দিন ওষুধ ব্যবহার করেন। তারপর যে-ই সমস্যা একটু ঠিক হয় তখন আর নিয়মিত ওষুধ খান না বা লাগান না। নিজের মতোই বন্ধ করে দেন। কিছুদিন পর আবার সেই সমস্যা ফিরে আসে। এই করে রোগ সারার বদলে রোগ আরও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে মেন্টেনেন্স থেরাপি খুব প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ চিকিৎসক যখন ওষুধ শেষ হলে আবার পরামর্শ নিতে আসতে বলেন তখনই যেতে হবে, প্রতি ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক ত্বকের যত্ন নিতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে রোগ সারবে। না হলে ধীরে ধীরে সারা শরীরে এই ফাংগাল ইনফেকশন ছড়িয়ে যেতে পারে। বর্তমানে এমন রোগীর সংখ্যাটাও বেশ বেড়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.