কোয়েল মুখোপাধ্যায়: একবার সে মারণ রোগ থাবা বসিয়েছিল আপনার শরীরে। সময়মতো রোগ নির্ধারণ এবং চিকিৎসার ফলে সে হেরে গিয়ে পাততাড়ি গুটিয়েছে। কিন্তু যদি ফের হানা দেয় সে? আবার ফিরে আসে? দ্বিতীয় বার লড়তে পারবে তো আপনার শরীর? আবার জিততে পারবে তো দুরারোগ্য ক্যানসার রোগের বিরুদ্ধে? চিন্তায় পড়ে গেলেন না কি? উদ্বেগ করবেন না। ওতে সমস্যা আরও বাড়বে বই কমবে না। জেনে রাখুন, বিজ্ঞান বলে, বেশ কিছু এমন ‘ফ্যাক্টর’ রয়েছে যা যে কোনও সময় শরীরকে ‘সেকেন্ডারি ক্যানসার’-এ আক্রান্ত করতে পারে। অর্থাৎ রোগ ফিরিয়ে আনতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার উচিত, সেই সব শঙ্কাগুলিকে গোড়ায় নির্মূল করা, যা ক্যানসার ফিরিয়ে আনতে পারে।
তাই, সব কাজ ফেলে বরং আগে জেনে নিন সেই সব কিছু সম্পর্কে, সময় থাকতে থাকতে তা নিয়ে আলোচনা করুন আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে। কারণ, হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক, চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্য-বিশারদদের দাবি অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ এই জিনিসগুলো আপনার গোচরে থাকলে এবং তা নিয়ে সময়মতো পদক্ষেপ করলে কর্কট রোগ ফের আপনার শরীরকে আক্রমণ করলেও আগের মতোই পর্যুদস্ত হবে। হেরে বিদায় নেবে। তাই বিপদ ফের ঘনিয়ে আসার আগে তার লক্ষণগুলো জেনে রাখুন।
[তুড়িতেই ভ্যানিশ নারীদের যন্ত্রণা, গবেষণায় উঠে এল নয়া তথ্য ]
শৈশবকালীন রোগ: ১৫ বছর বয়সের আগে যদি আপনার ক্যানসার হয়ে থাকে, তাহলে বাকি জীবন আপনাকে আপনার শরীর-স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল দিতেই হবে। কারণ পরবর্তীতে এই রোগের ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে অনেকটাই বেশি। জিনসূত্রে প্রাপ্ত কিছু সিনড্রোম থেকে শৈশবে ক্যানসার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রেই সম্ভাবনা বেশি থাকে। উদাহরণস্বরূপ, লি-ফ্রমেনি সিন্ড্রোম থেকে হতে পারে সারকোমা, লিউকোমিয়া, ব্রেন এবং ব্রেস্ট ক্যানসার। চিকিৎসকরা বলছেন, শৈশবে ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তার নিরাময়ের জন্য যে চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল আপনাকে, তা-ই ভবিষ্যতে আপনার এ রোগে ফের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।
পারিবারিক ইতিহাস: এক নয়। পরিবারের একাধিক সদস্যের যদি ইতিপূর্বে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থেকে থাকে, তাহলে এখন থেকেই সাবধান। এ রোগ আপনাকেও পেড়ে ফেলতে পারে। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে আপনি আপনার জিন কোনওভাবেই বদলে ফেলতে পারবেন না। কিন্তু যেটা করতে পারেন, সেটা হল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিগুলির সঙ্গে যে যে জিনগত পরিবর্তন বা বৈশিষ্ট্য দায়ী, তা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না, তা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। আর যদি পরীক্ষায় দেখা যায় আপনার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যান। আগাম পরীক্ষা করান। তাঁর পরামর্শ নিন।
রোগের চিকিৎসা: ক্যানসার সারাতে রেডিয়েশন নিয়েছেন। করিয়েছেন কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য চিকিৎসাও। কিন্তু জানেন কি? একবার রোগ সারাতে যে যে ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাই ফের একে শরীরে ফিরিয়ে আনতে পারে। সেকেন্ডারি ক্যানসারের প্রকোপ ঘটাতে পারে। এর কারণ, প্রথমবারের চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে শরীরে এক ধরনের কোষগত পরিবর্তন ঘটে। ভিলেন সে-ই। এর থেকে বেরিয়ে আসতেও ভরসা সেই চিকিৎসা বিজ্ঞানই। দ্রুত আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
[অকালে পক্ক কেশ? সমস্যা সমাধানের কয়েকটি উপায়]
বয়স বৃদ্ধি: বয়স যত বাড়বে, ততই বৃদ্ধি পাবে সেকেন্ডারি ক্যানসারের শঙ্কা। কারণ বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোষস্তরে হওয়া ক্ষতি সারিয়ে ফেলার ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় রোগ প্রতিরোধের শক্তি হ্রাস পায়।
জীবনশৈলী: এতক্ষণ পর্যন্ত যে যে ‘ফ্যাক্টর’ নিয়ে চর্চা হল, তার মধ্যে একমাত্র এটিই আপনার হাতে। আর তা হল নিয়ন্ত্রণ। আপনি আপনার জীবনশৈলীকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখলে কিছুটা হলেও এড়াতে পারবেন ক্যানসারের ছোবল। তা, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন আপনার অবিন্যস্ত জীবনশৈলী? হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের চিকিৎসকরা বাতলে দিচ্ছেন উপায়–
১. ক্যানসার দূরে রাখে, এমন খাবার-দাবার রাখুন রোজকার খাদ্য তালিকায়। যেমন ব্রোকোলি। খান সবুজ শাকসবজি, বিনস, কড়াইশুঁটি, বেরি জাতীয় ফল, চেরি, টম্যাটো এবং বাদাম।
২. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। শরীর চর্চা করুন। গা ঘামান সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে অন্তত পাঁচ দিন তো বটেই।
৩. যথাযথ সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন নিজের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই)-কে।
৪. যদি ধূমপানের নেশা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে এই কু-অভ্যাস ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। আরও একটা কথা। এক্ষেত্রে মানসিক নিয়ন্ত্রণটাও খুব জরুরি।
৫. অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলুন।
৬. বাড়ির বাইরে গেলে ইউভিএ/ইউভিবি রশ্মি-নিরোধক সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.