Advertisement
Advertisement
Hair Colour

দু’দিনের শখে দীর্ঘদিনের মাশুল! চুলে রং করার আগে এই বিষয়গুলি জেনে রাখুন

চুলে যে আর্টিফিশিয়াল রং করা হয়, তা প্রধানত তিন প্রকার হয়।

Things you need to know before Hair Colour | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:January 4, 2023 3:54 pm
  • Updated:January 4, 2023 3:55 pm  

দু’দিনের শখ, কিন্তু ক্ষতির মাশুল দীর্ঘদিনের। সাত-পাঁচ না ভেবেই চুলে লাগাচ্ছেন আকর্ষণীয় সব রং। যার কেমিক্যাল চুল থেকে ত্বক সব ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক। এ বিষয়ে সতর্ক করলেন ডা. বি. সি. রায় হাসপাতালের ডার্মাটোলজিস্ট ডা. গৌরব রায়। তাঁর কথা লিপিবদ্ধ করলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।

‘‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।’’- বিদিশার নিশার মতো ঘন কালো চুল এখন অতীত। তিরিশের কোঠায় ঢোকা মাত্রই কাঁচা-পাকা চুল এখন অধিকাংশকেই চিন্তায় ফেলছে, এছাড়াও কেউ কেউ স্ব-ইচ্ছায় চুলে রং-ও করছে। কালো আজ আর ভাল নয়, এখন বঙ্গনারীরাও রঙিন চুলের নেশায় মেতেছেন। তাই লাল, নীল, হলুদ, সবুজ— চুলে বাদ নেই কিছুই। এই পাশ্চাত্য ট্রেন্ড আদৌ কি চুলের জন্য ভাল? শুধু চুলই নয়, শরীরেও কিন্তু এই রং বাহারের অনেক খারাপ প্রভাব রয়েছে।

Advertisement

Hair Colour

কতটা মারাত্মক?
চুলে যে আর্টিফিশিয়াল রং করা হয়, তা প্রধানত তিন প্রকার হয়। স্থায়ী, অর্ধস্থায়ী ও প্রকৃতিক রং। চুলের বাইরের স্তর অর্থাৎ কিউটিকলে কিছু কোষ থাকে, যেগুলি সমষ্টিগতভাবে বিন্যস্ত থাকে। স্থায়ী রঙে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকে যা চুলের বাইরের স্তরকে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে দেয় এবং সেই স্তরের কোষগুলো ভেঙে গিয়ে অবিন্যস্ত হয়ে যায়। আর স্থায়ী রং চুলের ভিতরের স্তর কর্টেক্সে প্রবেশ করে ও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে পিগমেন্ট বা কেমিক্যালগুলো জমতে শুরু করে। ফলে চুলের সমূহ ক্ষতি হয়।

চুলের বাইরের স্তর বা কিউটিকল চুলের নিজস্ব আর্দ্রতা ধরে রাখে। চুলের কৃত্রিম রঙে উপস্থিত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কিউটিক্যালের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন কোষের মাঝে যে কেমিক্যাল বন্ডগুলি থাকে সেগুলিকে ভেঙে দেয়। ফলে চুলের অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পায়। চুল রুক্ষ হয়ে যায়। চুলের ক্ষতির সঙ্গে ত্বকেও এই রঙের ব্যবহার মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ইরিট্যান্ট কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস অর্থাৎ রঙে উপস্থিত কেমিক্যাল ত্বকের সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জি হতে পারে।

Hair Colour 1

এর মারাত্মক ফলস্বরূপ অ্যানজিওইডিমা অর্থাৎ ত্বকে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট, পেটে ব্যথা, এমনকী, জীবনহানিও (অ্যানাফাইল্যাক্সস) হতে পারে। খুসকির সমস্যা আগে থাকলে রং করার পর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চোখ রঙের সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস অর্থাৎ চোখ লাল হয়ে ফুলে জল পড়ে। নাকের মধ্যে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হয়ে নাক দিয়ে জল পড়া ও অস্বস্তিবোধ হয়।

দীর্ঘদিন ধরে কেউ অ্যামোনিয়াযুক্ত কেমিক্যাল সমৃদ্ধ হেয়ার কালার বা ডাই ব্যবহার করলে তাদের মধ্যে কোনও জিনিসের গন্ধ না পাওয়ার মতো প্রবণতাও দেখা যায়। অ্যামোনিয়া যুক্ত ডাই ব্যবহারের সময় নিশ্বাসের মাধ্যমে সেই গন্ধ ফুসফুসে গিয়ে অ্যাজমা রোগীদের মারাত্মক ক্ষতি করে। রঙে উপস্থিত প্যারাফেলিনিনডায়ামাইন যা চুলের পক্ষে সব থেকে ক্ষতিকর বস্তু। তবে বিভিন্ন গবেষণার তথ্য এই অত্যাধুনিক চুলের রং বা ডাই থেকে ক্যানসার হওয়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি।

[আরও পড়ুন: ‘উরফির পোশাক অশ্লীল হলে কঙ্গনা কী পরেন?’, বিজেপি নেত্রীর কটাক্ষের জবাব শিব সেনার]

বাধ্যতামূলক সাবধানতা:
উপরিউক্ত তিন ধরনের চুলে ব্যবহৃত রঙের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিসাধন করে স্থায়ী রংগুলো। এতে উপস্থিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ও প্যারাফেলিনিনডায়ামাইন (PPD) চুলের বড় শত্রু। অর্ধস্থায়ী রঙে সিসা, পারদ ও বিসমাথ জাতীয় ধাতু থাকে। অ্যামোনিয়া বা PPD না থাকায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রং উঠে যায়। সুতরাং এই ধাতু মিশ্রিত রং অনেকদিন ধরে কেউ ব্যবহার করলে ধাতু শরীরে প্রবেশ করে এবং কিডনিতে গিয়ে জমা হলে ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং ন্যাচরাল হেয়ার কালার বা ডাইগুলো ব্যবহার করাই ভাল।

কারণ এই রঙগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সামগ্রিক যেমন-হেনা পাতা, চা বা কফি ফোটানো জল, বিট-গাজরের নির্যাস প্রভৃতি দিয়ে কিছু সংস্থা অ্যামোনিয়া ও পিপিডি ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করে। এতে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া বা ঝুঁকি থাকে না এবং চুলের কোনও ক্ষতিও হয় না। যাদের অ্যাজমা ও অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের জন্য কিছু বাজারচলতি মেডিকেটেড ডাই পাওয়া যায়।

Hair Colour 3

পাকা চুল গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত থাকলেও ত্বকের চামড়া থেকে সর্বদা একটু দূরে রঙ লাগানো ভাল। যাতে রং ত্বকের সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অ্যামোনিয়া যুক্ত ডাই লাগিয়ে চুল ধোয়ার সময় সেই জল ত্বকের অন্যত্র লাগলে ও এতে উপস্থিত কেমিক্যালের ঝাঁজালো গন্ধ নাক, মুখ, চোখ ও চামড়ার মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সর্বদা অ্যামোনিয়া বিহীন রংই ব্যবহার করা ভাল।
আপাতদৃষ্টিতে লাল, বাদামি বা কোনও স্থায়ী রংই চুলের জন্য সুরক্ষিত নয়।

বাজারচলতি কালো বা বাদামি রঙের হেনাও নকল হয়। এতে পিপিডি থাকে তাই চুলে লাগালে রঙ খুব গাঢ় হয়। আসল হেনার রং সবসময়ই হালকা হওয়া উচিত। ‘ফেনল’ সমৃদ্ধ যে কোনও চুলের রং ব্যবহারে চুল রুক্ষ ও নষ্ট হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চুলে রং করলে তা ত্বকের সংস্পর্শে এলে এগজিমার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া এই ধরনের কৃত্রিম রঙে হাইড্রোজেন পার‌‌‌অক্সাইড থাকে যা চুলের মেলানিন অর্থাৎ প্রাকৃতিক কালো রংকে ভেঙে দেয় ফলে চুল সাদাটে হয়ে যায়। তাই জন্যই কৃত্রিম রং ভাল ধরে। সুতরাং চুলে রং বাছাই করার আগে অবশ্যই উপাদানের কথা মাথায় রেখেই ব্যবহার করা উচিত।

Hair Colour 2

জীবনশৈলী ঠিক করা জরুরি:
চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রয়োজন চিন্তামুক্ত নির্বিঘ্ন ঘুম। সঙ্গে পর্যাপ্ত জলপান, মরশুমি ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত। ফাস্টফুড চুলের স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে। রোদে বেরোলে ছাতা ব্যবহার করা দরকার। বেশি সময় চুল ভেজা রাখা উচিত নয়। প্যারাবেন ও সালফেট মুক্ত প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ শ্যাম্পুর ব্যবহার জরুরি । গরম স্ট্রেটনিং, ড্রায়ার ব্যবহারের ফলে চুলের কোষের মাঝের ডাইসালফাইড বন্ড গুলো ভেঙে যায় ও চুলের আগা ফাটে।

[আরও পড়ুন: কতটা সাংঘাতিক করোনার নতুন প্রজাতি? নতুন বছরের সেলিব্রেশনের আগে জেনে রাখুন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement