বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: শীত (Winter) প্রায় এসে গেল ‘বলে। তবু ডেঙ্গুর দাপট কমছে না। এডিস মশারা (Aedes Mosquito) দিব্যি বহাল তবিয়তে বংশবিস্তার করে চলেছে। কী এর কারণ? বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা চালিয়ে বলছেন, এডিস মশারা বেঁচে থাকার জন্য যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা প্রয়োজন সেটা এখনও উত্তরে অনুকূলে। ওই কারণে ডেঙ্গুর (Dengue) বিপদ কমছে না। এমনই বলছেন গবেষকরা। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শীতের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এখন দিনের তাপমাত্রা গরম থাকবে। সেই হিসেবে গবেষকদের দাবি, ডিসেম্বরের আগে ডেঙ্গুর দাপট কমবে তেমন সম্ভাবনা প্রায় নেই বললে চলে।
কোচবিহারের (Cooch Behar)পুন্ডিবাড়ি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কীটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণারত পৌষব দাস বলেন, “এডিস মশার দাপট চলার অন্যতম একটি কারণ আবহাওয়ার খামখেয়ালি। নভেম্বর শেষ হতে চলেছে এখনও বেলা বাড়তে গরম অনুভব হচ্ছে।এই আবহাওয়া এডিস মশার বংশবিস্তারের সহায়ক।” তিনি জানান, সাধারণত পরিষ্কার অগভীর জলে এডিস মশা জন্মায়। গভীর জলাশয়, পুকুর, নালা এলাকায় ডেঙ্গু মশা জন্মানোর সম্ভাবনা কম। পাত্র, টায়ার, কার্নিশ, পরিত্যক্ত ফুলের টব, নারকেলের খোলা, মাটির ভাঁড়, খেলনা, বাড়ি তৈরির সরঞ্জামে জমা জলে এডিস মশা বংশবিস্তার করছে।
গবেষকরা দেখেছেন, এডিস মশা বেঁচে থাকার জন্য যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা প্রয়োজন উত্তরবঙ্গে এখনও সেই আবহাওয়া রয়েছে। শীত জাঁকিয়ে না পড়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে সেটা কমবে। কিন্তু শীত কবে জাঁকিয়ে বসবে, সেই বিষয়ে আবহাওয়া দপ্তর স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম (Sikkim) কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, “উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে উত্তরবঙ্গে শীত আসে। কিন্তু এবার এখনও উত্তুরে হাওয়া শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে পারেনি। ওই কারণে দিনের তাপমাত্রা বাড়ছে। ওই পরিস্থিতি কিছুদিন চলবে।”
পতঙ্গ গবেষকরা জানান, এখন উত্তরবঙ্গের (North Bengal) শহরগুলিতে কংক্রিট বুম চলছে। এখানে নির্মাণ কাজে পর্যাপ্ত জল ব্যবহার করা হয়। সেই জলের অনেকটা জমে থাকে। এছাড়াও এসি মেশিনের ব্যবহার বেড়েছে। এসি মেশিন ও ফ্রিজের জমা জলেও এডিস মশা বংশবিস্তার করছে। তাই শুধুমাত্র বাইরে ধোঁয়া দিয়ে, কামান দেগে মশা মেরে কোনও লাভ হচ্ছে না। উপযুক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মিলতে ঘরের ভিতরে এডিস বংশ বাড়িয়ে যাচ্ছে। কীটপতঙ্গ গবেষক পৌষব দাস বলেন, “সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে কিছু করার নেই। এমনিতেই গরমের মেয়াদ বেড়ে চলেছে। শীতের মেয়াদ কমছে। গরম পরিবেশ পেলেই মশার প্রজনন শুরু হয়ে যায়। অবশ্য সে জন্য বৃষ্টি অথবা জমা জল দরকার।” এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি টিপস দিয়েছেন তাঁরা।
ডেঙ্গু হইতে সাবধান
– এডিস মশার দেহে ও পায়ে কালো এবং সাদা চিহ্ন রয়েছে।
-এডিস মশার আয়ুষ্কাল অন্তত ৪০ দিন।
-ভাইরাসঘটিত রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী এডিস ইজিপ্টাই মশা।
-প্রবল জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি, ডায়েরিয়া।
-কোনও এডিস মশা যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে কামড়ায় তখন সেই মশার শরীরে প্রবেশ করে ভাইরাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.