রোদের দাবদাহে শরীরের প্রেশার বাড়তে পারে, আবার একদম কমে গিয়ে বিপত্তিও হতে পারে। রক্তচাপ (Blood Pressure) কমা-বাড়া সবটাই অসুখের হাতছানি। এই সময় বিশেষভাবে সাবধানতা মেনে চলার পরামর্শ দিলেন SSKM হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নীলাদ্রি সরকার।
রক্তচাপ কারও কম, কারও বেশি। বেশি-কম সবেতেই চাপ হতে পারে। বিশেষত এই গ্রীষ্মকালে প্রেশার কমে যাওয়ার বা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই এব্যাপারে এখন বেশি সতর্কতা জরুরি।
রক্তস্রোত রক্তনালির দেওয়ালে যে চাপ সৃষ্টি করে সেটিই রক্তচাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় এর পরিমাপ ১২০/৮০। এই পরিমাপের থেকে আর একটু বেশি চাপকেও স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু ১৪০/৯০-এর বেশি প্রেশার হলে সেক্ষেত্রে তা উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure)। আর সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার একশোর কম থাকলে সেক্ষেত্রে তা লো প্রেশার (Low Blood Pressure)।
Blood pressureকখন বিপজ্জনক?
এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয় যে, রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে কিন্তু ওষুধ ঠিকমতো না খাওয়ার জন্য হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়া চোখ, কিডনি খারাপ হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ প্রেশার বেড়ে গিয়ে পায়ে হতে পারে গাংরিন।
আবার, গরম মানেই শরীরে অতিরিক্ত জলের প্রয়োজনীয়তা, সঙ্গে অত্যধিক প্রদাহ। শরীরে নুন কমে যাওয়ার সঙ্গেই সোডিয়াম, পটাশিয়াম হ্রাস পেতে থাকে। গরমে প্রেশারের সমস্যা খুব স্বাভাবিক। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, প্রেশার ক্রমশই কমছে। তার কারণ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। নুনের ঘাটতি দেখা যায়।
গরমকালে জল পান পর্যাপ্ত না হলে প্রেশার হঠাৎ করে কমে যাওয়ার আরও একটি কারণ হল, হাইপোথ্যালামাস ডিসফাংশন। যখন আবহাওয়ার তাপমাত্রা শরীরের থেকে খুব বেড়ে যায় তখন মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ সেই তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
যখনই এই হাইপোথ্যালামাস ঠিক মতো কাজ করতে পারে না অথবা হাইপোথ্যালামাস ডিসফাংশন হয় তখন কিন্তু মস্তিষ্ক, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা প্রবল হয়। ফলে অতিরিক্ত গরমে হঠাৎ করে কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, চোখে ঝাপসা দেখতে পারে। তাই এই সময়ে বাইরে বেরলে অবশ্যই ছাতা, জল সঙ্গে রাখতেই হবে। পর্যাপ্ত জল পান করা আবশ্যক।
মাথা ঘুরতে পারে?
রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া ছাড়াও মাথা ঘোরার অনেক কারণ থাকতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম, বেনিন পারোক্সাইমাল পজিশন্যাল ভার্টিগো, কানের সমস্যা, টিআইএ (ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাকে কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্কে রক্তচলাচল কম যায়) ইত্যাদি। এমন হলে দ্রুত নুন-চিনির জল পান করুন। বিশ্রাম নিন কিছুক্ষণ।
সাবধান!
যাদের উচ্চরক্তচাপ বা লো-প্রেশারের সমস্যা রয়েছে তাঁরা বেশিক্ষণ গরম-রোদে থাকবেন না। নিত্য রক্তচাপ দেখা উচিত। ডায়াবেটিস থাকলে সেটাও চেকআপ করে রাখতে হবে। আর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
বিশেষত প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের মানুষদের মধ্যে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা বা সেই কারণে নিত্য ওষুধ খাওয়া কতটা জরুরি সে ব্যাপারে সচেতনতা খুবই কম। তাই নিত্য চেকআপ করানো খুবই দরকার।
আর একদিন হঠাৎ করে প্রেশার কমে গেলে তা একটু বিশ্রাম নিলে বা খাবার খেয়ে ঠিক
হয়ে গেলেও সেটা ফেলে রাখবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। শরীরে অভ্যন্তরীণ ব্লিডিং কিংবা শরীরের অন্য কোনও সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে এমন হতে পারে। প্রেশার বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে একটুও দেরি করা চলবে না।
হাঁটা-যোগে প্রেশার বশে
হঠাৎ করে প্রেশার বেড়ে বা কমে যাওয়া রোধে নিত্য এক্সারসাইজ কিংবা হাঁটা দারুণ কার্যকর। তরে গরমকালে রোদের মধ্যে না করে ঠান্ডা হাওয়া যুক্ত স্থানে, বিশেষত পার্ক, কোনও খোলা মাঠ, বড় বারান্দায় এই অভ্যাস করা ভাল।
গরমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী খাওয়া উচিত?
‘অ্যামেরিকান জার্নাল অফ হাইপারটেনশনে’র তথ্য অনুযায়ী যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেশার কমাতে এক্সপার্ট তরমুজ। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে’র সমীক্ষায় আবার দেখা গিয়েছে, টানা সাতদিন, দিনে একবার করে টকদই খেয়েছেন, তাঁদের প্রেশার যাঁরা টকদই খান না তাঁদের চেয়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই এই সময় রোজ টকদই খান। এছাড়া কলা ও দুধে উপস্থিত ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ও জামে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
এছাড়া তুলসীর রস মোক্ষম টোটকা প্রেশার ওঠা-নামা জনিত সমস্যায়। কারণ এতে সঠিক পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি ও ইউগেনোল (কেমিক্যাল কমপাউন্ড) থাকে যা শরীরে সতেজতা বজায় রাখে, এবং সহজেই প্রেশার সাধারণ মাত্রায় পৌঁছয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.