হঠাৎ দরদর করে ঘামছেন? অস্বস্তি হচ্ছে? বড় অসুখের পূর্বলক্ষণ নয় তো! এমন হলে সতর্ক হতে বললেন অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ইন্টারভেনশন্যাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. বিকাশ মজুমদার। তাঁর কথা এই প্রতিবেদন লিখেছেন মৌমিতা চক্রবর্তী।
হঠাৎ করেই সকালে হাঁটতে গিয়ে মাথাটা ঘুরে যায় বছর ছাপ্পান্নর ব্যানার্জিবাবুর। তৎক্ষণাৎ ঢলে পড়েন বন্ধুর হাতটা ধরে। দ্রুত আরও কয়েকজন ছুটে আসেন। চোখেমুখে জল দেন, হাওয়া করেন। প্রথমিকভাবে ২-৪ মিনিট পর একটু সুস্থ অনুভব করেন অমল ব্যানার্জি। কিন্তু দরদর করে তখনও ঘাম হচ্ছিল তাঁর। বন্ধু স্মার্ট ওয়াচে প্রেশার মাপেন, দেখেন প্রেশার লো। ঘাম দেখে মনে হচ্ছিল, গরমে হাঁটছিলেন তাই হয়তো এমন হচ্ছে। প্রেশার কমে যাওয়ার জন্য মাথাটা হয়তো ঘুরে গিয়েছি। তবুও দেরি না করে একবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসিজিতে এল হার্টে ব্লক। যদিও সময়ে চিকিৎসা শুরু করায় তিনি এখন ভাল আছেন। তবে ক’জনই বা এমন সচেতন আজকাল?
আসলে গরমের ঘাম ভেবে অনেকেই সমস্যা হলেও চেপে যান। এতে করেই আকস্মিক দুঃসংবাদ শুনতে হয় আজকাল। আসলে বেশি ঘাম হওয়াটাই একটা মারাত্মক লক্ষণ। গরমকালে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার ভেবে একেবারেই এড়িয়ে যাবেন না। এব্যাপারে উদাসীনতা কাজ করলেই বিপদ।
গরম ছাড়াও অন্য কারণে
হার্টের সমস্যা
ঘামের সঙ্গে বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং বুকে চাপ অনুভব ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকলে সেটি হার্টের রোগের লক্ষণ। হার্টের সমস্যা থাকলে উপরিউক্ত লক্ষণসমূহ ও প্রচণ্ড ঘাম প্রাণঘাতী হতে পারে। আবার কখনও হঠাৎ করে হার্টের গতি কমে হার্টরেট নেমে গেলে বা হার্টের গতি অনেক বেড়ে গিয়ে প্রচণ্ড ঘাম দিতে শুরু করে। ঘামের সঙ্গে সাময়িকভাবে অজ্ঞান হলে তৎক্ষণাৎ সাবধান হওয়া দরকার।
ব্লাড সুগার ও থাইরয়েডের ওঠানামা
ডায়াবেটিস রোগীদের অতর্কিতভাবে ব্লাডসুগার কমে গেলে শরীরে অস্বস্তির সঙ্গে প্রচুর ঘামের সৃষ্টি হয়। থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতার কারণে বেশি ঘাম হতে পারে। হাইপার থাইরয়েডের জন্য মানুষের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়, ফলে রোগীর খিদে বেড়ে যায় কিন্তু তারপরও সে রোগা হতে শুরু করে, ওজন কমতে থাকে এবং প্রচণ্ড ঘামের প্রবণতা বেড়ে যায়।
সংক্রমণ ছড়ালে
সেপসিস অর্থাৎ আচমকা রক্তে কোনও প্রকার ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে শরীরকে উত্তপ্ত করে দেয় ও ব্লাড প্রেশার নেমে যেতে পারে। তখন ঘামের পরিমাণ বাড়তে থাকে। আবার হার্ট অ্যাটাক করলে রোগী তখন কার্ডিওজেনিক শকে চলে যায় অর্থাৎ সিস্টোলিক প্রেশার খুব কমে গিয়ে ৯০ এর মধ্যে নেমে যায়, তখন হার্ট শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত রক্ত পাম্প করে শরীরকে প্রদান করতে পারে না এবং রোগীর দেহ ঠান্ডা হয়ে প্রচণ্ডমাত্রায় ঘাম বা শীতল ঘাম নির্গত হয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
ব্রেন স্ট্রোক
আচমকা মাথার যন্ত্রণা, শরীরে প্যারালাইসিসের মতো অনুভূতি হলে প্রচুর ঘাম হয়। সেই পরিস্থিতি স্ট্রোকের কারণেও হতে পারে।
নিউরোলজিক্যাল সমস্যা
মাথায় টিউমার, খিচুঁনির মত যেকোন নিউরোলজিক্যাল সমস্যার অগ্রিম পর্যায়ে অতিরিক্ত ঘামের লক্ষণ অবশ্যম্ভাবী। শুধু সঠিক সময়ে তা বুঝতে পারলে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
টেনশন ও ভয়
শরীরে কোনও স্ট্রেস, টেনশন বা ভয়ের কারণ হলে অ্যান্ড্রিনালিন ও নন্-অ্যান্ড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায় এবং ঘামের সৃষ্টি করে। যদিও এই ধরনের ঘাম খুব বিপজ্জনক হয় না।
কী করবেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.