ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ঘরে ফিরল কন্যে। ঠিক ঘড়ি ধরে সময় মিলিয়ে। বিশ্বজুড়ে হুল্লোড়। পুষ্পবৃষ্টির মতো অবিরল ধারায় শুভেচ্ছা। কিন্তু আজন্মলালিত এই ভুবনে ফিরে ভালো থাকবেন তো সুনীতা ইউলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী নভোচররা? ধরে নেওয়া যাক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সব ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা হল টানা আটমাস ‘মহাশূন্যে মহাকাশে’ থাকার ফলে হাঁটতে ভুলে গিয়েছেন তাঁরা। ভুলে গিয়েছেন শুতে। কারণ মহাশূন্যে ভর নেই যে! তাঁরা ভেসে বেড়াতেন। খেতেন এলিমেন্টারি ফুড। দিনে বরাদ্দ ছিল ১.২ লিটার জল। যে জল রিসাইকেল হত আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে।
ফ্লোরিডায় এই মুহূর্তে অন্তত ৫২ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক-গবেষক তাঁদের চিকিৎসায় ব্যস্ত। এঁদের কেউ কার্ডিওলজিস্ট, কেউ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, কেউ রেটিনা বিশেষজ্ঞ, কেউ হরমোন বিশেষজ্ঞ আবার কেউ মাসকুলার অর্থোপেডিকস সার্জন। আইপিজিএমআরের অধ্যাপক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, “ভরহীন স্পেস স্টেশনে এবং মহাকাশে এতদিন থাকার ফলে সব নতুন করে শিখতে হবে। হাঁটাচলা, খাওয়া দাওয়া, ঘুম- সব খুব সতর্কতার সঙ্গে শিখতে হবে। কারণ মহাকাশ থেকে মাটিতে পা দিলেই মস্তিষ্কের রক্ত দ্রুত পায়ে নেমে যাবে। ফলে শরীরের ঊর্ধ্বাংশে রক্ত সঞ্চালন কমতে থাকবে। ফলে হাঁটাচলার ভারসাম্য থাকবে না। এলোমেলো পা পড়বে। এতদিন বুকে চাপ ছিল না। ফুসফুসকে আরও জোরে রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। ফলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে মর্তলোকের প্রথম মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং কিন্তু ফিরে আসার কিছুদিন পরে হৃদরোগে মারা যান।”
রাজ্যের যেসব গবেষক, ডাক্তার, অধ্যাপক সুনীতা উইলিয়ামসের (Sunita Williams) ফিরে আসা নিয়ে যুগপৎ উদ্দীপ্ত ও উদ্বেগের প্রহর গুনছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক ডা. শান্তনু দত্ত। শান্তনু বলেছেন, “আপাতত তিনমাস হুইল চেয়ারেই থাকতে হবে। চলবে মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। মনে রাখতে হবে, মাধ্যাকর্ষণে ঢুকে পড়ার পর স্পেস শাটলের বাইরের তাপমাত্রা ছিল ৩ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ভিতরের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক। মজার ব্যাপার হল স্পেস শাটলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ ধরনের গগলস পরে নিয়েছেন চার মহাকাশচারী। কিন্তু পৃথিবীর মধ্যে ঢুকে পড়ার পর তীব্র অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে চোখ তখনই নষ্ট হতে পারে। অথবা পরে রেটিনায় খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মহাকাশে যেভাবে জীবন কাটিয়েছেন অন্তত দেড় মাস সেভাবেই বিশেষজ্ঞদের তদারকিতে থাকতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে হাটতে শেখা, স্বাভাবিক খাবার এবং জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। সূত্র বলছে এই আটমাসে অন্তত ১২০টি দেশের গবেষক মহাকাশ সর্ম্পকে প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন। সুনীতা এবং তাঁর তিন বন্ধু প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাঠিয়েছেন। চাঁদে ফাইভ-জি মোবাইল সংযোগ চালু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মাটিতে নামার সময় প্রায় ছ’মিনিট নাসার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এমনটা কেন হল জানতে চান বিশ্বের তাবৎ বিজ্ঞানীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.