অভিরূপ দাস: কিছুদিন আগেই হলিউডের সুপারহিট সিনেমা ‘বার্বি’ (Barbie) ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুন ট্রেন্ড এনে দিয়েছে। বার্বি সেজেছিলেন অভিনেত্রী মার্গট রবি। গোলাপি রঙের সেই বার্বি সাজেই মজেছে গোটা বিশ্ব। পোশাক, মেক-আপ, সবই হয়ে দাঁড়ায় ফ্যাশন আইকন। তবে বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জান্নাতুল পারভিনকে মেক-আপ নিতে হয় না। ধবধবে সাদা রেশমের মতো চুল, ফ্যাটফেটে সাদা চোখের পাতা। গায়ের রং পুতুলের মতো গোলাপি। হাত, পা, ঠোঁট দেখলে কে বলবে রক্তমাংসের মানুষ? জন্ম থেকেই সে ‘বার্বি গার্ল’!
রূপকথা যেন নেমে এসছে বাস্তবের মাটিতে। পাঁচ বছরের জান্নাতুল আদতে আক্রান্ত জিনের এক জটিল অসুখে। চলতি কথায় যাকে বলে ‘বার্বি গার্ল সিনড্রোম’। চিকিৎসা পরিভাষায় ‘অ্যালান আইল্যান্ড আই ডিজিজ।’ ডাক্তারবাবুরা জানিয়েছেন, বিরল এই অসুখের জন্য দায়ী এক্স ক্রোমোজোমের (X Chromosome) জিনের এক মিউটেশন।
অদ্ভুত এই অসুখের নামও আদতে একটি দ্বীপের নামে। অ্যালান আইল্যান্ড। বথনিয়ার সমুদ্রে পুঁচকে দ্বীপে প্রথম এই অসুখের দেখা মিলেছিল। সে অনেককাল আগে, ১৯৬৪ সালের কথা। বিরল বললেও কম বলা হয়। ১০ কোটিতে নাকি একজন আক্রান্ত হন এমন অসুখে। সারা পৃথিবীতে এ অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একশোরও কম। তেমনই রোগীর সন্ধান মিলেছে শহরের শিশু হাসপাতালে।
ভূমিষ্ঠ হওয়া ইস্তক গোলাপি। পাড়ার লোক মজা করে বলতেন, বার্বি এসেছে। এটা যে অসুখ, তা ধরতেই পারেননি পরিবারের লোকেরা। প্রথম ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে শিশুটিকে নিয়ে যায় জান্নাতুলের পরিবার। পুতুলের মতো মুখ-চোখ, ঠোঁট, মাথায় মসৃণ রেশম চুল। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধ্যক্ষ ডা. জয়দেব রায় প্রথম জিন পরীক্ষা (Gene Test)করতে বলেন। জিন টেস্ট করে দেখা যায়, বিরল জিনের অসুখে আক্রান্ত জান্নাতুল। এখন বিসি রায় শিশু হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা. আবু ওবায়েদের অধীনে চিকিৎসা চলছে জান্নাতুলের। তাঁর কথায়, ‘‘একাধিক সমস্যা রয়েছে শিশুটির। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা রয়েছে, ত্বক, চুল, চোখের পাতায় জৈব রঞ্জক পদার্থের অনুপস্থিতিতে সমস্ত কিছুই ধবধবে সাদা। আপাতত তাকে সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা থাকতে হবে সানস্ক্রিন মেখে।’’ ফের যদি একটা সন্তান হয় ওই দম্পতির, সেও কি একই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে? তা জানতে হলে মা-বাবার জেনেটিক এক্সাম সিকোয়েন্স করতে হবে। সে টেস্টের খরচ প্রায় একলক্ষ টাকা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এমনিতে কোনও শারীরিক অসুবিধা নেই জান্নাতুলের। সমস্যা একটাই। অদ্ভুতভাবে ফরসা। সূর্যের আলোর (Sunlight) তেজ ম্রিয়মান হওয়ায় বিদেশে যেমনটা দেখা যায়। ত্বক এত ফরসা হলে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে কারণে শিশুটিকে ২৪ ঘণ্টা সানস্ক্রিন (SunScreen) মেখে থাকতে হবে। সাধারণত জিনের এই অসুখে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা যায়। যদিও এখনও জান্নাতুলের দৃষ্টি ঠিকই আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি মাসে একবার তাঁকে শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে। জিনের মিউটেশনের কারণে সৃষ্ট এ অসুখ কোনও ওষুধেই সাড়ে না। মৃত্যু ইস্তক ‘বার্বি গার্ল’ হয়েই থাকবে জান্নাতুল। তবে অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো এড়িয়ে চলতে হবে তাকে। সারাজীবন খেতে হবে ভিটামিন ডি থ্রি (Vitamin D3) ট্যাবলেট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.