গৌতম ব্রহ্ম: কামরাঙার কামড়ে বিকল হচ্ছে কিডনি। চিন্তিত চিকিৎসকমহল। তাঁদের মত, কামরাঙার মধ্যে অত্যধিক পরিমাণ অক্সালেট ও নিউরো টক্সিন থাকে। যা দফারফা করে দিচ্ছে কিডনির। ডেকে আনছে বিপদ। এমনকী মৃত্যুও। নেফ্রোলজিস্ট বা কিডনি বিশেষজ্ঞরা তাই পইপই করে বারণ করছেন। বলছেন, ‘কামরাঙা নৈব নৈব চ’! বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে কিডনির রোগের ইতিহাস আছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপেও কামরাঙা বিপজ্জনক।
কামরাঙার এই কিডনি-খেকো বৈশিষ্ট্য অনেকেরই অজানা। তাই কামরাঙায় কামড় দিয়ে অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছেন বহু মানুষ। ‘কিডনি কেয়ার সোসাইটি’-র প্রতিষ্ঠাতা ডা. প্রতিম সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, গ্রাম বাংলায় এই ফলটির জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে। কলকাতার ফুটপাতেও ঢেলে বিক্রি হয়। হালকা নুন দিয়ে মেখে খাওয়া হয়। কিডনির সমস্যা না থাকলে একটু-আধটু খাওয়া যেতেই পারে এই ফল। কিন্তু, সমস্যা থাকলে ধারেকাছেই যাওয়া উচিত নয়। কাঁচা বা টক কামরাঙার রস বেশি ক্ষতিকর। মিষ্টি কামরাঙা তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত স্থূলকায় ভুগছেন এবং কিডনির রোগের ঝুঁকিতে আছেন অথবা যাদের কিডনিজনিত রোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের কামরাঙা না খাওয়াই ভাল।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ মিলিলিটার কামরাঙার জুসে ০.৫০ গ্রাম অক্সিলিক এসিড রয়েছে। কামরাঙার মধ্যে নিউরো টক্সিনও রয়েছে। যাদের কিডনি দুর্বল বা অকার্যকর তাদের কিডনি এই মারাত্মক নিউরো টক্সিনকে বের করে দিতে পারে না। তখন এটি ব্রেন এবং নার্ভাস সিস্টেমের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে মাথা ঘোরা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, খিচুনি হওয়া, অজ্ঞান হয়ে পড়া এমনকি কোমাতে চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। ডাক্তারবাবুরা জানিয়েছেন, কামরাঙার রস খাওয়ার ফলে কিডনি ফেলিওর হতে পারে। যাদের ডায়ালসিস চলছে বা কিডনিতে পাথর রয়েছে তাঁরা কামরাঙা গ্রহণ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদেরও কামরাঙা এড়িয়ে চলা উচিত। খেলে গর্ভজাত শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
তবে কামরাঙার সবই যে খারাপ তা নয়। কামরাঙার অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। এই ফল রুচি ও হজমশক্তি বাড়ায়। পেটের ব্যথায় কামরাঙা খুব উপকারী। এটি অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। রক্ত পরিশোধন করে। কামরাঙা পুড়িয়ে ভর্তা করে খেলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। দীর্ঘদিনের জমাট সর্দি বের করে দিয়ে কাশি উপশম করে। শুকনো কামরাঙা জ্বরের জন্য খুব উপকারী। কৃমির সমস্যা সমাধানে কামরাঙা কার্যকর। এমনটাই জানাচ্ছেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.