অভিরূপ দাস: একরত্তির থেকে মা-বাবা। সেখান থেকে দাদু-দিদা। গোটা বাড়ি কাশছে। হাঁচছে। গলাব্যথায় ত্রাহি ত্রাহি রব। বাংলায় ঘরে ঘরে এখন ঘরঘর করছে বুক। কীভাবে মুহূর্তে গোটা বাড়ি হাসপাতাল? চিকিৎসকরা বলছেন, মাঘের ব্যামোর নেপথ্যে মূলত রেসপিরেটরি ‘সিনসিশাল ভাইরাস’। যা ছড়াচ্ছে হাঁচি-কাশির থেকে ছিটকে বেরনো ড্রপলেটের মাধ্যমে। খালি চোখে তা দেখা যায় না। কিন্তু বাসের সিটে পাশে কেউ হাঁচলে সে ড্রপলেট এসে লাগে মুখে-নাকে। সেখান থেকেই ভাইরাসের শরীরে প্রবেশ।
ভয়টা সেখানেই। কাশির গতিবেগ ঘণ্টায় পঞ্চাশ মাইল। একবার কাশলে ৩ হাজার ড্রপলেট ছড়ায় তার মাধ্যমে। অন্যদিকে হাঁচির গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল। একবার হাঁচলে ১ লক্ষ ড্রপলেট ছড়ায়। দু’হাত দূরে কেউ হাঁচলেই তাই নিস্তার নেই। স্কুল, কলেজ, অফিস-কাছারি, গণপরিবহণ থেকে ছড়াচ্ছে অসুখ। একজন থেকে অনেকজনের। ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ড্রপলেট হল মানুষের মুখ বা শ্বাসনিঃসৃত স্যালাইভা, যার মধ্যে গিজগিজ করছে ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস। খালি চোখে এই ড্রপলেট দেখা যায় না। রেসপিরেটরি ভাইরাস আক্রান্তদের শ্বাসপ্রশ্বাস, কথা বলা বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই অদৃশ্য ড্রপলেট বাতাসে মিশে যায়। সুস্থ মানুষের শ্বাসের সঙ্গে জীবাণুরা শ্বাসনালিতে প্রবেশ করছে। তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চেম্বারে বাড়ছে ভিড়। ‘‘মাস্ক পরেন তো?’’ এমন প্রশ্নের উত্তরে অসুস্থরা জানাচ্ছেন, করোনার সময় পরতাম। তারপর আর..।’
ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, মাস্কই পারে এই ভাইরাসকে ঠেকাতে। শিশুদের মধ্যেও এই ভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, স্কুলে একসঙ্গে অগুনতি শিশু। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ড্রপলেট সহজেই ঢুকে যাচ্ছে একরত্তির মধ্যে। তাকে আদর করতে গিয়েই দাদু-দিদার সর্বনাশ। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ, স্কুলে একরত্তিকে মাস্ক পরিয়ে পাঠান। ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, ড্রপলেটের আকৃতি এরোসলের থেকে বড়, তাই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে অযথা আতঙ্কিত হতে বারণ করেছেন চিকিৎসকরা।
ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ, আপাতত ফ্রিজের খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ। সারাদিন ঈষৎ উষ্ণ গরম জল। গা ম্যাজম্যাজ করলে প্যারাসিটামল। তবে হাঁপানি অথবা সিওপিডি জাতীয় ফুসফুসের অসুখ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, মূলত রেসপিরেটরি সিনসিশাল ভাইরাস আর অ্যাডিনো ভাইরাসের দাপটই এখন বেশি। এই দুই ভাইরাসই আটকাতে পারে মাস্ক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.