সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত জল পান করা খুব জরুরি। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলি জলের উৎস। যার মধ্যে অন্যতম ফল (Fruits)। কোন ফলে কতটা জল রয়েছে, জানাচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায়।
গরম পড়তে না পড়তেই শরীরে জলের টান। এই আবহাওয়ায় যেমন জল বেশি খেতে হবে, সঙ্গে জলের চাহিদা পূরণ করে এমন খাবারও ডায়েটে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে ৬০ শতাংশই জল। তাই জলের চাহিদাও প্রচুর।
জলের অভাবে শরীরের একাধিক ক্ষতি হতে পারে –
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি, রক্ত সঞ্চালন, মুখে লালা তৈরিতে, পুষ্টি অনুঘটক, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা— এই সব শারীরিক ক্রিয়াকলাপগুলি সচল রাখতে জলের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পর্যাপ্ত জলের অভাবে পেশিতে টান ধরতে পারে। শরীরে ক্লান্তিভাব দেখা যায়। কিডনির কার্যকারিতা ঠিক রাখতে জলপান জরুরি। এছাড়া ওজন কমাতেও প্রচুর জলপান দরকার। খাবার খাওয়ার ঠিক ৩০ মিনিট আগে জল পান করলে খিদে বাড়ে, বিপাকের হার বৃদ্ধি ঘটে, শরীরে ক্যালোরি ক্ষয় হতে সাহায্য করে। জল ছাড়া গ্রিন টি-র মতো পানীয়ও শরীরকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। ত্বক তরতাজা রাখতে, মানসিকভাবে স্বতঃস্ফুর্ত থাকতে সাহায্য করে।
তবে যতটা জলের প্রয়োজন শরীরে তার সবটাই জলপানের দ্বারা নয়, খাবারের মাধ্যমে শরীরে অনেকটা জলের চাহিদা মেটানো যায়। বিশেষত কিছু ফল রয়েছে যেগুলি খেলে জলের জোগানও দেওয়া যায় শরীরে।
তরমুজ – তরমুজে ৯২ % জল আছে, যা সহজেই গরমকালে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা মেটায়। শুধু তাই নয়, তরমুজে উপস্থিত আরও পুষ্টিগুণ হার্টের নানা সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
আম – সাধারণত আমে ৮৩ শতাংশ জল থাকে। বেশিরভাগ মানুষই এই ফল খেতে পছন্দ করেন। এই ফলে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমে রয়েছে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন যা চোখের জন্যেও অত্যন্ত ভাল।
লেবু – লেবুতে ৮৭ শতাংশ জল থাকে। শরীর হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি লেবু এনার্জি বৃদ্ধি করে। বিশেষত যাঁরা ব্যায়াম করেন, তাঁদের প্রতিদিন খাওয়া উচিত। এটি ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ, তাই ত্বকের জন্যেও উপকারী।
আপেল – আপেলে ৯৬ শতাংশ জল থাকে। প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে রোগব্যাধি দূরে থাকে। আপেল বিপাকক্রিয়ার উন্নতি করে, হার্টকে সুস্থ রাখে এবং রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন এবং খনিজ, দাঁত ও হাড়কে শক্তিশালী করে এবং ত্বককে সুস্থ রাখে।
আনারস – আনারস একটি সুস্বাদু ও সরস ফল। এতে ৮৬ শতাংশ জল রয়েছে। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। আনারসে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা হাড়ের জন্য উপকারী। এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।
পেঁপে – পেঁপেতে জল ছাড়াও ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ পেঁপে খুব উপকারী।
ব্লুবেরি – ব্লুবেরিতে ৮৪ শতাংশ জল আছে। ব্লুবেরি রক্তকে বিশুদ্ধ করে। এটিতে সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। বহু মানুষ কাশি এবং সর্দি নিরাময়ের জন্যও ব্লুবেরি খান।
শশা – এতে প্রায় ৯৬ শতাংশ জল থাকে, এছাড়া রয়েছে প্রচুর ডাইজেস্টিভ এনজাইম যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরে জল ধরে রাখতেও এর জুড়ি নেই। রয়েছে প্রচুর ফাইবার। তাই কনস্টিপেশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
ডাবের জল – অতিরিক্ত গরমের প্রয়োজনীয় জল শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা হয়। ডাবের জল শরীরে এই জলের ঘাটতি পূরণ করে। এতে আছে কার্বোহাইড্রেট যা এনার্জি বাড়ায়। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণ করে।
তালশাঁস – তালের শাঁসে রয়েছে ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সাহায্য করে। তালশাঁসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। কচি তালের শাঁস বমিভাব, লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তাল্পতা প্রতিরোধেও উপকারী এই সুস্বাদু ফল
আখের রস – আখ বা আখের রস হল প্রাকৃতিক মিনারেল ওয়াটার। পেটের সমস্যা বা ডিহাইড্রেশনের জন্য এটি খুব উপকারী। দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাড়ন্ত শিশুরা যদি আখের রস চিবিয়ে পান করে তাহলে তার দাঁতের সমস্যা অনেকটাই লাঘব হয়। আখের রসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও এন্টিঅক্সিড্যান্ট যা ব্রেস্ট ক্যানসার এবং প্রস্টেট ক্যানসার নিরাময়ে কাজ করে।
আঙুর – আঙুরে প্রায় ৮১% জলীয় অংশ রয়েছে। এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্র থেকে অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং কিডনির উপর চাপ কমায়। আঙুর মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস যেমন, কপার, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজে ভরপুর একটি ফল যা হাড়ের গঠন এবং মজবুত হওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিডনির যে কোনও সমস্যা থেকে আমাদের মুক্ত রাখে।
লিচু – মৌসুমি ফল হিসাবে লিচু অসম্ভব উপকারি একটি ফল। প্রতিটি লিচুতে প্রায় ৮৪% জল থাকে যা ডি হাইড্রেশন উপশমে বিশেষ কার্যকরী। লিচু ক্যানসারের নোভিস কোষগুলিকে ধংস করে। ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হ্রাস করে। প্রচুর ফাইবার ও জল যা হজমে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
জামরুল – এতে প্রায় ৮৩% জল রয়েছে। এছাড়াও ফ্ল্যাভনওয়েড ও ফাইটকেমিক্যাল সমৃদ্ধ জামরুল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এই ফলের গ্লাইসেমিক লোড খুব কম হওয়ায় ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই রসালো ফল মস্তিষ্ক ও লিভারের যত্নে টনিক হিসাবে কাজ করে।
অতিরিক্ত জল পানও কিন্তু বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই প্রয়োজনের বেশি জল পান একেবারেই নয়। তার চেয়ে বরং গরমকালে জলের পাশাপাশি এই ফলগুলিও খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.