ঋতুস্রাবের আগে-পরেই ত্বকে র্যাশ, চুলকানি! এর পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সতর্ক করলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডার্মাটোলজিস্ট ডা. অভিষেক দে।
একে তো ঋতুস্রাবের (Periods) কষ্ট, তার সঙ্গে যুক্ত হয় একাধিক সমস্যা। কারও পেটে, কোমরে ব্যথা, কেউ অসম্ভব ক্লান্ত, কারও মনের উপরে চাপ বা মুড সুইং। তাছাড়াও অনেকেরই এই সময়টায় ত্বকে ব্রণর সমস্যা বেড়ে যায়। শত চেষ্টা করেও কিছুতেই আয়ত্তে আনা যায় না এই ধরনের ত্বকের সমস্যা।
কেন এমন হয়?
আসলে, মহিলাদের পিরিয়ড হওয়ার আগে হরমোনাল সাইকেল চলে। প্রথমে ওভ্যুলিউশন, তার আগে ইস্ট্রোজেন ডমিনেটেড ফেজ থাকে, তারপর প্রোজেস্টেরন ডমিনেটেড ফেজ থাকে। এই পুরো ফেজ সঠিক পর্যায়ে হতে থাকলে সব কিছুই স্বাভাবিক থাকে। কোনও একটি পর্যায়ে সমস্যা হলে তখন ঋতুস্রাবে সমস্যার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক সমস্যা দেখা দেয়। যার মধ্যে অন্যতম ত্বকের সমস্যা।
কী ধরনের সমস্যা হয়?
- মাসিকের ১২-১৩ দিন পর, ওভ্যুলিউশনের সময় শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। তখন প্রোজেস্টেরন ডার্মাটাইটিসের প্রবণতা বাড়তে থাকে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, একজিমার সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষত যাঁদের সেনসিটিভ ত্বক তাঁদের এই সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক অসম্ভব চুলকাতে থাকে। র্যাশ বের হয়।
- ঋতুস্রাব শুরু হলে, সেই সময় শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যেতে থাকে। ফলে মুখে খুব ব্রণ বের হয়। বিশেষত যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক ও পলিসিস্টিক ওভারি রয়েছে তাদের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
লক্ষণ
- ঋতুস্রাবের জন্য ব্রণ, র্যাশ বা ত্বকের সমস্যা হচ্ছে তা কিছুদিন লক্ষ করলেই বোঝা যাবে।
- ত্বক খুব তৈলাক্ত হতে দেখা যায়।
- তলপেটে ব্যথা
- গোপনাঙ্গে র্যাশ
কারণ
- যাঁদের সেনসিটিভ স্কিন ও যাঁদের হরমোনাল সমস্যা (পলিসিস্টিক ওভারি) রয়েছে তাঁরাই এই সমস্যায় ভোগেন।
- অধিকাংশের ক্ষেত্রে হতে পারে ফাংগাল ইনফেকশন যেমন, টাইক্রোমোনাস, ক্যান্ডিডা ইত্যাদি। ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশনও হতে পারে। যদি মাসিকের সময় ঠিকভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় না থাকে। যা মারাত্মক আকারে হলে টক্সিক শক সিনড্রোমও হয় অনেকের।
- শুধু ঋতুস্রাব নয়, যাঁদের সাদাস্রাবের সমস্যা রয়েছে তাঁদেরও কিন্তু সেই কারণে ত্বকে নানা প্রকার র্যাশ বেরতে পারে। ক্যান্ডিডা ইনফেকশন হয়।
- অনেকেই গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখতে নানা প্রকার ওয়াশ ব্যবহার করে, যা থেকে ইরিটেন্ট কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হতে পারে। ত্বক খুব জ্বালা করে, র্যাশ বেরোয়।
- মুখে হঠাৎ করেই ব্রণর সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধ
- হরমোন সম্পর্কিত ত্বকের এই সমস্যা প্রতিরোধ বা প্রতিকার করতে সর্বপ্রথম দরকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের কিন্তু ব্রণর সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন।
- ওভারিতে সিস্ট থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে।
- মিষ্টি খাবার, সফ্ট ড্রিংক্স, তেলেভাজা, চকোলেট, দুগ্ধজাতীয় খাবার (চিজ, ঘি, বাটার, পনির) এড়িয়ে যেতে হবে। বিশেষত ঋতুস্রাবের সময় একেবারেই এগুলি খাওয়া চলবে না।
- পেট পরিষ্কার রাখতে হবে। পর্যাপ্ত জল পান জরুরি। শাক-সবজি, ফল খেতে হবে।
ড্রাই একজিমা অনেক ক্ষেত্রে গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট সেবনের জন্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে গাইনোকলজিস্টের পরামর্শমতো ওষুধের ধরন পালটাতে হবে।
- মুখে ব্রণর আধিক্য বাড়লে, ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো অয়েল ফ্রি ফেসওয়াশ ব্যবহার করা জরুরি। প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হবে।
- একজিমার সমস্যা থাকলে, সেক্ষেত্রে মেডিকেটেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি।