সুমিতা ভাস্কর: করোনার (CoronaVirus) থেকেও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কী হবে তার চিকিৎসার উপায়? সেটাই। কারণ ভ্যাকসিন ‘তৈরির’ প্রক্রিয়া চললেও এখনও তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়নি বলেই খবর। অন্যদিকে, এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি তার প্রকৃত চিকিৎসা পদ্ধতিও। সেই কারণেই প্রতিষেধক খুঁজে আপাতত ঢাল তৈরির চেষ্টা চলছে। তাই এখনও পর্যন্ত উপায় শুধুই ইমিউনিটি বাড়িয়ে যাওয়া।
বছর ঘুরতে চলল, গোটা বিশ্ব নিজেকে যতটা সম্ভব ঘরে বন্দি করে, সোশ্যাল ডিসট্যান্স মেনেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফের একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, ঘরে বন্দি থাকুন আর যা-ই করুন না কেন নিজেকে সচল রাখতেই হবে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে। অতিমারীর কালে সেটা কিন্তু যাকে বলে ‘মাস্ট’। সচল থাকাটাই দূরে রাখবে ভয়ানক এই রোগকে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের জন্যই এই নিয়ম। এবং যে হিসেবটা দেওয়া হয়েছে ‘WHO’র তরফ থেকে সেখানে বলা হয়েছে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট পর্যাপ্ত শারীরিক কসরত করতেই হবে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য অঙ্কটা একটু আলাদা। তাদের জন্য এই কসরতের পরিমাণ দিনে অন্তত এক ঘণ্টা। আর মাথায় রাখতে হবে ‘এভরি মুভ কাউন্টস’ অর্থাৎ যা-ই করা হোক না কেন ‘সবকা হিসাব রাখখা জায়েগা’।
আসলে গত দশ-এগারো মাসে সকলেরই কাজের ধরনটা ঘরের চৌহদ্দির মধ্যে হয়ে যাওয়ায় শারীরিক কসরত প্রায় শূন্যে এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ ঘরে আরও বলা ভাল চেয়ারে বন্দি করে। তা ওয়ার্ক ফ্রম হোম হোক বা অনলাইন ক্লাস, তার ফাঁকে টিভি দেখা হোক বা মুঠোফোনে সিনেমা কিংবা সিরিজ। এর ফলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা যেমন বাড়তে পারে তেমনই বাড়তে পারে টাইপ টু ডায়াবেটিস কিংবা ক্যানসার। এবং এর সবকটিই বাড়িয়ে দিতে পারে কোভিডের (COVID-19) শঙ্কাও।
তাহলে উপায়টা কী?
শারীরিক কসরত করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল যে রাখতেই হবে সে কথা সমস্ত চিকিৎসকই বারবার বলছেন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. অরিন্দম বিশ্বাস বললেন, “সাধারণ কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সঙ্গে শারীরিক ব্যয়াম করা খুবই জরুরি। তবে সকালে যেমন অনেকেই গ্রুপ করে মর্নিং ওয়াকে যান এই অবস্থায় তা যাওয়া যাবে না বলাই বাহুল্য। তার বদলে ছাদে বা বাগানে হাঁটতে পারেন। অথবা ঘরের মধ্যে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। কিন্তু হাঁটতে গিয়ে যাতে কোনওভাবেই ঠান্ডা না লেগে যায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আর মাস্ক ভুলবেন না।” আরেকটা বিষয়ে তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব দিলেন, যাঁরা কোভিড থেকে সেরে উঠছেন তাঁরা যেন ব্যয়াম বা শারীরিক কসরতের ক্ষেত্রে কোনও তাড়াহুড়ো না করেন। অন্তত দুই থেকে চার সপ্তাহ পুরোপুরি বিশ্রামে থেকে তারপরই ব্যয়াম শুরু করুন।
তবে শারীরিক ব্যয়ামের বিষয়টি অন্তঃসত্ত্বা বা সদ্য মা হওয়া মহিলাদের জন্য একেবারেই প্রযোজ্য হবে না সে কথা স্পষ্ট ভাষায় জানালেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম রহমান। তাঁর কথায়, “করোনা মোকাবিলায় শারীরিকভাবে ফিট থাকা ভীষণ জরুরি। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য তো তা সম্ভব হবে না। একটা পর্যায় পর্যন্ত তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিয়ন্ত্রিত কিছু হালকা এক্সারসাইজ করতে পারেন। তবে নতুন মায়েদের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে তাঁরা ডেলিভারির একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঘরের ভিতর বা ছাদে হাঁটার মতো হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়া ভিটামিন ও মিনারেলস খাবারের মাধ্যমে নিয়ে ইমিউনিটি বাড়াতে পারেন তাঁরা।”
নিও নর্মাল লাইফে আনলক পর্বে বেশ কিছু নিয়ম বজায় রেখেই খুলেছে কিছু জিমও। তবে তার আগে থেকেই বেশ কিছু জিম অনলাইনে গ্রুপ ভিডিও কলে তাদের প্রশিক্ষণ জারি রেখেছিল। ঘরের মধ্যে বাড়ির সকলে মিলে যোগব্যায়াম করলে একই সঙ্গে শরীর ও মন দুইই সুস্থ থাকবে এমনই জানালেন ওয়েস্টবেঙ্গল কাউন্সিল অফ যোগা অ্যান্ড ন্যাচেরোপ্যাথির প্রেসিডেন্ট তুষার শীল। তিনি বলেন, “যোগব্যায়াম যেমন শারীরিকভাবে সুস্থ রাখবে তেমনই মানসিক অবসাদও দূর করতে সাহায্য করবে। ফুসফুসকে সতেজ ও চাঙ্গা রাখতে ব্যায়াম ও প্রাণায়ামের কোনও তুলনা নেই। আর ফুসফুস ভাল থাকলে করোনা মোকাবিলা করাও অনেক সহজ হবে।” একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ, “ব্যায়াম এমনিতে খুবই একঘেয়ে একটা ব্যাপার। কিন্তু তার থেকে মজা আর সুফল কেউ একবার পেয়ে গেলে তার কোনও তুলনা হয় না। বোরডোম কাটাতে ঘরের ভিতর বাড়ির সকলে মিলে যদি কিছু ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা সম্ভব হয় তাহলে সকলেই সুস্থ থাকতে পারবেন।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোমোশন বিভাগে ডিরেক্ট রডিগার ক্রেচ জানান, শারীরিক কসরত না হলে তা একদিকে যেমন রোগ বাড়িয়ে তোলে অন্যদিকে তেমনই তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। এর থেকে ক্যানসার কিংবা অ্যালঝাইমার্স সবকিছুই হতে পারে। আর শারীরিক কসরতে যেমন মানসিক উদ্বেগ কমে তেমনই স্মৃতিশক্তিও বাড়ে। গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বেই ‘সেডেন্টারি লাইফস্টাইল’ অর্থাৎ চেয়ারবন্দি জীবনযাপনের মাত্রা অনেকটাই বেড়েছে। কোভিড তাতে কিছুটা ইন্ধন জুগিয়েছে মাত্র। তার থেকে রেহাই পেতে প্রতিটি পা ফেলুন মেপে এবং বুঝে। কারণ ‘এভরি মুভ কাউন্টস’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.