বলতে পারেন জীবনে টেনশন অতিরিক্ত আপনাকে কী দেয়? দেওয়ার বদলে নেয় অনেক কিছু। যত চিন্তা করবেন, শরীর রোগের কবলেই পড়বে। তাই চিন্তাকে মাথা থেকে সরান। সুস্থ থাকার অনন্য সূত্র বললেন অ্যাপেলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হসপিটালসের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না যাঁর জীবনে কোনও টেনশন নেই। এমনকী, এই তালিকা থেকে শিশুরাও বাদ নেই। অত চাপ নিয়ে কী হবে? মনখারাপ, বিষণ্ণতার সঙ্গে শরীরের একাধিক কার্যকলাপের ওঠা-নামা শুরু হয়। যার ফলে নানা রোগের উৎপত্তি হয়। টেনশন আজকের দিনে অধিকাংশ রোগের মূল কারণ। পাাশ্চাত্যের পাশাপাশি এদেশে তথা এরাজ্যের মানুষের মধ্যে টেনশন বা উদ্বিগ্নতা মারাত্মক হারে বেড়েছে গত কয়েক বছরে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ মানুষ টেনশনের কারণে ভুগছেন। ‘বার্ডেন অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার অ্যাক্রস দ্য স্টেট অফ ইন্ডিয়া’- এই সমীক্ষার তথ্য ল্যানসেট সাইকিয়াট্রি জার্নালে প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, সাতজনের মধ্যে একজন এদেশে মেন্টাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
সম্প্রতি এই হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নিয়মিত রোগীদের শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিত পর্যবেক্ষণ করলেই সেটা পরিষ্কার টের পাওয়া যায়। আরও খারাপের দিকে যাবে পরিস্থিতি। এর জন্য কিন্তু অনেকটাই দায়ী আমরা নিজেরাই। কাজেই নতুন বছরের শুরুতে টেনশনকে বাগে আনুন। তাহলে ভাল থাকার টাইম স্প্যানটা আরও দীর্ঘায়িত হবে।
টেনশনে জেরবার, শরীর-মন ছারখার:
প্রত্যেকের জীবনেই কোনও না কোনও সময়ে টেনশন, উদ্বিগ্নতা থাকবেই। সেটা ছাড়া যেমন এগোনো সম্ভব নয় আজকের দিনে, আবার টেনশন নিয়ে থাকলে সুস্থ থাকাও দুরুহ। ক্রনিক অ্যাংজাইটি বা উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা আরও মারাত্মক। মনের পাশাপাশি অর্থাৎ চারিত্রিক পরিবর্তনের পাশাপাশি শরীরেও এর প্রভাব পড়ে। যা নার্ভাস সিস্টেম, কার্ডিওভাসক্যুলার সিস্টেম, ইমিউন সিস্টেম, রেসপিরেটরি সিস্টেম, ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ইত্যাদি নানাবিধ ক্রিয়াকলাপকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়। ক্লান্তিবোধ বা ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম হয়। পেটে আলসার, গ্যাসের সমস্যা বাড়ে, বমিভাব প্রকাশ পায়, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম হয়। অল্পবয়সিদের টেনশনের জেড়ে লিবিডো নষ্ট হয়ে যায়, যৌন চাহিদা কমে।
মন ভাল থাকে না, হতাশার সঞ্চার হয়, মানুষ খিটখিটে হয়ে যায়, মনসংযোগ করতে অসুবিধা হয়, ভুলে যায়, স্কুলে-অফিসে মন দিয়ে কাজ করতে পারে না, সারাক্ষণ মনখারাপ ইত্যাদি চলতেই থাকে। তার সঙ্গে অনেকেরই প্যানিক অ্যাটাক হয়, সারাক্ষণ হীনমন্যতা, অবসাদ কাজ করে। প্যানিকের কারণে মনের জোর কমে যায়, বুকে ব্যথা হতে থাকে, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ করে হতবাক হয়ে পড়া, হাত-পা ঘামার সমস্যা দেখা দেয়, মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়। এছাড়া এই কারণে অনেকেই অসামাজিক হয়ে পড়ে। কারও সঙ্গে মিশতে পারে না, কোনও অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। অনেকে আবার বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
হরমোনের গতি বদলায়:
ক্রমাগত বা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাংজাইটি বা মানসিক চাপ, টেনশনে থাকলে তা থাকে নানা হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়। শরীরে স্ট্রেস হরমোন বাড়তে থাকে। ক্রমাগত স্ট্রেসের জন্য কর্টিজল, অ্যাড্রিনালিন হরমোন শরীরে বেড়ে যায়। যা থেকে ওজন বৃদ্ধি হয়, সুগার, রক্তচাপও বাড়তে থাকে। ক্রমাগত পেটের সমস্যাও দেখা দেয় এই কারণে। ক্রনিক স্ট্রেসের প্রভাব ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর পড়ে তাই সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে।
বদলালে বদলাবে জীবনও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.