সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একে একে শরীরে সমস্যা বাড়ছিল। হাঁটাচলা দুষ্কর হচ্ছিল। স্তনে গজিয়েছিল অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড। একেবারে গাছের পাতার আকারে। যাকে বলে ফিলোডস টিউমার (Phyllodes Tumor)। চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রিক যে শব্দ থেকে ফিলোড শব্দটির উৎপত্তি তার অর্থই ছড়ানো গাছের পাতার মতো। একটু আধটু নয়। বালিগঞ্জের রমলা চক্রবর্তীর বুকে ডালপালা মেলা সেই পাতার আকারের মাংসপিণ্ডের ওজন ছিল সাড়ে ১০ কিলো। চালের বস্তার মতো ভারী সেই মাংসপিণ্ড ঘাড়ে ব্যথা তৈরি করেছিল।
একশোজনের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দেয় মেরেকেটে একজনের। কখনও সখনও তাও নয়। এতটাই বিরল এই টিউমার। রমলা চক্রবর্তীও (৫৫) প্রথমটায় ধরতে পারেননি। ভেবেছিলেন বুকের চোট থেকেই ফুলে গিয়েছে। মাস দুই আগে বাস থেকে নামার সময় বাসের রডে লেগে চোট পেয়েছিলেন ডান দিকের স্তনে। তারপর থেকেই খেয়াল করা শুরু করেন। রমলার কথায়, একদিন লক্ষ করি একটু উঁচু উঁচু ঠেকছে। ছোট একটা ফুসকুড়ির মতো মাংসপিণ্ড। দ্রুত সেটা বড় হচ্ছিল। চোট থেকেই হয়েছে ভেবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ খেতে শুরু করেছিলেন। লাভ হয়নি। উত্তরোত্তর বেড়েই চলছিল টিউমার। এরই মধ্যে রক্তের পরীক্ষা করিয়ে দেখা যায়, শরীরে শর্করার মাত্রা ক্রমশ নামছে নিচের দিকে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রমলা। চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্রের শরণাপন্ন হন তিনি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ধৃতিমান মৈত্র জানিয়েছেন, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ায় হাইপোগ্লাইসিমিয়া দেখা দিয়েছিল রোগীর। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রোগীর বায়োপসি করা হয়। রমলার জন্য তৈরি হয় মেডিক্যাল টিম। ডা. ধৃতিমান মৈত্র ছাড়াও যেখানে ছিলেন এন্ডোক্রাইনোলজির ডা. পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী এবং ডা. নীতি আগরওয়াল। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন চিকিৎসকরা। ডা. ধৃতিমান মৈত্রর কথায়, সন্দেহ ছিল ওই মহিলার স্তনে ‘ফিলোডস টিউমার’ ছাড়াও অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিনমা রয়েছে। এটি এক বিরল টিউমার। যার জন্য বার বার রক্তে সুগার কমে যেতে পারে। রোগীকে ভরতি করিয়ে শুরু করা হয় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা। রক্তে ইনসুলিন ও সি পেপটাইড মেপে, পেটের সিটি স্ক্যান করে এবং আরও কিছু রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে, রোগীর ‘ইনসুলিনমা’ নেই। কিন্তু রয়েছে একটি বিরল অসুখ। স্তনের টিউমার থেকেই নিঃসৃত হচ্ছিল ‘আইজিএফ-২’ নামক এক পদার্থ যা ইনসুলিনের মতোই রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছিল। দ্রুত অস্ত্রোপচার করা জরুরি ছিল।
টানা দু’ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে কেটে বাদ দেওয়া হয় বিশাল আকারের ওই টিউমার। ডা. ধৃতিমান মৈত্র ছাড়াও অপারেশন টিমে ছিলেন ডা. শতক্রতু বর্মন, ডা. অন্তরীপ ভট্টাচার্য ও ডা. শুভ রায়। অপারেশনের পরে রোগী আপাতত স্থিতিশীল। অ্যানাস্থেটিস্ট হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন ডা. দেবাশিস ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.