চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: কবে আসবে COVID-19′ এর ভ্যাকসিন? তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বিশ্ববাসী। আর ঠিক এমনই সংকটের সময়ে পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার বাসিন্দা শ্বেতা সিং ব্যস্ত করোনার ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণায়। আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Columbia) অধ্যাপক হেক্টার ফ্লোরেজের সঙ্গে শ্বেতার করোনার ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত সম্ভাব্য গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হল আমেরিকার বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নালে।
‘এফ ওয়ান থাউসেন্ড রিসার্চ’ নামক জার্নালে কিছু ওষুধের গাণিতিক সংকেত ও মডেল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ, করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য ওষুধ আবিষ্কার করা যেতে পারে মলিকিউলার ডকিংয়ের (Molecular Docking) মাধ্যমে। রিপোর্টে কম্পিউটার টেস্টের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে কীভাবে নিউমোনিয়ার অ্যাটোভেন ও অ্যালার্জির অ্যালেগ্রার মতো সাধারণ ওষুধের সংমিশ্রণে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা সম্ভব। বাজারে পাওয়া যায় এমন ১২৯ টি ওষুধ ও ৯৯২ টি আয়ুবের্দিক সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ড্যাশবোর্ড তৈরি করে করোনা মোকাবিলার নতুন ওষুধের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী হয়ে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই গবেষণা শুরু হয় শ্বেতার। জামুড়িয়ার ব্যবসায়ী বৈজনাথ সিংয়ের মেয়ে শ্বেতা আসানসোল লরেটো কনভেন্টের ছাত্রী ছিলেন। স্কুল শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য পুণেতে চলে যান। সেখানে তিনি পিএইচডি করেন ডায়বেটিসের ওপর। ২০১৮ সালে ইঞ্জিনিয়ার নবনীত সিংয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়। তারপর স্বামীর সঙ্গে আমেরিকার কলম্বিয়াতে চলে যান শ্বেতা। সেখানে ফের নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেক্টর ফ্লোরেজের সঙ্গে যৌথভাবে করোনার ওষুধ তৈরির গবেষণায় অংশ নেন। সেটাই তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্বেতা সিংয়ের কথায়, ‘এফ ওয়ান থাউসেন্ড রিসার্চ’ জার্নালটি আসলে ওপেন ফোরাম। ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণা নিয়ে মতামত দিচ্ছেন, সমর্থনে ভোট দেওয়া শুরু করেছেন। তাঁদের একটা বড় অংশ এই রিপোর্টকে ল্যাবটেস্টের উপযোগী মনে করলে কোনও ফার্মেসি এগিয়ে আসবে কাজটি সম্পন্ন করতে। তিনি বলেন, ”নতুন কোনও ওষুধ বাজারে আনতে গেলে অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই বাজারে যে ওষুধ আছে, সেই ওষুধগুলির মলিকিউল ডকিং করেছি আমরা। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে গবেষক ও ডাক্তাররা এই ওষুধগুলি ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অনেক কম সময়ে করোনা নিরাময় সম্ভব হতে পারে।”
তাহলে কি শ্বেতাদের যৌথ গবেষণাই করোনার ওষুধ আবিষ্কারে চূড়ান্ত রাস্তা দেখাতে চলেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে জামুড়িয়ার কন্যা বলছেন, ”আমরা শুধুমাত্র সম্ভাবনার তথ্য তুলে ধরেছি। বিশ্ববাসীর চিকিৎসায় আমাদের গবেষণা কাজে লাগলে আমরাও নিজেদের ধন্য মনে করব।” শ্বেতা বর্তমানে উত্তর আমেরিকায় থেকে গবেষণার কাজ করছেন। পৃথিবীর এত বড় অসুখের সময়ে মেয়ের এই কাজে অত্যন্ত আনন্দিত বাবা বৈজনাথ সিং ও মা রামবতী সিং। খুশি জামুড়িয়াবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.