গৌতম ব্রহ্ম: ঝড়ে বক মরে! কিন্তু মশা? মশা অন্যত্র উড়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু, মরেনি। বরং পতঙ্গবিদদের কপালে ভাঁজ। তাঁদের মত, বুলবুল শুধু ঝড় নয়। বৃষ্টিও ছিল দোসর। যা ছোট ছোট পকেটে জল জমিয়ে তৈরি করেছে ডেঙ্গুর বীজতলা।
নতুন করে বৃষ্টি না হলে এ বছর আর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে না, এটা ঠিক। কিন্তু, পরের বছরের বীজতলা কিন্তু তৈরি হয়ে থাকবে। অর্থাৎ ২০২০-তে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার নিলে তার জন্য দায়ী থাকবে বুলবুল। এমনটাই জানালেন পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস। তাঁর পর্যবেক্ষণ, নতুন করে বৃষ্টি না হলে দিন সাতেকের মধ্যে বুলবুলের জমা জল শুকিয়ে যাবে। লার্ভা জন্মালেও তা মরে যাবে। কিন্তু ডিমগুলি রয়ে যাবে। কারণ, ডেঙ্গু মশার ডিম জল ছাড়াও তিন বছর বেঁচে থাকবে। তাছাড়া এই বৃষ্টিটা কিন্তু নালা-নর্দমা উপচে পড়ার মতো বৃষ্টি নয়। এই বৃষ্টিটা আসলে ‘ড্রিজল’। অঝোর ধারায় পড়েছে বলে ছোট ছোট পকেটে জল জমেছে। যা ডেঙ্গুর জন্য আদর্শ। ছাদে রাখা রঙের কৌটো, টায়ার, ভাঙা পাত্র, ব্যালকনিতে রাখা টবের গামলায় জমা জলে ডিম পাড়তেই পারে এডিস। সমস্যা হল, ডেঙ্গু মশার প্রজননে এক ছিপি জলই যথেষ্ট। তাতেই এরা ডিম পাড়তে পারে ও লার্ভা থেকে একটি সম্পূর্ণ বিকশিত প্রাপ্তবয়স্ক মশা তৈরি হতে পারে। তবে, একটা কথা। এরা স্বচ্ছ ও স্থির জলে বংশবিস্তার করে।
পরিসংখ্যান বলছে, গতবছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি হয়েছিল ৬ মিমি। আর এবছর ৯০ মিমি। এর মধ্যে শনিবারই হয়েছে ৮৬.৮ মিলি। সুতরাং জল সমস্তরকম পকেটেই জমবে। আর তাতে ডিম পাড়বে এডিস। যদিও লার্ভা জন্মালে তেমন সমস্যা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, এখন ডেঙ্গু নিধনের কাজ তুঙ্গে। লার্ভা নিধনযজ্ঞ চলছে জোরকদমে। তাছাড়া আর বৃষ্টি না হলে সাতদিন পরে লার্ভা মরে যাবে। কিন্তু থেকে যাবে ডিম। আবর্জনার মধ্যে যদি বৃষ্টির জল জমে থাকে এবং তা যদি পরিষ্কার না হয় তাহলে কিন্তু পরের বছরের ডেঙ্গুর আগমনি হবে সেই জমা জলেই।
কিন্তু ঝড়ে মশা মরবে না? পতঙ্গবিদদের মতে, ঝড়ের দাপটে মশার দল জায়গা বদল করে, কিন্তু মরে না। তবে আবার যদি বৃষ্টি হয় তবে কিন্তু এডিসের পৌষমাস শুরু হয়ে যাবে। সেই সম্ভাবনা অবশ্য নেই বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে সমস্যা অন্যত্র। বৃষ্টি হলেই ছাদের কার্নিশ, এসির প্লেটে স্বচ্ছ জল জমবে। ভিজে জায়গা পেলেই তাতে ডিম পাড়বে মশা। শেষ বৃষ্টি হয়েছে এক মাস আগে। সুতরাং এখন লার্ভা কিলবিল করার সম্ভাবনা কম। নতুন জলে ডিম পাড়বে এডিস। এই জমা জলকে নষ্ট করতে হবে। আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে পরিবেশ। নাহলে পরের বছরে চক্রবৃদ্ধি হারে এডিস বংশবিস্তার করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.