সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘সংগ্রামী’, ‘যোদ্ধা’, ‘নায়ক’। ক্যানসার-আক্রান্তদের মনোবল যোগাতে আপনি কি তাঁদের এভাবেই সম্বোধন করেন? করবেন না।এতে হিতে বিপরীত হয়। ভাবছেন নিশ্চয়ই, একটা ইতিবাচক ভূমিকাকে কেন সম্পূর্ণ বিপরীত বলে চিহ্নিত করছি? ব্রিটেনের এক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে আসছে এমনই তথ্য। বলা হচ্ছে, কোনও মানুষ যখন জানতে পারেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত, তখন তাঁর মনোবল এমনিই তলানিতে পৌঁছয়। আর পাঁচজন অসুস্থ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন না তিনি। তারওপর তাঁর ইমেজে যদি আচমকা ‘হিরো’ইজমের তকমা লেগে যায়, তাহলে বিপদ আরও বাড়ে। বাড়তি প্রশংসা তো মেনে নিতে পারেনই না, উলটে নিজেকে স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন বলে ভাবতে শুরু করেন ক্যানসার রোগী।
আধুনিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলা যায় শ্বেতি
তার চেয়ে বরং সরাসরি বলুন, ‘ক্যানসারের রোগী’। এতে আর পাঁচটা অসুখের মতোই এটাও যে একটা অসুখ মাত্র, এই অনুভূতি কর্কট রোগে ভোগা মানুষকে মানসিক শক্তি যোগায়। অন্য অসুখে যেমন আরোগ্য অথবা মৃত্যু যে কোনও পরিণতিই সম্ভব, ক্যানসারের ক্ষেত্রেও তাই। এই বোধ রোগীর মনে জাগিয়ে তুলতে হবে। আর যদি ক্যানসারকে রোগকে যুদ্ধের মতো কোনও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাতে রোগীর আরও বিপন্ন হয়ে পড়েন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কোনও তাগিদই আর থাকবে না। নিজেকের ‘নিয়তির নির্মম শিকার’ বলে মনে করতে শুরু করবেন। মনোবিদরা বলছেন, যে কোনও শারীরিক সমস্যার সঙ্গে মনের যোগ প্রবল। সেই হিসেবে যে কোনও রোগ থেকে সুস্থ হতে গেলে রোগীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হয়। তাহলেই আরোগ্যের পথ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ক্যানসারের মতো কঠিন অসুখের খবর পেলে যেকোনও মানুষই স্থিতি খানিক হারাবেনই। এ সময় আত্মীয়, বন্ধুদের আচার-ব্যবহার মনের ওপর খুব প্রভাব ফেলে। মোট কথা, কোনওভাবেই যেন তাঁকে বুঝতে দেওয়া না হয় যে জীবনের লড়াইটা তাঁর কাছে অন্যদের তুলনায় কঠিন হয়ে গিয়েছে।
ব্রিটেনের ম্যাকমিলান ক্যানসার সাপোর্ট নামে এক সমীক্ষা করা হয়েছে ২ হাজার ক্যানসার রোগীর ওপর। নানা বয়সের ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন গবেষকরা। সেসব রিপোর্টই বিস্তারিতভাবে প্রকাশ হয়েছে সদ্য। সেখানে উঠে এসেছে ৪৭ বছরের ম্যান্ডি ম্যাহোনি, ক্রেগ টলির মনের কথা। ম্যান্ডি যেমন ২০১১ সাল থেকে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনি বলছেন, ‘আমি মনে করি, ক্যানসার শব্দটার মধ্যেই একটা নেতিবাচকতা আছে। তার সঙ্গে ওই সাহসী, যোদ্ধা, এধরনের শব্দ মানানসই নয়। আর তাছাড়া আমাকে তো মানুষ এরকম সংগ্রামী বলে জানে না। ফলে এটা আমার সম্পর্কে ভুল তথ্য হয়ে যায়। তার চেয়ে কেউ বলুন না, ভালভাবে চিকিৎসা করাতে, নিজের যত্ন নিতে। এসব শুনলে মনে হয়, এমন কিছুই হয়নি। দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরব।’ ২০১৬ থেকে থাইরয়েড ক্যানসারে ভুগছেন ৩১ বছরের ক্রেগ টলি। তাঁর কথায়, ‘আসলে সবাই একটা যুদ্ধজয়ের গল্প শুনতে ভালবাসে। ক্যানসার আক্রান্তদের কাহিনী সাধারণ জীবনের গল্পের সঙ্গে মেলাতে চান না কেউ। এভাবে তাঁরা ক্যানসার রোগীদের নিজেদের থেকে আলাদা করে দেন।’
কীভাবে এড়াবেন সেকেন্ডারি ক্যানসার?
গবেষক ক্যারেন রবার্টসের মতে, ‘খুব ছোট ছোট শব্দ আসলে অনেকটা তফাত গড়ে দেয়, যা নিয়ে আমরা ভাবি না। আমরা আসলে ক্যানসারের মতো রোগকে যতটা ভয় পাই, ততটাই একটু অন্য পথ চাপিয়ে দিই রোগীর ওপর। রোগটা সম্পর্কে যা যা শুনেছি, মুখস্ত করা পড়ার মতো সেসব রোগীর সামনে উগড়ে দিই। বাড়তি উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেলি। এই সময়ে তাঁদের মন আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এই আচরণ উৎসাহের বদলে ধাক্কা দেয়।’ সুতরাং, কোনও বাড়তি গুরুত্ব নয়, ক্যানসার রোগীর সঙ্গে একেবারে স্বাভাবিক আচরণ করুন। সেটাই রোগ নিরাময়ের যুদ্ধে তাঁকে সবচেয়ে বড় অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.